প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ওয়ারিস” কি অযৌক্তিক?

আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘ওয়ারিস” কি অযৌক্তিক?

প্রশ্ন

আসসালামুআলায়কুম।
একটা ছেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আল্লাহ্‌তো সূরা ইখলাসে বলেছেন তিনি কারো হতে জন্ম নেন নি এবং তিনি কাউকে জন্ম দেন নি। তাহলে তার নাম আল-ওয়ারিস হয় কি ভাবে? ওয়ারিস অর্থতো উত্তরাধিকারী কিন্তু আল্লাহ্‌ কিভাবে উত্তারাধিকারী হতে পারেন?

আমি তাকে কয়েকটা তাফসীরের কিতাব থেকে দেখিয়েছি যে ওয়ারিস অর্থ হলো অধিকারী হওয়া, আল্লাহ্‌র জন্য সন্তানের মতো উত্তরাধিকারী হওয়া জরুরী নয়, কিন্তু সে তা বিশ্বাস করতে চায় না বরং সে বলে এটা নাকি ভুল ব্যাখ্যা। দয়া করে ওয়ারিস শব্দের প্রকৃত অর্থ এবং এর বুৎপত্তিগত অর্থ তথা এটা কোন শব্দ হতে এসেছে তা প্রমাণ সহ জানাবেন। আমি ঐ ছেলেটা দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি তাছাড়া সে এই নিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যে আল্লাহ্‌র সব নাম নাকি যৌক্তিক নয় (নাউযুবিল্লাহ)। দ্রুত জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ওয়ারিস শব্দের মূল অর্থ হলো: والوارث هو كل باقٍ بعد ذاهب অর্থাৎ কেউ চলে যাবার পর যারা বাকি থাকে তারাই হলেন ওয়ারিস।

সুতরাং পুরো দুনিয়া যখন ধ্বংস হয়ে যাবে তখন একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বাকি থাকবেন। তাই তাঁকে ওয়ারিস বলা হয়েছে।

কারণ, ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী তিনিই হোন, যিনি আত্মীয় মৃতের পর জীবিত থাকেন। তো আল্লাহ তাআলাই একমাত্র চিরঞ্জীব। সবাই মৃত্যুবরণ করবে। সবার মৃত্যুর পর যেহেতু তিনিই একামত্র জীবিত থাকবেন। সুতরাং আল্লাহর গুণবাচক নাম “ওয়ারিস” যথার্থ ও সঠিক।

সব কিছু ধ্বংস হবে আল্লাহ তাআলা ছাড়া। এ সংক্রান্ত অনেক আয়াত বিদ্যমান। যেমন:

كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

ভূ-পৃষ্ঠে যা-কিছু আছে, সবই ধ্বংস হবে। বাকি থাকবে কেবল তোমার প্রতিপালকের গৌরবময়, মহানুভব সত্তা। [সূরা আর রহমান-২৬-২৭]

كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ

সবকিছুই ধ্বংসশীল, কেবল আল্লাহর সত্তাই ব্যতিক্রম। [সূরা আল ক্বাসাস – ৮৮]

সব ধ্বংস হবার পর যেহেতু একমাত্র আল্লাহ তাআলাই থাকবেন। সুতরাং তিনিইতো প্রকৃত ওয়ারিস। ওয়ারিস বলাইতো হয়, মারা যাবার পর বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে।

আরেক আয়াতে বিষয়টি আরো পরিস্কারভাবে আসছে:

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا ۖ فَتِلْكَ مَسَاكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ وَكُنَّا نَحْنُ الْوَارِثِينَ [٢٨:٥٨]

আমি এমন কত জনপদ ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দাগণ তাদের অর্থ-সম্পদের বড়াই করত। ওই তো তাদের বাস্তুভিটা (যা তোমাদের সামনে রয়েছে), তাদের পর সামান্য কিছুকাল ছাড়া তা আর আবাদ হতে পারেনি। আমিই হয়েছি তার উত্তরাধিকারী। [সূরা আল ক্বাসাস – ৫৮]

আরেকটি বিষয় হলো: এর দ্বারা একথাও বুঝে আসে যে, সমস্ত কিছু প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনিই সকল সম্পদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। সুতরাং তার পথে খরচ করতে কৃপণতা করা উচিত নয়। তিনিই সম্পদ দান করেন। আবার তার কাছেই সব কিছু ফিরে যাবে। সুতরাং সমস্ত সম্পদ ও বস্তুর প্রকৃত মালিক তথা উত্তরাধিকারীতো আল্লাহ তাআলাই।

وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ أُولَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ﴿الحديد: ١٠﴾

আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু। বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। ৭৯ আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মীরাছ কেবল আল্লাহরই জন্য। তোমরা যা-কিছুই কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। [সূরা আলে ইমরান – ১৮০]

সুতরাং বুঝা গেল যে, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম ‘ওয়ারিস’ তাঁর সত্তার জন্য যথার্থ ও যথোপযুক্ত নাম। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরী করা মূর্খতার আলামত।

আল্লাহর প্রতিটি গুণবাচক নাম সঠিক ও যথার্থ এবং যৌক্তিক। মূর্খতার কারণে মনে হতে পারে যৌক্তিক নয়। কিন্তু প্রকৃত ইলম যাদের মাঝে আছে, তারা জানেন যে, আল্লাহ তাআলার কোন গুণবাচক নামই ভুল নয়।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected] 

 

0Shares

আরও জানুন

পেশাবের রাস্তায় সারাক্ষণ ধাতু ঝরা ব্যক্তি কিভাবে নামায আদায় করবে?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। হযরত আমি সিলেট থেকে বলছি।  পেশায় একজন ছাত্র। বয়স ২৩ রানিং। আমার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস