প্রশ্ন
ঈমাম আবু হানিফা (রাহ: ) কি নিজ হাতে কোনো গ্রন্থ রচনা করে গেছেন? যার দারা আমরা বুঝবো যে কথা গুলো তার বলা অথবা হাদিস গুলো তিনি সহিহ বলেছেন। কিভাবে বিশ্বাস করবো তিনি বলেছেন কিনা? কোনো বিষয়ে যদি সন্দেহ থাকে!
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বাহ! ভাল যুক্তি দিয়েছেন। আমরা এ কারণেই বলি যে, নাস্তিক হওয়ার প্রথম শর্ত হল গায়রে মুকাল্লিদ হওয়া। কোন মুকাল্লিদ নাস্তিক হতে পারে না। আপনার প্রশ্নটি পুরোপুরি গায়রে মুকাল্লিদ মার্কা হয়েছে। মাশাআল্লাহ ভাল প্রশ্ন।
কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, আপনিতো দু’দিন পর নাস্তিকদের মত প্রশ্ন করে বসবেন যে, আল্লাহ তাআলা কি নিজ হাতে তার কালাম রচনা করেছেন? যার দ্বারা আমরা বুঝতে পারবো যে কথাগুলো তার নামে বলা হচ্ছে তা তারই বলা? কিভাবে বিশ্বাস করবো যে, আল্লাহ তাআলাই বলেছেন কি না? যদি কোন আয়াতের ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। [যেমন নাস্তিকরা বিভিন্ন আয়াত বিষয়ে সন্দেহ করে থাকে।]
এরকম প্রশ্ন যে, আপনি ক’দিন পর করবেন না, তার কোন নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
এরকম জঘন্য প্রশ্ন যদি আপনাকে কোন নাস্তিক করে বসে তাহলে আপনার কাছে কী জবাব আছে? আশা করি এমন প্রশ্ন আপনি অন্তত কোনদিন করবেন না। আল্লাহ তাআলা মাফ করুন!
কুরআনের প্রতিটি আয়াত সনদের সাথে নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই বলে কুরআনের আয়াত আল্লাহ তাআলার বাণী নয়?
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর দিকে নিসবত করা ফিক্বহে হানাফীর কিতাব ইমাম আবু হানীফা রহঃ পর্যন্ত সনদ প্রমাণিত নয়, তাই বলে ফিক্বহে হানাফী ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর নয়?
দুই প্রশ্নের এক জবাব
সেটি হল, কুরআন আল্লাহ তাআলা নিজে লিখেন নি। কিন্তু আল্লাহর কালাম। যদিও কুরআনের প্রতিটি আয়াতের কোন সনদ রাসূল সাঃ পর্যন্ত নেই। তবু তা আল্লাহর কালাম। দলীল হল, মুতাওয়াতির সূত্রে তথা নিরবচ্ছিন্নভাবে ধারাবাকিতায় আমাদের পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার কালাম কুরআন পৌঁছেছে। যারা পৌঁছেয়েছেন, তারা সবাই সাক্ষ্যি দিয়েছেন এটি আল্লাহর কালাম।
এ তাওয়াতুরের কারণে আমরা বিশ্বাস করি এটি আল্লাহর কালাম। এর জন্য কোন দলীলের প্রয়োজন নেই।
ঠিক তেমনি ইমাম হানীফা রহঃ এর দিকে নিসবত করা তার মাযহাবের মাসায়েল আমাদের পর্যন্ত বিভিন্ন কিতাবের মাধ্যমে মুতাওয়াতির সূত্রে পৌঁছেছে। যারা ফিক্বহে হানাফী মানেন, তারাও বলেন, হেদায়া, কুদুরী, কানযুদ দাকায়েক, শরহে বেকায়া ফিক্বহে হানাফী, আর যারা মানেন না তারাও বলেন এসব ফিক্বহে হানাফী। এটি মুতাওয়াতির। তাই এর জন্যও কোন সনদের প্রয়োজন নেই। কারণ কোন বিষয় তাওয়াতুরের দরজায় পৌঁছলে তার দলীল প্রয়োজন হয় না। মুতাওয়াতুর হওয়াটাই একটি বড় দলীল।
এ কারণেই আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ শরহু নুখবাতিল ফিকারের মাঝে লিখেছেনঃ
والمتواتر لا يُبْحثُ عن رجالهبل يجب العمل به من غير بحث
অর্থাৎ মুতাওয়াতির বিষয়ের ক্ষেত্রে রাবী বিষয়ে আলোচনা করা হবে না। বরং তার উপর আলোচনা-পর্যালোবনা ছাড়া আমল করা আবশ্যক। {শরহু নুখবাতিল ফিকার-৪২}
আশা করি আপনার প্রশ্নটি অজ্ঞতা সূচক প্রশ্ন তা বুঝে এসেছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক–তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
আল্লাহ আপনাদের কামিয়াবী দান করুক।