প্রশ্ন
কোন অমুসলিমকে ভাই বলে সম্বোধন করা যাবে কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কোন অমুসলিমকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বানানো জায়েজ নয়। তবে তাদের সাথে স্বাভাবিক মানবিকসূলভ আচরণে কোন বিধিনিষেধ নেই।
মুসলমানগণ পরস্পর ভাই। দ্বীনী ভাই। যা পবিত্র কুরআন ও হাদীসে পরিস্কার এসেছে। যেমন-
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ অর্থাৎ মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। [সূরা হুজুরাত-১০]
হাদীসে এসেছ- المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِمِ অর্থাৎ এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। [বুখারী, হাদীস নং-৬৯৫১]
এই ভাইটা কী ভাই? বংশগত ভাই নয়। বরং ধর্মীয় ভাই। দ্বীনী ভাই।
মুসলিমদের পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক গভীর। কারণ, এখানে ভাতৃত্বের দু’টি বিষয় বিদ্যমান। একতো বাবা আদমের সন্তান হিসেবে ভাই। আরেক হল দ্বীনে মুহাম্মদীর অনুসারী হিসেবে ভাই। তাই এ সম্পর্কটা গভীর।
কিন্তু এর মানে অন্য ধর্মাবলম্বীরা আমাদের ভাই নয়। এমনটি বলা যাবে না। কুরআনে কারীমে কাফির অধিবাসীদেরও নবীর ভাই বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
যেমন-
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ [٧:٦٥
আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। [সূরা আরাফ-৬৫]
এখানে আদ সম্প্রদায়ের কাফেরদেরকে নবী সালেহ আলাইহিস সালামের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ আদ গোত্রের সবাই হুদ আলাইহিস সালামের বংশীয় ভাই ছিলেন না। তারপরও তাদের ভাই বলা হল কিভাবে?
এর জবাবে তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে-
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ أَيِ ابْنُ أَبِيهِمْ. وَقِيلَ: أَخَاهُمْ فِي الْقَبِيلَةِ. وَقِيلَ: أي بشرا من بني أبيهم آدم.
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তাদের পিতার সন্তান। কেউ বলেছেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গোত্রীয় ভাই। কেউ বলেছেন পিতা আদমের সন্তান হিসেবে ভাই। [তাফসীরে কুরতুবী-৭/২৩৫, দারুল কুতুব মিশর]
এছাড়া অন্যত্র এসেছে-
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ [٧:٧٣
সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। [সূরা আরাফ-৭৩]
এখানে কাফির সামুদ সম্প্রদায়কে নবী সালেহের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তারা কাফির এবং সবাই নবীর বংশীয় ভাই নয়।
এসব আয়াত দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, হযরত আদম আলাইহিস সালামের সন্তান হিসেবে সকল ধর্মবর্ণের মানুষ আমরা পরস্পর ভাই।
কিন্তু এ ভাইয়ের সম্পর্ক মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের মত গভীর নয়। মানুষ হিসেবে পরস্পর একটি ন্যুনতম সম্পর্ক মাত্র।
তা’ই কোন অমুসলিমকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার আকাংখায়, দ্বীনের দাওয়াত দিতে কাছে টানতে তাকে ভাই বলে সম্বোধন করাতে কোন সমস্যা নেই।
এটাও পড়ুন!
ইসলামে নবী অবমাননার শাস্তিঃ একটি প্রমাণিক পর্যালোচনা
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]