প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / জীবিত অবস্থায় সন্তানদের লেখাপড়া ও সম্পদ দানে সমতা রক্ষা করা কি বাবার উপর আবশ্যক?

জীবিত অবস্থায় সন্তানদের লেখাপড়া ও সম্পদ দানে সমতা রক্ষা করা কি বাবার উপর আবশ্যক?

প্রশ্ন

From: এস. এম. আজম
বিষয়ঃ ফতওয়া

প্রশ্নঃ
কোন বাবার ৬জন ছেলে মেয়ে তার মধ্যে এক মেয়ে বিয়ে দেবার পর মারা গেছে তার কোন ছেলে মেয়ে নাই। বাকি ৩জন মেয়ে ২জন ছেলে। ৩জন মেয়েকে লেখাপড়া যেটুকু করাইছে অথবা করাইনি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বড় ছেলেকে মাস্টার্স পাশ করাইছে। এবং সেইটা ২০০৬ পর্যন্ত ছিল সঠিক মনে নাই। হয়তো তাকে মাসে ৫০০ টাকা ও ২০কেজি করে চাল দিত এবং আনুসঙ্গিক সব খরচ দিত। কিন্তু ছোট ছেলের লেখাপড়া করার খরচ বেশি হওয়ার কারণে বর্তমানে অধ্যায়নের জন্য ৩৭শতক জমি বিক্রি করেছে এবং সেখান থেকে কিছু টাকা বাবা নিজের কাজে খরচ করেছে এবং অবশিষ্ট টাকা ছোট ছেলের লেখাপড়ার জন্য ব্যায় হয়েছে অথবা হচ্ছে কিন্তু বড় ছেলে দাবি করতেছে আমার লেখাপড়ার খরচ হয়েছে ৩০০০০টাকা(কিন্তু বাবা বলতেছে আরো অনেক বেশি খরচ হয়েছে) তাই জন্যে তাকে ৩৭শতক জমি দিতে হবে। এই জমি বাবা দিতে রাজি না হওয়ার জন্য অনেক সময় বাবা মায়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে। বাবার নামে চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করেছে, মামা, চাচা সহ অনেক আত্মিয়ের কাছে জমি নিয়ে দিতে বলেছে কিন্তু সবাই বাবাকে বলেছে কোন জমি সে পাবেনা এবং আপনি তাকে কোন কানা পয়সাও দিতে পারবেন না এই জন্য।
অনেক সময় বাবাকে বলেছে অনেক বাজে কথা। বাবা গত বছর হজ্ব করে এসেছে সে দাবি করছে এই জমি না দিলে হজ্ব হবেনা। মাকে মোবাইল করে আরও বলেছে ওর(মানে বাবার) হজ্ব .., জমি .., ও(মানে বাবা) মারা গেলে ওর(মানে বাবার) জমি লাগবে না ওই জমি আমি .., ইত্যাদি ইত্যাদি।
বোনদের কাছে বলতেছে সে বাবার গলায় ছুড়ি বাঁধিয়ে জমি নেব, তোরা নিলে আমার সাথে যোগ দে, ও(মানে বাবা) মারা গেলে ওই জমি আমার লাগবে না, বাবার জমি আমি …, ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং আরো বলে যে সে জোর করে জমি নেবে তাতে যা করতে হয় করবে।
ছোট ছেলের লেখাপড়া শেষ হয়নি কিন্তু বিয়ে করা তার জন্য জরুরি কিন্তু বাবাকে বিয়ের কথা বললেই সে জানতে পারলে বলে আমাকে জমি না দিলে এই বিয়ে হতে দেবনা । বড় ছেলে নিজের পছন্দে করে বাবা মাকে বলেছে বিয়ে করব তখন বাবা মা কিছু আত্মিয় স্বজন নিয়ে কলমা কাবিন করে রেখেছিলো সেইটা ২০০৩সাল ছিলো সম্ভবত সঠিক মনে নাই আমার কিন্তু পরবর্তীতে আর অনুষ্ঠান করা হয়নি তাই জন্যে পুত্রবধুকে কোন গহনা দিতে পারেনি ও বড় কোন অনুষ্ঠান করতে পারেনি তার আগেই সে নিজে নিজেই বউ বাড়ি নিয়ে আসে এবং সংসার শুরু করে । এখন ছোট ছেলের বিয়ের কথা আসলেই সে বলে আমার বিয়েতে ১০০০০টাকা খরচ হয়েছে তাই ছোট ছেলের বিয়েতে আমার বিয়ের খরচের চেয়ে এক টাকাও বেশি খরচ করা যাবেনা বাবা করতে চাইলে আমি বিয়েতে থাকবো না। তাই বাবা ছোট ছেলের বিয়ে না দিয়ে বসে আছে।
উল্লেখ থাকে যে এই সব কারন নিয়ে সে মাঝে মাঝেই বাবা মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। বড় ছেলে যখন এবং যে কলেজে লেখাপড়া করেছে মাস্টার্স পর্যন্ত তখন বাবা যা দিত তাতেই হয়ে যেত অখবা একটু বেশি লাগতো্। ছোট ছেলে এখন এবং যে কলেজে লেখাপড়া করে বাবা যা দেয় তাতেই হয়ে যায় অখবা একটু বেশি লাগে।

এখন প্রশ্ন হলো
(১) এই জমি সে ইসলামী শরিয়ত মতে সে অথবা সে সহ অন্য মেয়ে এবং মৃত মেয়ের স্বামী এই জমির কোন অংশ পাবে কি না?
(২) মুত মেয়ের কোন ছেলে মেয়ে না থাকলে তার স্বামী কতটুকু জমির অংশ পাবে? এবং বাবা জীবিত থাকলে পাবে নাকি মারা গেলে পাবে?
(৩) উল্লেখ্য কারনে তার বাবা অবশিষ্ট জমি থেকে তাকে বঞ্চিত অথবা ত্যাজ্য করতে পারবে কি না অথবা বাকি সম্পদ তাকে বাদ দিয়ে অন্য সব সন্তানদের উইল করে দিতে পারবে কী না এই ব্যপারে ইসলামী শরিয়ত কি বলে?
(৪) এমন ছেলের বিরুদ্ধে কোনা ব্যবস্থা নেবার রাস্তা বা উপায় ইসলামি শরীয়তে আছে কী? অন্য ধর্মে তায্য পুত্র করা যায় ইসলামে এমন কোন কিছু করার উপায় আছে নাকি?
(৫) তার বাবা ছোট বিয়েতে তার বড় ছেলের বিয়ের খরচের চেয়ে বেশি খরচ করতে পারবে কি না এবং ছোট পুত্রবধুকে গহনা দিতে পারবে কি না?
(৬) বড় ছেলের ভেটো দেবার কারনে বাবা যে ছোট ছেলেকে বিয়ে করালো না এই পরবর্তী সময়ে যদি ছোট ছেলে কোন যিনা অথবা তেমন কোন গুনাহের কাজ করে থাকে যেইটা বিয়ে দিলে করতোনা সেই দ্বায়ভার কার উপর বর্তাবে?
(৭) উপোরোক্ত সকল বিষয় বিবেচনা করে বাবার কি কি করণীয় বলে ইসলামী শরীয়ত মনে করে? এবং বাবার কি কি করণীয় বলে ইসলামী শরীয়ত মতে আপনার মনে হয়?

প্রশ্নকর্তা:
নাম: এস. এম. আজম
গ্রাম: ক্ষিদির হাসড়া
পোষ্ট ও ইউনিয়ন: সুঘাট
থানা: শেরপুর
জেলা: বগুড়া

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রশ্ন করার সময় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কোথাও কোন গালি বা অশ্লীল শব্দ থাকলে তা শালীন শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করুন।

আপনার কৃত প্রশ্নের একাধিক স্থানে অশ্লীল গালির শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যা আমরা …. দিয়ে মুছে দিয়েছি।

ঘটনার প্রকৃত অবস্থা অনেকভাবেই ব্যক্ত করা যায়। এজন্য গালিও সংযোজন করা প্রয়োজন নেই।

আপনার প্রশ্নটি এত দীর্ঘ হবার কোন প্রয়োজন ছিল না।

৩টি মূলনীতি জানলেই উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরটি জানা সহজ হয়ে যাবে।

ত্যাজ্য সম্পদ ব্যক্তির উত্তারাধিকারীরা তখনি পাবার ন্যায্য হকদার হবে, যখন ব্যক্তি মারা যাবে। এর আগে নয়।

ব্যক্তি মারা যাবার পর নিকটত্মীয় জীবিত থাকতে, তাদের তুলনায় দূরের আত্মীয়গণ কোন সম্পদ পায় না।

ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার অধিকৃত যাবতীয় সম্পদের একক মালিকানা তার। সে যেভাবে ইচ্ছে ব্যয় করতে পারে। যাকে ইচ্ছে দিতে পারে। যেখানে ইচ্ছে দান করতে পারে। যাকে ইচ্ছে হাদিয়া দিতে পারে। এ ব্যাপারে সন্তান বা অন্য কোন আত্মীয়দের কথা বলার আইনত কোন অধিকার নেই।

উপরোক্ত ৩টি মূলনীতি জানালে আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তরটি আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন।

আপনার বাবার ইন্তেকালের আগে আত্মীয়গণ বাবার সম্পদ হস্তগত করার অধিকার পায় না। তাই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কোন অধিকার কোন সন্তানের নেই।

দ্বিতীয়ত মেয়ে মারা গেলেতো দূরে থাক, মেয়ে জীবিত থাকলেও মেয়ের স্বামী শ্বশুর থেকে কোন সম্পদ পায় না।

যেহেতু জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় স্বীয় সম্পদ যথেচ্ছা খরচ ও দান করার অধিকার ব্যক্তির রয়েছে। তাই আপনার বাবা যাকে ইচ্ছে, যত ইচ্ছে দান বা খরচ করতে পারেন। কারো জন্য বেশি খরচ, কারো জন্য কম, কাউকে বেশি সম্পদ, কাউকে কম। যেভাবে ইচ্ছে খরচ করতে পারেন। এ ব্যাপারে শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই।

আর ত্যাজ্যপুত্র বলতে শরীয়তে কোন বিধান নেই।

তবে আপনার বাবাব উচিত স্বাভাবিক ন্যায্যতা বজায় রাখা।  কারো উপর অন্যায় জুলুম না করা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে সম্পদ বন্টনে কম বেশি করাতে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার বাবার উপর কোন বিধিনিষেধ নেই।

وفى الهندية- ولو وهب رجل شيئا لأولاده في الصحة وأراد تفضيل البعض على البعض في ذلك لا رواية لهذا في الأصل عن أصحابنا، وروي عن أبي حنيفة – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا كان التفضيل لزيادة فضل له في الدين، وإن كانا سواء يكره وروى المعلى عن أبي يوسف – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا لم يقصد به الإضرار، وإن قصد به الإضرار سوى بينهم يعطي الابنة مثل ما يعطي للابن وعليه الفتوى هكذا في فتاوى قاضي خان وهو المختار، – (الفتاوى الهندية، كتاب الهبة، الباب السادس في الهبة للصغير ٤/٣۹۱، رد المحتار-12/608)

فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان  المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *