প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / আল্লাহর জাতি সত্তা নিয়ে গবেষণা ও মনগড়া মন্তব্য করা নিষেধ!

আল্লাহর জাতি সত্তা নিয়ে গবেষণা ও মনগড়া মন্তব্য করা নিষেধ!

প্রশ্ন

আস সালামু আলাইকুম, একটা প্রশ্ন খুব মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে! শয়তান আমাকে ওয়াসওয়াসায় ফেকে দিয়েছে এই প্রশ্নের কারনে, যে সঠিক উত্তর না পেলে কোন কাজই ঠিক ভাবে করতে পারছি না। জাহান্নামের আগুনের মত কষ্ট হচ্ছে।

জানি এটা অবান্তর প্রশ্ন কিন্তু তাও দয়া করে উত্তরটা জানাবেন। আমি জানি এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা বা কথা বলা উচিত না কিন্তু আমি এখন নিরুপায় হয়েই প্রশ্নটা করছি।

প্রশ্নটা হচ্ছে, কুর’আন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ননায় যে আল্লাহর হাত, পা, চেহারা ইত্যাদির কথা এসেছে। এই ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকিদা হচ্ছে শুধু এই শব্দের উপর ইমান রাখতে হবে, একে অংগ মনে করা যাবে না কারন আল্লাহ তা থেকে পবিত্র। এই হাত, পা, চেহারা ইত্যাদি দ্বারা কি বুঝানো হচ্ছে তা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেনা। এতটুকুই। যদিও কিছু কিছু আয়াত বা হাদিসে এগুলো তাবিল কিরা হয়েছে আবার কিছু কিছু জায়গায় করা হয়নি। এটাও আমরা বিশ্বাস করি।

কিন্তু আমার সমস্যা হয়েছে অন্য একটা জায়গায়। একটা জায়গায় আমি দেখেছি কিছু মানুষ বলেছে এই হাত, পা, চেহারা ইত্যাদির অর্থ আমাদের অজানা হলেও এগুলো আলাদা আলাদা অর্থে ধরা যাবে না। এগুলো নাকি একই অর্থে ধরতে হবে। এগুলোর মানে নাকি একই, আল্লাহ যা হাত বলতে যা বুঝেছেন চেহারা বলতেও নাকি তাই বুঝিয়েছেন। এগুলো নাকি আলাদা আলাদা সিফাত না। হাত, পা, চেহারা এসব নাকি একটাই সিফাত।

আমি এটা মানতে পারছি না। আপনার কাছে আমার প্রশ্ন, এই ধরনের কোন কথা কি কোন হাদিসে বা কুর’আনে এসেছে? এটা কি বানোয়াট কথা না? শুধু এইটুকুর উত্তর জানাবেন যে, এটা হাদিসে/ কুর’আনে কোথাও এসেছে কিনা।

*** প্লিজ আমাকে উত্তর টা জানাবেন। জানি এটা বিভ্রান্তিকর প্রস্ন। এটা পাব্লিকলি প্রকাশযোগ্যই না। আমি আসলে আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থী। প্লিজ এই উত্তরটা জানিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিবেন। যেন আমি আবার মন দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি। আমি সিজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে দু’আ করছি এই উত্তর যেন সঠিক ভাবে জানিয়ে দেন আমাকে আল্লাহ। প্লিজ আমার দু’আ কবুলের উসিলা হয়ে যান। আমি খুব অস্থির অবস্তায় আছি। উত্তর দিতে দেরি হলে যোগাযোগ করবেন প্লিজ প্লিজ। হুজুর লুৎফুর রহমান ফরায়েজী ছাড়া আমি অন্য কোন আলেমকে চিনি না। আর এই ডেলিকেট ইস্যু নিয়ে কারো সাথে কথা বলতেও চাইনা। প্লিজ উত্তর টা জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ 

তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।

ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]

আল্লাহর আকার নিরাকার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা নিষেধ। আল্লাহ তাআলা আছেন। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। তার কাছেই আমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনিই রিজিকের মালিক। ইত্যাদি আকীদা রাখা আবশ্যক।

কিন্তু তিনি দেখতে কেমন? তার আকৃতি কেমন? ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সালাফে সালেহীনগণ এসব বিষয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করতেন। আমরাও এসব নিয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করি।

তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ বলে মনে করি।

যাদের মনের মাঝে ফিতনা রয়েছে। কেবল তারাই এসব মুতাশাবিহাত বিষয়ে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]

তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}

কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুপাতে আল্লাহর জাত ও সত্ত্বা বিষয়ে অহেতুক গবেষণায় লিপ্ত হওয়া অনর্থক কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। যার মনেই এসব কথা বারবার আসতে থাকবে, বুঝতে হবে শয়তান তাকে ধোঁকা দিচ্ছে। গোমরাহ করতে প্রলুব্ধ করছে। কোন বান্দার পক্ষেই স্রষ্টার প্রকৃত অবস্থা জানা সম্ভব নয়। সৃষ্টি যদি স্রষ্টার প্রকৃতি হালাত বুঝতেই পারে, তাহলে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব রইল কোথায়? তিনিতো তাহলে তার সৃষ্টির জ্ঞানের পরিধিতে আয়ত্বাধীন হয়ে গেলেন।

তাই সত্যিকার অর্থে এসবের প্রকৃতি অবস্থা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। আর এসব বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক ও চিন্তা ফিকির করা কিছুতেই উচিত নয়। আল্লাহ আছেন। কুরআনে তার সম্পর্কিত যা কিছু বর্ণিত তা সবই সত্য। আর তার সিফাত সম্পর্কিত যা এসেছে আমরা এর উপর ঈমান আনি। নিজের পক্ষ থেকে কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে বিরত থাকি। এটাই প্রকৃত মুমিনের আলামত।

আল্লাহর সিফাত সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ের অর্থ এক বলা যেমন উচিত নয়। তেমন আলাদা বলারও শক্তিশালী দলীল নেই।

তাই ফলাফল সেটাই যা উপরে বর্ণিত। ব্যস। নিরব থাকা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের অহেতুক বিষয়ে গ্যাঁরাকলে পড়ে ঈমানহারা হওয়া থেকে হিফাযত করুন।

দেখতে পারেন!

সালাফ ও উলামায়ে দেওবন্দের আকীদা এবং বর্তমান সালাফি ও আহলেহাদীস দাবীদারদের আকীদা ( পর্ব -১ )

সালাফ ও উলামায়ে দেওবন্দের আকীদা এবং বর্তমান সালাফি ও আহলেহাদীস দাবীদারদের আকীদা ( পর্ব – ২ )

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …