প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / জালিয়াতির পর চরম মিথ্যার আশ্রয় শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফদের!

জালিয়াতির পর চরম মিথ্যার আশ্রয় শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফদের!

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,
গত ১১ জানুয়ারি আব্দুর রাজ্জাক সাহেব চাঁপাই নবাবগঞ্জে এক মাহফিলে ওয়াজ করেন । সেখানে এক ভাই তাকে প্রশ্ন করে ২০ রাকাত তারাবীর হাদিসের যেসব রাবিকে মিথ্যাবাদী বলছেন তাদের অনেকের বর্ণনা সহীহ বুখারীতে আছে।

তার জবাবে তিনি বলেন একই নামে অনেক রাবি আছে, ২০ রাকাতের হাদিসের রাবি আর সহীহ বুখারীর রাবির নাম একই হলেও ব্যক্তি আলাদা ।

তিনি কি সঠিক বলছেন নাকি জালিয়াতি ধরা পড়ে যাওয়ায় আরো মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন ? দয়া করে জানাবেন ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ এসব মিথ্যুকদের হিদায়াত নসীব করুন।

যে সমস্ত ব্যক্তি জেনেশুনে হাদীসের নামে জালিয়াতি করতে পারে, তাদের জন্য এমন মিথ্যা বলা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়।

এমন জালিয়াত প্রতারকদের ধরার পদ্ধতি একটাই, যখনি তা বলবে, আপনারা তাদের বলুন, আমরা কওমী আলেমদের নিয়ে আসবো, তাদের সামনে আপনি তা প্রমাণ করে দিন। দেখবেন বলবেঃ আমি বিষ খেতে রাজী আছি, কিন্তু কওমী উলামাদের সামনে নিজেদের জালিয়াতী নিয়ে কথা বলতে রাজী নই।

যাইহোক,মূলকথা হল, তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বুখারী অনুবাদের দ্বিতীয় খন্ডে তারাবীর আলোচনা করা হয়। সেখানে বিশ রাকাত তারাবীর আলোচনা করতে গিয়ে টিকায় অনেকগুলো মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে লা-মাযহাবী শায়েখরা।

এর মাঝে বিশ রাকাতের বর্ণনাকারী এমন রাবীদের ক্ষেত্রেও জরাহ করা হয়েছে যে, যারা বুখারীর রাবী।

শুধু তাই নয়, কতিপয় কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে লেখা হয়েছে যে, সেইসব কিতাবে ওমুক ওমুক ব্যক্তি তাদের নামে জরাহ করেছেন। অথচ উপরোক্ত কিতাবগুলোতে এর ভিন্ন চিত্রই দেখা যায়।

অনেকগুলো জালিয়াতির মাঝে একটি উদাহরণ দেয়া হলঃ

ইয়াহইয়া বিন সাঈদ

তাওহীদ পাবলিকেশসেন্স থেকে প্রকাশিত বাংলা বুখারীর ২য় খণ্ডের ৩৪৩ নং পৃষ্ঠায়, বিশ রাকাতের রাবী “ইয়াহইয়া বিন সাঈদের ব্যাপারে মন্তব্য করা হয়েছেঃ “তাছাড়া ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে কেউ কেউ মিথ্যাবাদীও বলেছেন। যেমন, ইমাম আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ কর্তৃক বর্ণিত কোন কথাই সত্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত। কারণ, সে হলো মিথ্যাবাদী। (জরহে আততাদীল, ৯ম খণ্ড, তাহযীবুত তাহযীব, ৬ষ্ঠ খণ্ড)

এখানে খেয়াল করুন!

আলজরহু ওয়াত তাদীল এবং তাহযীবুত তাহযীব দু’টি কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে লেখা হয়েছেঃ উপরোক্ত দু’টি কিতাবে ইমাম আবূ হাতিম রহঃ ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে “মিথ্যুক, প্রত্যাখ্যাত” বলে মন্তব্য করেছেন।

আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ সাহেবকে জিজ্ঞাসা করুন উপরোক্ত দু’টি কিতাব খুলে এর সত্যতা প্রমাণ করতে।

আমরা দেখে নেই উপরোক্ত কিতাবে কী লিখা আছে?

نا عبد الرحمن قال سألت ابى عنه يحيى بن سعيد الأنصاري فقال: ثقة.

আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতা আবূ হাতেমকে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আলআনসারী লোকটি কেমন? তিনি জবাব দিলেন, তিনি বিশ্বস্ত। [আলজরহু ওয়াত তাদীল-৯/১৪৯]

তাওহীদ বুখারীতে লেখা আছে, জরতে তাদীল কিতাবে নাকি আবূ হাতিম ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে মিথ্যুক বলেছেন। আর তা আছে নবম খণ্ডে। আর ঠিক নবম খণ্ডেই দেখতে পাচ্ছি যে, ঠিক এর উল্টো কথাটিই লেখা আছে।

এখন আর আমরা কিতাব বিশ্বাস করবো, নাকি অনুবাদকতের জালিয়াতির উপর মিথ্যাচার বিশ্বাস করবো?

এবার দ্বিতীয় রেফারেন্স যাচাই করি!

وقال بن أبي حاتم عن أبيه يحيى بن سعيد يوازي الزهري

আবূ হাতিমের ছেলে বলেন, আমার পিতা আবূ হাতিম বলেছেনঃ ইয়াহইয়া বিন সাঈদ হলেন ইমাম যুহরীর সমমানের ব্যক্তিত্ব। [তাহযীবুত তাহযীব]

আপনারাই দেখতে পেলেন। তাওহীদ পাবলিকেশন্সের  বুখারীর টিকায় কী লিখা হয়েছে, আর রেফারেন্স দেয়া কিতাবে কী লিখা আছে। আস্তাগফিরুল্লাহ। এমন প্রতারণা একজন মুসলমান কিভাবে করতে পারে আমাদের ভাবতেও বিস্মিত হতে হয়।

যদি আমরা মেনেও নেই যে, বিশ রাকাতের রাবী ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আর বুখারীর রাবী ইয়াহইয়া বিন সাঈদ দুইজন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।

তাহলে প্রশ্ন হল, তারা বিশ রাকাতের রাবী ইয়াহইয়া বিন সাঈদের বিষয়ে জরতে তাদীল এবং তাহযীবুত তাহযীবের যে রেফারেন্স দিলেন, সেখানে ইমাম আবূ হাতিম রহঃ থেকে যে উদ্ধৃতি পেশ করেছেন সেই বক্তব্য উপরোক্ত দুই কিতাবে কোথায়?

উপরোক্ত দু’টি কিতাব থেকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদের ব্যাপারে মন্তব্যগুলো একটু দেখানতো। তাহলেইতো আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফরা সত্যবাদী না চরম পর্যায়ের প্রতারক তা প্রমাণিত হয়ে যাবে।

কস্মিনকালেও পারবে না। কারণ, তারা জেনেশুনেই এ প্রতারণা করেছেন।

জরহে তাদীল এবং তাহযীব কিতাবে লিখা আছে এক বক্তব্য। আর তারা উম্মতকে ধোঁকা দেবার জন্য লিখেছেন ভিন্ন কথা। আবার সেই প্রতারণাকে ঢাকার জন্য নিচ্ছেন নির্লজ্জভাবে মিথ্যার আশ্রয়।

ইন্নালিল্লাহ। কি ভয়াবহ প্রতারকদের কবলে এ দেশের সাধারণ মুসলমান।

একেই বলে চুরীর উপর শিনাজুরী।

একেতো বুখারীর প্রথম হাদীসের রাবী ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে মিথ্যুক বলে দাবী করলেন। আবার রেফারেন্স দিলেন যে দু’টি কিতাবের। সেই কিতাবগুলোতে রয়েছে ঠিক উল্টো বক্তব্য। এর মানে ডাবল জালিয়াতি।

ধরা পরে এখন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলছেন যে, রাবী দুইজন।

ডাবল জালিয়াতির পর চরম মিথ্যাচার।

আল্লাহ তাআলা এসব প্রতারক মিথ্যুক শায়েখদের হিদায়াত দান করুন। তাদের কবল থেকে এদেশের সাধারণ মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানকে হিফাযত করুন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …