প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / ইলহাম কাকে বলে? ইলহাম কী শরীয়তের দলীল হতে পারে?

ইলহাম কাকে বলে? ইলহাম কী শরীয়তের দলীল হতে পারে?

প্রশ্ন

নাম ইখতিয়ার

মিরপুর – ০২, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম

এলহাম  কি  বা কাকে বলে  বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব ।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ইলহামের পারিভাষিক অর্থ হল, চিন্তা ও চেষ্টা  ছাড়াই কোন কথা অন্তরে উদ্রেক হওয়া। ইলহাম কাশফেরই প্রকার বিশেষ। ইলহাম সহীহ হলে তাকে ইলমে লাদুন্নী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কথা হল ইলহামও স্বপ্নের ন্যায় কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আবার কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়।

যে ইলহাম শরীয়তের হুকুম আহকাম সম্পর্কিত নয় এবং তার বিষয়বস্তু শরীয়তপন্থী নয় বা যে ইলহাম শরীয়তের কোন হুকুম আহকাম সম্পর্কিত কিন্তু এর পক্ষে শরীয়তের দলীলও বিদ্যমান থাকে, শুধু এ ধরণের ইলহামকেই সহীহ ইলহাম বলা হবে এবং ধরা হবে এটি আল্লাহ তাআলা পক্ষ থেকে হয়েছে। এটি আল্লাহ তাআলার নিয়ামত বলে পরিগণিত হবে। এ ব্যাপারে তাঁর শোকর আদায় করা দরকার। আর যদি ইলহামে উপরোক্ত শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে তা শয়তানের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরণের ইলহাম থেকে বিরত থাকা এবং তা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা আবশ্যক। {ফাতহুল বারী-১২/৪০৫, কিতাবুত তাবীর, বাব-১০, রূহুল মাআনী-১৬/১৬-২২, তাবসিরাতুল আদিল্লা-১/২২-২৩, মাওকিফুল ইসলাম মিনাল ইলহাম ওয়াল কাশফি ওয়াররুয়া-১১-১১৪}

হাদীসে এসেছে

عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ لِلشَّيْطَانِ لِمَّةً، وَلِلْمَلَكِ لِمَّةً، فَأَمَّا لِمَّةُ الشَّيْطَانِ فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ، وَتَكْذِيبٌ بِالْحَقِّ، وَأَمَّا لِمَّةُ الْمَلَكِفَإِيعَادٌ بِالْخَيْرِ، وَتَصْدِيقٌ بِالْحَقِّ، فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ أَنَّهُ مِنَ اللهِ، فَلْيَحْمَدِ اللهَ، وَمَنْ وَجَدَ مِنَ الْآخَرِ فَلْيَتَعَوَّذْ مِنَ الشَّيْطَانِ، ثُمَّ قَرَأَ {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا} [البقرة: 268]

নিশ্চয় মানুষের অন্তরে শয়তানের পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়, ফেরেশতার পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়। ফেরেশতার উদ্রেক হল, কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতি দান এবং হকের সত্যায়ন করা। যে ব্যক্তি এটি অনুভব করবে, তাকে বুঝতে হবে যে, তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে, তাই তার প্রশংসা করা উচিত। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয়টি অনুভব করবে, তাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করতে হবে। অতঃপর তিনি [সূরা বাকারার ২৬৮ নং] আয়াত পাঠ করেন, অর্থাৎ শয়তান তোমাদের অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অধিক অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। {সুনানুল কুবরা লিননাসায়ী, হাদীস নং-১০৯৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৯৯৭, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৯৯৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৯৮৮}

এ হাদীসে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ইলহাম কখনো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়, আবার কখনো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। কাজেই ইলহাম হক ও বাতিলের মাপকাঠি হতে পারে না এবং শরীয়তের কোন দলীল হতে পারে না। তাছাড়া আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ইলহাম হওয়ার আলামত শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, তা হক ও ভাল। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হক ও ভালোর মাপকাঠি হল কুরআন সুন্নাহ ও ইজমা কিয়াস।

ফিক্বহ ও আকাইদ বিষয়ক আইম্মায়ে কেরাম ছাড়াও হক্কানী সুফিয়ায়ে কেরাম এ কথার সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, কাশফ ও ইলহাম শরীয়তের কোন দলীল নয়। বরং শরীয়তের অন্যান্য দলীলের আলোকে কাশফ ও ইলহামের বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য। পিছনে কাশফের আলোচনায় ইমাম আবূ সুলাইমান দারানী এবং মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহঃ এর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।

وممن صرح بأن الإلهام ليس بحجة من الصوفية الإمام الشعراني وقالقد زل في هذا الباب خلق كثير فضلوا وأضلوا، ولنا في ذلك مؤلف سميته حد الحسام في عنق من أطلق إيجاب العمل بالإلهام وهو مجلد لطيف

সুফিয়ায়ে কেরামের ইমাম শায়েখ আব্দুল ওয়াহহাব শারানী রহঃ স্পষ্ট ভাষায় এ কথা বলেছেন যে, ইলহাম কোন দলীল নয়। তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে [ইলহামকে দলীল মনে করে] বহু লোকের পদস্খলন ঘটেছে। তারা নিজরাও পথভ্রষ্ট হয়েছে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করেছে। আমি এর খন্ডনে একটি বই লিখেছি। তার নাম হল, হদ্দুল হুসান ফী উনুকি মান আতলাকা ঈযাবাল আমালি বিল ইলহাম। {তাফসীরে রূহুল মাআনী-১৬/১৭}

সুফিয়ায়ে কেরামের ইমাম শায়েখ সারী সাকাতী রহঃ বলেন,

من ادعى باطن علم ينقضه ظاهر حكم فهو غالط

যে ব্যক্তি এমন বাতেনী ইলমের [ইলহাম] দাবী করে, যাকে যাহেরী শরীয়ত প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি বিরাট ভুলের মাঝে পতিত আছে। {তাফসীরে রূহুল মাআনী-১৬/১৯}

ইমাম আবূ সাঈদ খাররাজ সূফী রহঃ বলেন,

وقال أبو سعيد الخراز: كل فيض باطن يخالفه ظاهر فهو باطل

ঐ সকল বাতেনী ফয়েজ [ইলহাম] যা যাহেরের [শরীয়তের] পরিপন্থী তা ভ্রান্ত। {তাফসীরে রূহুল মাআনী-১৬/১৯}

স্বপ্ন, কাশফ ও ইলহাম সম্পর্কে একটি সর্ববিদিত মৌলিক কথা হল, এগুলো কোনটিই ব্যক্তির ইচ্ছেধীন নয়। সম্পূর্ণই ইচ্ছেশক্তির বাইরের বিষয়। তাই এগুলো শরীয়তের ভিত্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এসব শরীয়তের কাম্য বস্তুও নয়। যদি এসব শরীয়তের কাম্য বস্তু হতো, তাহলে আল্লাহ তাআলা এসবকে মানুষের ইচ্ছেধীন বানিয়ে দিতেন। আর এসব অর্জনের জন্য নির্দেশনাও পবিত্র কুরআন ও হাদীসে।

তাই এসবকে মাপতে হবে শরীয়তের দলীলের উপর মাপকাঠিতে। কুরআন ও সুন্নাহ এবং ইজমা কিয়াসের আলোকে যা সমর্থনযোগ্য তা সহীহ বলে ধর্তব্য হবে। আর না হলে গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা সাব্যস্ত হবে। তবে সর্ববস্থায় এসব দ্বারা শরীয়তের কোন বিধান সাব্যস্ত হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দু পরিচয় দিয়ে ইসকনের মিছিলে শরীক হওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মিছিলে যেসব মুসলমান শরীক হয়, নিজেদের হিন্দু পরিচয় দেয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *