প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / কারামত সত্য মেনে নিলে শিরক বলতে আর কিছুই থাকে না?

কারামত সত্য মেনে নিলে শিরক বলতে আর কিছুই থাকে না?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম।

ফাজায়েল আমালে কিছু ঘটনা আহলে হাদিস আলেমরা শিরীক বলছেন কিন্তু আপনারা হানাফি আলেমগণ কারামত বলে প্রচার করছেন। আমার মনে হয় এই ঘটনা গুলো যদি শিরীক না হয় তাহলে বস্তুত তেমন কেন শিরীক খুজে পাওয়া যাবে না, সবই ওলি আওলীয়ার কেরামত বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। শিরিক ও কারামত এর মধ্যে মূলত  পার্থক্যটা কি?

এহসান, রুয়েট, রাজশাহী।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

শিরক ও কারামতের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য। শিরক হারাম ও কুফরী। কারামত প্রশংসনীয় এবং আল্লাহর ক্ষমতাশীল হবার প্রমাণ।

শিরক হল, মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। আল্লাহর জাত বা সিফাতের সমকক্ষ কাউকে মনে করা।

আর কারামত আল্লাহ তাআলার ঐ আশ্চর্য ও অস্বাভাবিক বিষয়, যা তিনি তার কোন প্রিয় বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করান।

কারামতের মূল কারিগর মহান রাব্বুল আলামীন। প্রকাশ করা হয়, কোন বান্দার মাধ্যমে।

কারামত প্রকাশে বান্দার কোন ক্ষমতা থাকে না। থাকে না তার কোন ইচ্ছেশক্তি। বরং পুরোটাই রবের ইচ্ছেধীন। তিনি যখন ইচ্ছে তখন কোন প্রিয় বান্দার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। আবার যখন ইচ্ছে প্রকাশ করেন না।

তাই শিরক ও কারামতের মাঝে ন্যুনতম কোন সম্পর্ক নেই।

আউলিয়াদের কারামত সত্য। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা সংক্রান্ত যে কোন কিতাব খুললেই আপনার কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

প্রয়োজনে পড়ুন, আকীদাতুত তাহাবিয়্যাহ, শরহে আকায়েদসহ আকীদার মৌলিকগ্রন্থগুলো।

এমন কি যারা ফাযায়েলে আমালে উদ্ধৃত কারামতের ঘটনার উপর শিরকের অভিযোগ উত্থাপন করে থাকেন, তাদের বইয়ে এ বিষয়ে কি লিখা হয়েছে? তা একটু দেখে নিনঃ

লা-মাযহাবী বন্ধুদের নিজস্ব প্রকাশনী “তাওহীদ পাবলিকেশন্স” থেকে আক্বিদা বিষয়ক একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। যার মূল লেখক হাফেজ বিন আহমাদ বিন আল-হাকামী। আর অনুবাদ করেছেন লা-মাযহাবী শায়েখ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী। বইটির নাম হল, ‘কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দুই শতাধিক প্রশ্নোত্তরসহ নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদাহ’।

উক্ত বইয়ে কারামত সত্য হবার প্রমাণ দিতে গিয়ে ২৮২ নং পৃষ্ঠায় ৩২২ নং টিকায় আনা হয়েছে “সারিয়ার সাথে উমার রাঃ এর কারামাতের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, উমার রাঃ একদল সৈনিক পাঠালেন এবং সারিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সেনাবাহীনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। উমার রাঃ মদীনার মিম্বরে খুৎবারত অবস্থায় ইয়া সারিয়া! আল জাবাল! বলে উচ্চসরে ডাক দিলেন। সৈনিকদের দূত মদীনায় এসে বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করতে গেলে তারা আমাদেরকে পরাজিত করে ফেলে। তখন আমরা একজন লোককে চিৎকার করে বলতে শুনলামঃ ইয়া সারিয়া! আল জাবাল! অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করলাম। শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলাম। আল্লাহ তাআলা শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। [মাজমূআয়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১১/২৭৮]

আরেক স্থানে লিখা হয়েছেঃ

“আউলীয়াদের কারামত সত্য। আল্লাহ তাআলা তাদের হাতে অলৌকিক ও সাধারণ নিয়মের বিপরীত এমন ঘটনা প্রকাশ করে থাকেন, যাতে তাদের কোন হাত নেই। তবে কারামত  চ্যালেঞ্জ আকারে প্রকাশিত হয় না। বরং আল্লাহ আল্লাহই তাদের হাতে প্রকাশ করেন।” [নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদাহ, অনুবাদক-আব্দুল্লাহ শাহেদ আলমাদানী, প্রকাশক-তাওহীদ পাবলিকেশন্স]

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত দলীলসহ জানতে হলে পড়ুন-“ফাযায়েলে আমাল ও উলামায়ে দেওবন্দঃ আপত্তি ও খণ্ডন” বইটি। যা আহলে হক মিডিয়া প্রকাশন থেকে প্রকাশ করা হয়েছে এবং রাহনূমা প্রকাশনী বাংলাবাজার লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।

এ লেখাটিও পড়তে পারেন- কাশফ-কারামতের হাকীকত ও প্রামাণিকতা!

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

ভাড়া বাসায় স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কোথায় ইদ্দত পালন করবে?

প্রশ্ন এক ব্যক্তির দুই স্ত্রী। এক স্ত্রী তার গ্রামের বাড়ি থাকে, আরেক স্ত্রী ঢাকা ভাড়া …