প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / “আমাকে ডিভোর্স দাও” স্বামীর কথার জবাবে স্ত্রী বলল “দিয়ে দিলাম” এ কথোপকথনের হুকুম কী?

“আমাকে ডিভোর্স দাও” স্বামীর কথার জবাবে স্ত্রী বলল “দিয়ে দিলাম” এ কথোপকথনের হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শেখ,

আশা করি আপনি ভাল আছেন।

তালাক সম্পর্কিত বিষয়ে আমি আপনার কাছ থেকে পরামর্শ চাচ্ছি।

আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে দুবাই থাকি। আত্মীয় স্বজন ছাড়া এবং ফ্যামিলির সব কাজ তাকে একা করতে হয় বিধায় আমার স্ত্রী দুবাইয়ে থাকতে চায় না। সে আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) বসবাস করতে চায়, কিন্তু শরীয়তের কারণে আমি তাকে মহররম ছারা একা একা থাকতে দিতে পারি না। সম্প্রতি সে আমাকে জানায় আগামী বছর থেকে সে আর দুবাইয়ে থাকবে না। এই কথা শুনার পর আমি রাগ করে বলি, বাংলাদেশে থাকতে চাইলে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তারপরে থাকো। এর উত্তরে আমার স্ত্রী বলে “যাও দিলাম”।

এখন আমার প্রশ্ন:
01)     আমার স্ত্রী যেহেতু বলেছে “যাও দিলাম” এই কথা বলার জন্য “এক” তালাক কার্যকর হবে কিনা?
02)     যেহেতু সে আগামী বছর থেকে বাংলাদেশে থাকার কথা বলেছে যদি সে বাংলাদেশে যেয়ে না থাকে তবে কি “এক” তালাক কার্যকর হবে?

নিম্নে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি:
•       আমার স্ত্রী এখনও আমার সাথে আছে আমাদের দুই সন্তান সহ।
•       আমার জানা মতে ইসলাম নারীকে তালাক দেবার ক্ষমতা দেয়নাই। নারী শুধু খোলা করার জন্য রিকোয়েস্ট করতে পারে। আমার স্ত্রী কিন্তু খোলা করার জন্য রিকোয়েস্ট করেনি।
•       আমার জানা মতে তালাক কার্যকর হবার শর্তের মধ্যে একটা শর্ত হচ্ছে স্ত্রী পবিত্র অবস্থায় থাকতে হবে এবং পবিত্র অবস্থায় থাকা কালীন স্ত্রী মিলন করা বেতিরেকে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হবে।উল্লেখ্য যেদিন আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছে তার আগের রাতে আমরা মিলিত হয়েছি।

আপনার মতামত জানাবেন।
জাঝাকাল্লাহু খাইরান।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে, যদি স্বামী এ অধিকার তাকে প্রদান করে।

যেমন স্বামী বলল, আমি তোমাকে নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করলাম। তখন স্ত্রী যদি নিজের উপর তালাক পতিত করে নেয়। তাহলে তালাক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে হায়েজমুক্ত থাকা ইত্যাদি জরুরী নয়।

আপনার উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে আপনার স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার প্রাপ্ত হয়েছিল। সেই হিসেবে তার কথা “যাও দিলাম” বলার দ্বারা এক তালাকে রেজয়ী হয়েছে।

উক্ত তালাকের পর যদি আপনারা স্বামী স্ত্রী একসাথে বসাবাস করে থাকেন, তাহলে আপনারা এখনো স্বামী স্ত্রী হিসেবে বাকি আছেন। বাকি পরবর্তীতে আর দুই তালাক পতিত করার অধিকার অবশিষ্ট থাকবে।

আর যদি উক্ত তালাকের পর তিন হায়েজ সমপরিমাণ সময় পর্যন্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে এক তালাকে বাইন হয়ে যাবে। ফলে আবার বিয়ে করে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া কোন গতি নেই।

وفى الدر المختار: قال لها: اختارى أو امرك بيدك ينوى تفويض الطلاق لأنها كناية فلا يعملان بلا نية،

وفى الشامية: تحت قوله قال لها اختارى: أشار بعدم ذكر قبولها إلى أنه تمليك يتم بالمملك وحده فلو رجع قبل انقضاء المجلس لم يصح وقيد باقتصاره على التخيير المطلق لانه لو قال لها اختارى الطلاق فقالت: اخترت الطلاق فهى واحدة رجعية (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/552)

فى الفتاوى الهنديةإذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473

فى الفتاوى الهندية- وَإِذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً رَجْعِيَّةً أَوْ تَطْلِيقَتَيْنِ فَلَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا فِي عِدَّتِهَا رَضِيَتْ بِذَلِكَ أَوْ لَمْ تَرْضَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ (الفتاوى الهندية-1/470، هداية-2/394

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …