প্রশ্ন
From: মোঃ জাকির হোসাইন
বিষয়ঃ তালাক
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম,সম্মানিত ফতুয়ায়েজ ওলামা মুহতারাম,আমি আজ বিগত প্রায় দুবছর হলো বিয়ে করেছি,সাড়ে চার মাস ঘর সংসার করে আজ ১৯ মাস হলো সৌদিতে এসেছি,,আমি আমার স্ত্রীর কিছু কঠিন ভুল পেয়েছি, এতে আমি আমার স্ত্রীকে শরিয়ত সম্মত অনেক বুঝ বুঝিয়েছি, কিছু আদেশ নিষেদ করেছি কিন্তু আমার স্ত্রী তা উপেক্ষা করে চলতো,,এতে আমি আমার শশুর শাশুড়িকে জানাই কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ি আমার কথা না শুনে তার মেয়ের কথায় গুরুত দেয়,বরং উল্টো আমাকে বাজেভাবে শাসন করতো,আমাকে তার মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে দিত না,আমার বিরুদ্ধে মেয়েকে নানান কথা বলে মেয়েকে লেলিয়ে দিত,এমতাবস্থায় আমি আমার শাশুড়ির নানান বাজে কথার দরুন আমি রাগে উত্তেজিত হয়ে শাশুড়িকে বলি আমি আপনার মেয়েকে তালাক দিলাম,তালাক তালাক তালাক হুবহু এভাবেই বলেছি,,আমার কোন মন থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কোন নিয়ত ছিলনা বা নাই,আমি আমার
স্ত্রীকে অনেক ভালবাসি এবং তাকে আমি চাই,এর সঠিক সমাধান চাই,আপনাদের কাছে,,এখানে এদেশের আছলি নাগরীক গ্রেন্ড মুফতিদের কাছে এবিষয়ে জেনেছি, তারা বলছে অতিরিক্ত রাগে এমতাবস্থায় তালাক হয়নি,,,আমি আপনাদের কাছে এর সঠিক জবাব চাই,অনুগ্রহ করে তাড়াতাড়ি উত্তর টার জন্য আহবান করছি,আমি ঈদের আগে দেশে আসছি তাই,,
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক হয় না, বলা হাস্যকর কথা। তালাক কোন মোহাব্বতের শব্দ নয়। এটি রাগেরই শব্দ। তালাকতো রাগ করেই দেয়া হয়। ভালবেসে, মোহাব্বত করে কি কেউ তালাক দেয়?
কথা বলছিলেন শ্বশুরীর সাথে। বিবির সাথে নয়। তখন রাগের মাথায় যদি মাথাই ঠিক না থাকে, তাহলে তালাক ছাড়া অন্য কোন গালিগালাজও করতে পারতেন। তালাক কেন দিলেন?
তালাক দেয়াই প্রমাণ করে মাথা ঠিকভাবেই কাজ করছিল। বিবিকেই তালাক দেয়া হয়। অন্য কাউকে তালাক দেয়া হয় না। যে ব্যক্তি ঝগড়ার সময় ঠিক বিবির দিকে ইংগিত করে তালাক শব্দগুলোই বলতে পারে,তিনি আবার যদি পরে দাবী করেন, তার মাথা ঠিক ছিল না, তা সঠিক কথা কিভাবে হতে পারে?
উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে তিনবার তালাক উচ্চারণ করার দ্বারা তিন তালাক পতিত হয়ে গেছে। স্ত্রীর আপনার উপর হারাম হয়ে গেছে।
পরিস্কার শব্দে “তালাক” বললে সেখানে নিয়তের কোন প্রয়োজন নেই। নিয়ত ছাড়াই তালাক পতিত হয়ে যায়। তালাকের পরিস্কার শব্দ ছাড়া অন্য শব্দে তালাক দিলে নিয়তের প্রয়োজন হয়। তালাক শব্দ দিয়ে তালাক দিলে নিয়তের প্রয়োজন নেই।
তাই উক্ত স্ত্রী এখন আর আপনার স্ত্রী হিসেবে বাকি নেই। যদি ইদ্দত শেষে উক্ত মহিলার অন্যত্র বিয়ে হয়। সেখানে ঘরসংসার করতে থাকে। কোন কারণে দ্বিতীয় স্বামী তালাক দেয়। তাহলে ইদ্দত শেষে আপনি আাবার বিয়ে করতে পারবেন। ছাড়া উক্ত মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে রাখার কোন সুযোগ নেই।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
فى الدر المختار: كرر لفظ الطلاق وقع الكل،
وفى رد المحتار: وقع الكل قضاء، وكذا إذا طلق بأن لم ينو أستئنافا ولا تاكيدا، لأن الأصل عدم التأكيد، (رد المحتار، كتاب الطلاق، باب طلاق غير المدخول بها-4/521، زكريا)
وإن كان الطلاق ثلاثا فى الحرة…… لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا ويدخل بها، ثم يطلقها، أو يموت عنها، (هداية-2/399، مجمع الأنهر-2/88)
وَإِنْ كَانَ الطَّلَاقُ ثَلَاثًا فِي الْحُرَّةِ وَثِنْتَيْنِ فِي الْأَمَةِ لَمْ تَحِلَّ لَهُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ نِكَاحًا صَحِيحًا وَيَدْخُلَ بِهَا ثُمَّ يُطَلِّقَهَا أَوْ يَمُوتَ عَنْهَا كَذَا فِي الْهِدَايَةِ، (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الْبَابُ السَّادِسُ فِي الرَّجْعَةِ وَفِيمَا تَحِلُّ بِهِ الْمُطَلَّقَةُ وَمَا يَتَّصِلُ بِهِ، فَصْلٌ فِيمَا تَحِلُّ بِهِ الْمُطَلَّقَةُ وَمَا يَتَّصِلُ بِهِ-1/473
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]