প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ হাদীসের কিতাবে বিকৃতি সাধন করে তরকে রফউল ইয়াদাইনের হাদীস সংযোজন করেছেন?

হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ হাদীসের কিতাবে বিকৃতি সাধন করে তরকে রফউল ইয়াদাইনের হাদীস সংযোজন করেছেন?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ,শায়খ ভীষণ দুঃখভরা মন নিয়ে লিখছি ।জানিনা উত্তর হয়তো পাবো কিনা ।আমি উলামায়ে দেওবন্দের মারাত্নক আশেক ।

বিশেষ করে ইমামুল আসর আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রঃ ও যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হাবিবুর রহমান আজমী রঃ এর জন্য ।গতকাল আমাকে

এক গায়রে মুকাল্লিদ আমাকে বললো ,হযরত আযমী রঃ নাকি হাদীসের কিতাবগুলোর ব্যাপক তেহরীফ বা পরিবর্তন করেছেন

বিশেষ করে মুসনাদে হুমায়দী ও সহীহ আবু আওয়ানার ।সে আরো ও বলল শায়খ জুবাইর আলী জাই নাকি ,শাইখ আজমি প্রকাশিত মুসনাদে হুমায়দির ৪০০ তেহরিফ বা পরিবর্তন সনাক্ত করেছেন ।

উদাহরণ  হিসেবে সে আরো বলল, তরকে রফেইদাইনের হাদিস যা মুসনাদে হুমাদির ২য় খন্ড ২৭৭ পূষ্টা ও সহীহ আবু আওয়ানা ২য় খন্ডের ৯০ পূষ্ঠার ,হযরত ইবন উমর রাঃ এর হাদীস ।

শায়খ আজমী রঃ প্রকাশিক হাদীসে এইভাবে আছে ,হযরত ইবন উমর রাঃ  বলেন ,নবী সাঃ যখন নামায আরম্ভ করতেন তখন দুই হাত কাধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন ।

তারপর রুকুতে ও রুকু  হতে উত্তোলনের সময় আর করতেন না । গায়রে মুকাল্লিদ বন্ধু বলল ,এইভাবে হাদিস মুলত হুমায়দী ও আবু আওয়ানাতে নেই ।

এটা শায়খ আজমীর জালিয়াতি । সে দলিল হিসেবে বলল উক্ত দুই গ্রন্থের কোন পান্ডুলিপিতে এইভাবে নেই ,বরং বুখারীতে যেইভাবে আছে

আসল পান্ডুলিপিতে ওইভাবে আছে । সেই আরও বলল যদি এটা তরকে রফেদাইনের হাদীস হতো তাহলে কেন পূর্ববতী কোন হানাফী ফকীহ

এটাকে তরকে রফেয়াদাইনের দলীল হিসেবে ব্যবহার করেনি .আমার জানামতে হযরত লুধিয়ানবী এখতেলাফে উম্মত ও সিরাতে মুস্তাকিম গ্রন্তে

,তরকে রফেদাইনের দলীল হিসেব ১নম্বর এ হাদীসত পেশ করেন ।মাওলানা সরফরাজ  খান সফদর ,শায়খ রাইহান জাওয়ায়িদ সহ অন্যান্য

পাকিস্তানের উলামায়ে দেওবন্দ এ হাদীসকে দলীল হিসেব ব্যবহার করেছে ।আমার প্রশ্ন হল

১.মুসনাদে হুমায়দী ও সহীহ আবু আওয়ানা তে হাদীসটি কিভাবে বিদ্যমান আছে ।যদি তরকে রফেদাইনের হয় ,এর মান কি

৫.২.শায়খ আজমি রঃ কি কিতাব তেহরিফ করেছেন ?

৩.কে এই শায়খ জুবাইর আলী যাই ?

মনের খুব অস্থিরতার মধ্যে প্রশ্নগুলো করেছি ।জীবনে প্রথমবারের মত কোন লা মাযহাবীর কাছে লা জওয়াব হয়ে গেলাম ।গতকাল ,সারারাত এইগুলো শুধু মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল ।

আশা করি অতি সত্বর উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন ।

ইতি

আশেকে উলামায়ে দেওবন্দ ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

লা-মাযহাব মতবাদের মূল ভিত্তিই হল মিথ্যা ও প্রতারণা। কুরআন ও হাদীস বিষয়ে যে যত বড় মিথ্যুক ও প্রতারক হতে পারে, সেই তত বড় লা-মাযহাবী ও গায়রে মুকাল্লিদ হতে পারে।

যুবায়ের আলী যাই পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এক আহলে হাদীস মতাদর্শী আলেম। যিনি ২০১৩ সালে ইন্তেকাল করেছেন। লা-মাযহাবী মতবাদী পূর্বসূরীদের মতই কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক মাসায়েলকে ভুল প্রমাণ করার মিশন বাস্তবায়ন করে গেছেন মৃত্যু পর্যন্ত। সেই সাথে হক্কানী উলামায়ে কেরামের উপর মিথ্যাচার অপবাদ করে গেছেন বেপরোয়াভাবে।

তার মিথ্যাচার ও ধোঁকার জবাবে একাধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে।

আপনি যে অভিযোগটি উত্থাপন করেছেন যুবাইর আলী যা’ই এর উদ্ধৃতিতে। সেটি মূলত যুবাইর আলী যা’ই এর লেখা বই “নূরুল আইনাঈন” নামক গ্রন্থ থেকে নেয়া।

যে কিতাবে যুবায়ের আলী যা’ই প্রচুর মিথ্যা তথ্য ও মনগড়া কথা উদ্ধৃত করেছেন। যার জবাবে আহলে হক উলামাগণের পক্ষ থেকে একাধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে। যেসব কিতাবে যুবাইর আলী যা’ই এর মিথ্যাচারের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে।

যেমন-মাওলানা রায়হান জাভেদ কর্তৃক সংকলিত “কুররাতুল আইনাঈন বজওয়াবে নূরুল আইনাঈন”।

মাওলানা ফয়সাল খান সংকলিত “রফউল ইয়াদাইন কে মউজু পর নামূর গায়রে মুকাল্লিদ যুবায়ের আলী যা’ই কি কিতাব নূরুল আইনাঈন কা মুহাক্কাকানা তাযজিয়া”।

আমরা প্রথমে মুসনাদুল হুমায়দী এবং মুসনাদে আবী আওয়ানায় কী আছে তা দেখে নেই।

মুসনাদে আবী আওয়ানার বর্ণনা

1572 – حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَيُّوبَ الْمُخَرِّمِيُّ، وَسَعْدَانُ بْنُ نَصْرٍ، وَشُعَيْبُ بْنُ عَمْرٍو فِي آخَرِينَ قَالُوا: ثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا» وَقَالَ بَعْضُهُمْ: حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ لَا يَرْفَعُهُمَا، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: وَلَا يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ، وَالْمَعْنَى وَاحِدٌ

হযরত সালেম স্বীয় পিতা ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি নামায যখন শুরু করতেন তখন রফউল ইয়াদাইন করতেন কাঁধ বরাবর। আর যখন রুকু করতে ইচ্ছে করতেন, এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন তিনি রফউল ইয়াদাইন করতেন না। কতিপয় বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করেন যে, দুই সেজদার মাঝেও রফউল ইয়াদাইন করতেন না। অর্থ একই। [মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/৪২৩, হাদীস নং-১৫৭২, তাহকীক-আইমান বিন আরেফ আদদিমাশকী, প্রকাশক-দারুল মা’রিফা, বাইরুত, লেবানন]

দেখুন স্ক্রীণ শর্ট

 

রফউল ইয়াদাইন রুকুতে যেতে আসতে না করার ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণনাকৃত হাদীস শায়েখ হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ স্বীয় তাহকীককৃত আবু আওয়ানায় আনার মাধ্যমে যদি তাহরীফ তথা বিকৃতি করে থাকেন, তাহলে একই  বিকৃতির দোষে দোষী হবেন শায়েখ আইমান বিন আরেফ দামেশকী।

যদি উক্ত হাদীস সম্বলিত কিতাব ছাপানোর দোষে উলামায়ে দেওবন্দ দোষী হন, তাহলে একই দোষে দোষী হবেন পৃথিবীর ঐতিহ্যবাহী প্রকাশ সংস্থা লেবাননের বাইরুতের প্রকাশকরাও।

একই দোষে দোষী হবেন মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সুবিখ্যাত মাকতাবা শামেলা কর্তৃপক্ষ। কারণ মাকতাবা শামেলার আবু আওয়ানা সংস্করণেও হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ যে শব্দে ও যে সনদে হাদীস এনেছেন, সেই শব্দ বাক্যে ও সনদে তারাও তা উদ্ধৃত করেছেন। এটির তাহকীকতো আর হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ করেননি। তাহলে কি আরব মাশায়েখরাও সবাই হাদীসের বিকৃতিকারী? একা যুবায়ের সাহেবই সুফী সাব?

কাকে ধোঁকা দিচ্ছে এসব লা-মাযহাবীরা? মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা সাধারণ মানুষের সামনে করা যায়, কিন্তু উলামাদের সামনে এসব প্রতারণা এক সেকেন্ডও টিকবে না।

তাহলে পরিস্কার বুঝা গেল, লা-মাযহাবী যুবায়ের আলী যা’ই এর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণা। মানুষকে উল্লু বানিয়ে বিভ্রান্ত করাই তার মাকসাদ।

এবার দেখুন মুসনাদুল হুমাইদীর হাদীস!

 حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ قَالَ: ثنا الزُّهْرِيُّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ، وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ فَلَا يَرْفَعُ وَلَا بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ»

হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি নামায শুরু করতেন, তখন কাঁধ বরাবর রফউল ইয়াদাইন করতেন। আর যখন রুকু করতে ইচ্ছে করতেন, এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখন রফউল ইয়াদাইন করতেন না। সেই সাথে দুই সেজদার মাঝেও রফউল ইয়াদাইন করতেন না। [মুসনাদুল হুমায়দী-১/৫১৫, হাদীস নং-৬২৬, মুহাক্কিক-হাসান সালিম আসাদ আদদারানী, প্রকাশকঃ দারুস সাকা, দামেশক]

দেখুন স্ক্রীন শর্ট

 

আমরা উপরে বাইরুত থেকে ছাপা মধ্যপ্রাচ্যের আলেম আইমান বিন আরেফ দিমাশকীর তাহকীককৃত আবু আওয়ানা এবং মধ্যপ্রাচ্যের আলেম হাসান সালীম আসাদ এর তাহকীককৃত দামেশক থেকে ছাপা মুসনাদুল হুমায়দীর কপি দেখালাম। যা আরবের প্রসিদ্ধ সফটওয়্যার মাকতাবা শামেলায়ও বিদ্যমান রয়েছে।

সেখানে হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ এর তাহকীকের উপর অপবাদ আরোপ করে বলা যে, উক্ত হাদীস তিনি বিকৃত করে সংযোজন করেছেন। কত বড় মিথ্যাচার ভাবা যায়?

আশা করি আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। উপরোক্ত দু’টি কিতাবের হাদীসই বিশুদ্ধ। এ কারণেই যুবায়ের আলী যা’ইরা হাদীসটির অস্তিত্বই অস্বিকার করার জন্য উঠেপরে লেগেছেন। কিন্তু সূর্যের দীপ্যমান আলোকে গামছা দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা আহমকী ছাড়া আর কী’বা হতে পারে?

উপরোক্ত দু’টি রেফারেন্সে যুবায়ের আলী যা’ই যে মিথ্যুক তা প্রমাণিত হবার পর বাকিগুলোর অবস্থাও আশা করি বুঝে গেছেন। মিথ্যাই যাদের সম্বল।

আর উলামায়ে দেওবন্দ সম্পর্কে এমন জঘন্য কথা শুনে হয়রান হবার কিছু নেই। উলামায়ে দেওবন্দ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাচ্চা আশেক। সুন্নতে নববীর সত্যিকার অনুসারী।

তারা কিছুতেই দ্বীনের নামে, নবীর হাদীসের নামে প্রতারণা করেন না।

আল্লাহ তাআলা হাবীবুর রহমান আজমী রহঃ সহ উলামায়ে দেওবন্দের কবরকে জান্নাতের নূর দ্বারা ভরে দিন। আমাদের তাদের নকশে কদমে চলে মহান মালিকের রেজামন্দী হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *