প্রচ্ছদ / অজু/গোসল/পবিত্রতা/হায়েজ/নেফাস / হায়েজের রক্ত বন্ধ হলে কখন থেকে নামায পড়া শুরু করতে হবে?

হায়েজের রক্ত বন্ধ হলে কখন থেকে নামায পড়া শুরু করতে হবে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম। আমার বয়স ২০। এ বয়সে এসে পিরিয়ড এর অভ্যস্ত দিনটা বুঝতে পারি, কিন্তু ঠিক কখন থেকে নামায পড়তে হবে তা বুঝতে পারি না। [নামায কাযা হয় কি না? এ ভয় থাকে] কনেকে বলে একদম সাধা স্রাব বের হওয়ার আগ পর্যন্ত নামায পড়া যাবে না। আমি বইতে যে মাসআলা পড়েছি, তা প্রেক্টিক্যালী এপ্লাই করতে কষ্ট হয়ে যায়। পিরিয়ড শেষ হলে ঠিক কখন নামায পড়া লাগবে? তা সহজভাবে বুঝিয়ে লিখলে উপকৃত হতাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কুমিল্লা।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বোন! যেহেতু অনেক বছর ধরেই আপনার পিরিয়ড হচ্ছে, সুতরাং একটি স্বাভাবিক অভ্যাস হয়ে যাবার কথা। অর্থাৎ পিরিয়ডের রক্ত আসা শুরু হবার পর কতদিন পর তা বন্ধ হয়? যদি দশদিনের মাঝে বন্ধ হয়, যেমন ৭ দিন, ৮দিন, ৫দিন ইত্যাদি।

তাহলে যেদিন যে সময়ে বন্ধ হবে, সেদিন গোসল সেরে নামায পড়তে হবে। সাদা স্রাব আসা জরুরী নয়। বরং লাল রক্ত বন্ধ হলেই হায়েজ শেষ হয়ে গেছে বলে ধর্তব্য হবে।

আর যদি নির্দিষ্ট না থাকে, বরং দিন কমবেশি হয়, তাহলেও রক্ত বন্ধ হবার পর গোসল করে নামায পড়া আবশ্যক।

আর এক্ষেত্রে যে নামাযের সময় বন্ধ হল, যদি সেই সময় গোসল করে সেই নামাযের তাকবীর বাঁধার মত সময়ও বাকি থাকে, তাহলে উক্ত নামাযটি আদায় করা আবশ্যক হয়ে যায়। আর যদি গোসল করে তাকবীর বাঁধার মত সময় না পাওয়া যায়, তাহলে সেই নামায আদায় করা আবশ্যক নয়।

উদাহরণতঃ

যোহরের নামাযের সময় শেষ হয় সাড়ে তিনটায়। এখন আপনার হায়েজের রক্ত বন্ধ হল নির্ধারিত দিনের তিনটা সময়ে। এখন এ সময়ে যদি আপনার নিকটে পানি থাকে, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই গোসল করে ফরজ পড়তে পারবন। তাই এ নামায আপনার উপর আবশ্যক হবে। আর যদি পানি না থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করে হলেও নামাযটি আদায় করতে হবে।

কিন্তু আপনার হায়েজ বন্ধ হল তিনটা বেজে ২৫ মিনিটে। তাহলে এ পাচ মিনিটে আপনার জন্য গোসল করে নামায দাড়ানো সম্ভব নয়। তাই এদিনের যোহরের নামায আপনার উপর আবশ্যক হবে না। বরং আসরের নামায থেকে নামায পড়া আবশ্যক হবে।

আর যদি দিন নির্ধারিত না হয়, বরং দশদিন অতিক্রান্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ দশদিনের মাঝে রক্ত বন্ধ হয় না, বরং তা দশদিনের পরও জারি থাকে, তাহলে দশদিন অতিক্রম হবার পর থেকে রক্ত ঝরলেও গোসল করে নামায আদায় করতে হবে।কারণ হায়েজের সর্বোচ্চ সময়সীমা হল ১০ দিন। এরপর রক্ত আসলে তা হায়েজের রক্ত বলে ধর্তব্য হবে না। বরং তা ইস্তিহাজা তথা অসুস্থ্যতার রক্ত বলে ধর্তব্য হবে।

আবারো বলছি, লাল রক্ত বন্ধ হলেই হায়েজ শেষ হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। সাদা স্রাব আসা জরুরী নয়। হ্যাঁ, সাদা স্রাব শুরু হলে হায়েজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। কিন্তু হায়েজ বন্ধ হবার পর নামায পড়ার হুকুম সাদা স্রাব আসার উপর নির্ভরশীল নয়।

তবে রক্ত বন্ধ হবার পর নামাযের মুস্তাহাব সময় পর্যন্ত গোসলকে দেরী করা জায়েজ আছে এ আশংকায় যে, আবার রক্ত আসে কি না? এরপরও যদি রক্ত না আসে, তাহলে গোসল করে নামায পড়ে নিতে হবে। সাদা স্রাব আসার জন্য অপেক্ষা করবে না।

ফাতওয়ায়ে শামী-১/৪৮৯-৪৯১

আল বাহরুর রায়েক-১/৩৫৩-৩৫৫

ফাতহুল কাদীর-১/১৭৩-১৭৪

আশা করি বিষয়টি পরিস্কার বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

এ বিষয়ে ভাল করে জানতে হলে পড়ুন- বেহেশতী জেওর, বা মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন সংকলিত “ফিক্বহুন নিসা”।

فى رد المحتار- وَإِنْ) انْقَطَعَ لِدُونِ أَقَلِّهِ تَتَوَضَّأُ وَتُصَلِّي فِي آخِرِ الْوَقْتِ، وَإِنْ (لِأَقَلِّهِ) فَإِنْ لِدُونِ عَادَتِهَا لَمْ يَحِلَّ، وَتَغْتَسِلُ وَتُصَلِّي وَتَصُومُ احْتِيَاطًا؛ وَإِنْ لِعَادَتِهَا، فَإِنْ كِتَابِيَّةً حَلَّ فِي الْحَالِ وَإِلَّا (لَا) يَحِلُّ (حَتَّى تَغْتَسِلَ) أَوْ تَتَيَمَّمَ بِشَرْطِهِ (أَوْ يَمْضِيَ عَلَيْهَا زَمَنٌ يَسَعُ الْغُسْلَ) وَلُبْسَ الثِّيَابِ (وَالتَّحْرِيمَةَ) يَعْنِي مِنْ آخِرِ وَقْتِ الصَّلَاةِ لِتَعْلِيلِهِمْ بِوُجُوبِهَا فِي ذِمَّتِهَا، (رد المحتار ، كتاب الطهارة، باب الحيض-1/489-491

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *