প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / স্ত্রী কর্তৃক তালাক ও মোহরানা প্রসঙ্গে

স্ত্রী কর্তৃক তালাক ও মোহরানা প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

আচ্ছালামু ‘আলাইকুম ওয়ার’হমাতুল্লাহ
মাননিয় মুফতী সাহেব!

আমার পরিচিত এক ব্যাক্তির স্ত্রী তাকে বিয়ের তিনমাস না যেতেই স্বামীকে
একতরফা তালাক (১৯৬১ সানের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৮ধারা মুতাবিক, স্ক্রী
কর্তৃক তারাকের নোটিশ) রেজি: করে স্বামীর নিকট প্রেরণ করে ও  বিয়েরসময়
তার দেওয়া স্বর্ণালংকার সহ চলে যায়। এখন নিম্নের প্রশ্নগুলো উত্তর পেলে
উপকৃত হতাম।
১। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দিতে পারে কিনা।
২। বিবাহের তিনমাসের মধ্যে স্ত্রী যদি একতরফা স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে যাই সেক্ষেত্রে স্ত্রী কি মহোরনা দাবী করতে পারেকিনা? তাদের মধ্যে কোন শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।
৩। স্বামী কি এক্ষেত্রে স্ত্রী থেকে তার স্বর্ণালংকার ফেরত পাবার দাবী করতে পারবে কিনা বা এ ক্ষেত্রে আইনী সহযোগীতা পাবে কি?
মেহেরাবনি করে উত্তরটা পেলে উপকৃত হতাম।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং এর  জবাব

মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।

স্বামী স্ত্রীকে যেভাবে তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্ত্রী ঠিক সেভাবে তালাক পতিত করার অধিকার পাবে। যদি শর্তহীন অধিকার দেয় সময় নির্দিষ্ট করে, তাহলে সেই সময়ের মধ্যে তালাক দেবার অধিকার পাবে, আর যদি আজীবনের জন্য অধিকার দেয়, তাহলে যেকোন সময় তালাক পতিত করার অধিকার পাবে। আর যদি কোন শর্তযুক্ত করে অধিকার দেয় তাহলে উক্ত শর্ত পাওয়া গেলে তালাক দেবার অধিকার পাবে।

বিঃদ্রঃ আজীবনের জন্য তালাকের অধিকার না দিলে অন্য সুরতগুলোতে স্বামী কর্তৃক তালাকের অধিকার পাওয়ার কথাটি যখনই শুনবে সেই মজলিসে স্ত্রী নিজের উপর তালাক দেবার অধিকার পাবে। সেই মজলিস শেষ হয়ে গেলে আর পূর্বের অধিকার বলে তালাক পতিত করতে পারবে না।

وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .

( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452)

প্রামান্য গ্রন্থাবলী

১. ফাতওয়ায়ে শামী-৪/৫৫১-৫৫৫

২. ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১২/৪৭৬-৪৭৭

৩. বাদায়েউস সানায়ে-৩/১৮০-১৮১

৪. ফাতওয়ায়ে আল ওয়াল ওয়ালিজিয়্যাহ-২/৯১

২ নং এর জবাব

স্ত্রী যদি স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক দেবার অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে। সেই হিসেবে যদি স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।

আর তালাক হবার পর স্ত্রী মোহর পূর্ব নির্ধারিত থাকলে মোহরানার দাবি করতে পারে। যদি শারিরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে তাহলে পূর্ণ মোহর দাবি করতে পারে। আর শারিরিক সম্পর্ক না হলে অর্ধেক মোহরের দাবি করতে পারে। আর যদি পূর্ব থেকে মোহর নির্ধারিত না থাকে, তাহলে এক জোড়া কাপড় স্ত্রী প্রাপ্য। তথা একটি জামা, উড়না ও পায়জামা।

আর স্ত্রী যদি মোহর মাফ করে দেয় তাহলে তা মাফ বলে গণ্য হবে।

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۚ وَلَا تَنسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ [٢:٢٣٧]

আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও, তাহলে যে, মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য যদি নারীরা ক্ষমা করে দেয় কিংবা বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি ক্ষমা করে দেয় তবে তা স্বতন্ত্র কথা। আর তোমরা পুরুষরা যদি ক্ষমা কর, তবে তা হবে পরহেযগারীর নিকটবর্তী। আর পারস্পরিক সহানুভূতির কথা বিস্মৃত হয়ো না। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সেসবই অত্যন্ত ভাল করে দেখেন। {সূরা বাকারা-২৩৭}

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ [٢:٢٣٦]

স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। {সূরা বাকারা-২৩৬}

৩ নং প্রশ্নের জবাব

আসলে আগের দু’টি প্রশ্নের উত্তরের মাঝেই আপনার এ প্রশ্নের জবাব নিহিত রয়েছে। যদি স্ত্রী মোহর হিসেবে উক্ত স্বর্ণালংকার গ্রহণ করে থাকে, তাহলে যেহেতু মোহর পূর্ব নির্দিষ্ট থাকলে অর্ধেক মোহর প্রাপ্য সেই হিসেবে যদি সেই অর্ধেকের মাঝে এটি পড়ে যায়, তাহলে স্বামী আর সেটি চাইতে পারবে না। আর যদি না পড়ে তাহলে চাইতে পারবে। আর যদি মোহর পূর্ব নির্ধারিত না থাকে, তাহলে এ অলংকারটি স্বামী ফেরত নিতে পারবে।

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ [٢:٢٣٦]

স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত করার পূর্বেও যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের উপর দায়িত্ব। {সূরা বাকারা-২৩৬}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *