প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / জিনা করলে কি রোযা ভঙ্গ হয় না? রোযার কাফফারা প্রসঙ্গে

জিনা করলে কি রোযা ভঙ্গ হয় না? রোযার কাফফারা প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ্

জনাব,

ফতোয়া বিভাগ প্রধান মহোদয়

আমি আবদুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি, আজ থেকে কয়েক বছর আগে একটি খারাপ কাজ করেছিলাম। যা বলতে লজ্জাবোধ করলে ও পরকাল আখেরাতের ভয়ে আমার অন্তর কিন্তু প্রচন্ড বেদনায় কাতরাচ্ছে। তারপরও শরীয়তের সমাধান পাওয়া যাবে বলে আপনাদের শরনাপন্ন হয়ে ফতোয়া তলব করছি।

প্রশ্ন: একবার আমি রমজানের রোজা রাখা অবস্থায় একটি যুবতী মেয়ের সাথে জেনা করেছিলাম। তখন রুমের ভিতরে আমি আর ঐ যুবতী ছাড়া আর কেউ ছিল না। ফলে, ঐ মেয়ের সাথে সহবাস করেছিলাম এবং সেই দিন কিন্তু রোজা নষ্ট করিনি। পুরোদিন ঠিক বরাবরের মত কিছু না খেয়ে ইফতারের সময় ইফতার করেছি।

এখন আপনাদের কাছে জানতে চাই আমি কি করতে পারি!

রমজানের রোজা কি নষ্ট হয়েছে? আর নষ্ট যদি হয়ে থাকলে রোজার বিধান কি?

বিস্তারিত জানালে খুব খুশি হব।

আল্লাহ্পাক আপনাদের দুনিয়া-আখেরাতের উত্তম বদলা দান করুন। আমীন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

রোযা বলাই হয়, পানাহার এবং স্ত্রী সহবাস থেকে সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে বিরত থাকাকে।

সেখানে রোযা রেখে খানা খেলে, পানাহার করলে যেমন রোযা ভেঙ্গে যায়, তেমনি রোযা রেখে সহবাস করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়।

আপনি রোযা অবস্থায় সহবাস করে দু’টি কবীরা গোনাহ করেছেন। যথা-

১-অযথাই রোযা ভেঙ্গে দিয়েছেন।

২-জিনার মত মারাত্মক গোনাহ করেছেন।

গোনাহের শাস্তি দুই ধরণের। এক হল দুনিয়াবী শাস্তি। আরেক হল আখেরাতের শাস্তি। আপনার প্রথমোক্ত গুনাহের দুনিয়াবী শাস্তি হল কাফফারা আদায় করতে হবে। আর দ্বিতীয় গোনাহের দুনিয়াবী শাস্তি ছিল আপনার উপর জিনার হদ কায়েম করা। কিন্তু যেহেতু এটি ইসলামী রাষ্ট্র নয় তাই এ দুনিয়াবী শাস্তি আপনার উপর প্রযোজ্য হবে না। বাকি আখেরাতের জন্য গোনাহ রয়েই গেল।

এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে দু’টি কাজ করতে হবে। যথা-

১- কৃত গোনাহের জন্য সাচ্চা দিলে তওবা করতে হবে।

২- রোযার কাফফারা আদায় করে দিতে হবে।

তওবা করার পদ্ধতি

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}

সুতরাং বুঝা গেল গোনাহ করে ফেললে মাফ করানোর পদ্ধতি হল খালেস দিলে তওবা করা। তওবা সহীহ হবার জন্য ৩টি শর্ত। যথা-

১-সাথে সাথে গোনাহের কাজটি ছেড়ে দিতে হবে।

২-ভবিষ্যতে এই গোনাহটি না করার দৃঢ় সংকল্প করা।

৩-গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

এই ৩টি শর্ত পাওয়া গেলে তওবা সঠিক হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।

এভাবে তওবা করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন বলেই আমরা আশা রাখি।

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يلج النار رجل بكي من خشية الله حتى يعود اللبن في الضرع ولا يجتمع غبار في سبيل الله ودخان جنهم

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। (নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪২৭)

কাফফারা কিভাবে আদায় করবে?

আপনি যদি শারিরিকভাবে শক্ত সামর্থ হয়ে থাকেন। তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখতে হবে। মাঝখানে রোযা ভাঙ্গা যাবে না। যদি মাঝখানে রোযা ভেঙ্গে ফেলেন তাহলে আবার প্রথম থেকে ৬০ দিন গণনা করতে হবে। এভাবে ষাট দিন রোযা রাখলে আপনার রোযা ভঙ্গের কাফফারা আদায় হয়ে যাবে। আর যদি লাগাতার ষাট দিন রোযা রাখতে সক্ষম না হন, তাহলে প্রতি রোযার জন্য সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা গরীবদের দান করে দেয়া আবশ্যক। তথা ষাট রোযার জন্য ষাটটি সদকায়ে ফিতির পরিমাণ অর্থ দান করা আবশ্যক। যেমন সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা যদি ৬০ টাকা হয়। তাহলে আপনার তিন হাজার ছয়শত টাকা দান করা আবশ্যক। কিন্তু মনে রাখতে হবে রোযা রাখতে সক্ষম হলে ফিদিয়া আদায় করলে তা আদায় হবে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ فَقَالَ: هَلَكْتُ، قَالَ: «وَمَا أَهْلَكَكَ؟» قَالَ: وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعْتِقْ رَقَبَةً» قَالَ: لَا أَجِدُ، قَالَ: «صُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ» قَالَ: لَا أُطِيقُ، قَالَ: «أَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا»

অনুবাদ- হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কে ধ্বংস করেছে? সাহাবী বললেন, রমজানে আমি আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। রাসূল সাঃ তাকে বললেন, তাহলে এর বদলে একটি গোলাম আযাদ কর। সাহাবী বললেন, আমি এতে সক্ষম নই। নবীজী সাঃ বললেন, তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখ। সাহাবী বললেন, আমি এতেও সক্ষম নই। তখন রাসূল সাঃ বললেন, তাহলে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খানা খাওয়াও। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৭১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৯৪৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১১০৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৯৪৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩৫২৭}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

One comment

  1. ইয়া আল্লাহ্‌!
    আমাদের এই ভাইয়ের তাওবা কবুল করুন !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *