প্রশ্ন
আমাদের দেশে পশু বর্গা দেবার একটি পদ্ধতি প্রসিদ্ধ। তাহল, এক ব্যক্তি একটি ছোট পশু ক্রয় করে। যেমন গরুর বাছুর ক্রয় করে। তারপর সেটি আরেকজনের কাছে দেয় লালন পালন করার জন্য। যখন পশুটি বড় হয়, তখন সেটি বিক্রি করা হয়, বিক্রির পর প্রথমে যত টাকা দিয়ে পশুটি মালিক ক্রয় করেছিল, তাকে তত টাকা প্রদান করে, বাকি যত টাকা থাকে, তা উভয়ে ভাগ করে নিয়ে যায়।
শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, এভাবে পশু বর্গা দেয়া শরীয়ত সম্মত কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
না, এভাবে পশু বর্গা দেয়া শরীয়ত সম্মত নয়।
তবে একটি জায়েজ পদ্ধতি আছে। সেটি হল, প্রথমে পশুর মালিক বাছুরটি ক্রয় করে যে লালন পালন করবে, তাকে বলবে যে, আমি তোমার কাছে আমার পশুটির অর্ধেক বাকিতে বিক্রি করে দিলাম। বিক্রির মূল্য ধরবে যতটাকা দিয়ে পশুটি ক্রয় করেছিল তত টাকা।
অর্ধেকের মূল্য পরিশোধ করবে পরবর্তীতে। এবার লালনপালনকারী উক্ত পশুর অর্ধেকের মালিক হয়ে গেল। পশুটির লালন পালনের অর্ধেক খরচ মূল মালিক বহন করবে।
তারপর যখন উক্ত পশুটি বড় হবে। বিক্রি করা হবে, তখন প্রথমে ঋণ আদায় হিসেবে পশুটির মূল্য পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা উভয়ের মাঝে সমান হারে বন্টন করে নিবে।
এভাবে লেনদেন ও চুক্তি করলে তা শরীয়ত সিদ্ধ হবে।
উদাহরণতঃ
আব্দুল্লাহ দশ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাছুর ক্রয় করল। তারপর সেটিকে আব্দুর রহীমের কাছে লালনের জন্য দিতে চাচ্ছে। তখন আব্দুল্লাহ বলবে যে, আমি আমার বাছুরটির অর্ধেক অংশ দশ হাজার টাকার বিনিময়ে আব্দুর রহীমের কাছে বিক্রি করলাম। আব্দুর রহীম পরবর্তীতে উক্ত টাকা পরিশোধের শর্তে তা ক্রয় করে নিবে।
এরপর সে তা লালন পালন করবে। লালন পালনের অর্ধেক খরচ আব্দুল্লাহও প্রদান করবে।
কয়েক বছর পর উক্ত পশুটি কথার কথা বিশ হাজার টাকায় বিক্রি করা হল। তখন প্রথমে দশ হাজার টাকা আব্দুর রহীম আব্দুল্লাহকে প্রদান করবে পূর্বের ঋণ পরিশোধ হিসেবে। তারপর বাকি দশ হাজার অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিবে। অর্থাৎ পাঁচ হাজার আব্দুর রহীম। আর পাঁচ হাজার আব্দুল্লাহ।
وَعَلَى هَذَا إذَا دَفَعَ الْبَقَرَةَ إلَى إنْسَانٍ بِالْعَلَفِ لِيَكُونَ الْحَادِثُ بَيْنَهُمَا نِصْفَيْنِ فَمَا حَدَثَ فَهُوَ لِصَاحِبِ الْبَقَرَةِ وَلِذَلِكَ الرَّجُلِ مِثْلُ الْعَلَفِ الَّذِي عَلَفَهَا وَأَجْرُ مِثْلِهِ فِيمَا قَامَ عَلَيْهَا وَعَلَى هَذَا إذَا دَفَعَ دَجَاجَةً إلَى رَجُلٍ بِالْعَلَفِ لِيَكُونَ الْبَيْضُ بَيْنَهُمَا نِصْفَيْنِ، وَالْحِيلَةُ فِي ذَلِكَ أَنْ يَبِيعَ نِصْفَ الْبَقَرَةِ مِنْ ذَلِكَ الرَّجُلِ وَنِصْفَ الدَّجَاجَةِ وَنِصْفَ بَذْرِ الْفُلَّيْقِ بِثَمَنٍ مَعْلُومٍ حَتَّى تَصِيرَ الْبَقَرَةُ وَأَجْنَاسُهَا مُشْتَرَكَةً بَيْنَهُمَا فَيَكُونُ الْحَادِثُ مِنْهَا عَلَى الشَّرِكَةِ، (الفتاوى الهندية، كتاب الشركة، الباب الخامس فى الشركة الفاسدة-2/335)
وعلى هذا دفع البقرة بالعلف ليكون الحادث بينهما نصفين، فما حدث فهو لصاحب البقة وللآخر مثل علفه وأجر مثله (رد المحتار، كتاب الشركة، مطلب يرجح القياس-6/504)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com