প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম
ফজরের জামাত শুরু হয়ে যাওয়ার পরও কি সুন্নাত পড়ে নেওয়ার বিধান রয়েছে?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি নামাযের এক রাকাত পাবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নাত পড়ে নিবে।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: لم يكن النبي صلى الله عليه و سلم على شيء من النوافل أشد منه تعاهدا على ركعتي الفجر
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত এর মত কোন নফল নামাযকে এত হিফাযত ও গুরুত্ব প্রদানকারী ছিলেন না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১১১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৪৬৩}
عن عائشة عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال ركعتا الفجر خير من الدنيا وما فيها
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকে ফজরের দুই রাকাত উত্তম। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭২১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৫০, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০৭}
عن أبى هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : لا تتركوا ركعتي الفجر ولو طردتكم الخيل
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ অশ্বারোহী বাহিনী তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেও তোমরা ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] ছেড়ো না। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৬০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪২৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৫৩}
عبد الله بن أبى موسى عن أبيه : حين دعاهم سعيد بن العاص دعا أبا موسى وحذيفة وعبد الله بن مسعود رضي الله عنهم قبل أن يصلى الغداة ثم خرجوا من عنده وقد أقيمت الصلاة فجلس عبد الله الى أسطوانة من المسجد فصلى الركعتين ثم دخل في الصلاة فهذا عبد الله قد فعل هذا ومعه حذيفة وأبو موسى لا ينكران ذلك عليه فدل ذلك على موافقتهما إياه (شرح معانى الأثار، كتاب الصلاة، باب الرجل يدخل المسجد والإمام في صلاة الفجر ولم يكن ركع أيركع أو لا يركع، رقم الحديث- 2037)
আব্দুল্লাহ বিন মুসা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা সাঈদ বিন মুসা হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ, হযরত হুযায়ফা রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ কে ডাকলেন ফজরের নামাযের আগে। তারপর তারা বের হলেন তার [সাঈদ বিন মুসা রাঃ] নিকট থেকে এমতাবস্থায় যে, [ফজরের] নামায দাঁড়িয়ে গেছে। তখন আব্দুল্লাহ মসজিদের এক স্তম্ভের কাছে বসে গেলেন। তারপর দুই রাকাত [ফজরের সুন্নাত] নামায পড়লেন। তারপর নামাযে [ফরজের জামাতে] শরীক হলেন। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ একাজটি করলেন। সাথে ছিলেন হুযায়ফা ও আবু মুসা রাঃ। কিন্তু তাদের কেউ এটা বারন করেননি। সুতরাং এটি প্রমাণ বহন করে যে, তারাও এতে রাজি ছিলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৭}
عن أبى إسحاق عن عبد الله بن أبى موسى عن عبد الله : انه دخل المسجد والإمام في الصلاة فصلى ركعتي الفجر (رقم الحديث-2038)
আব্দুল্লাহ বিন আবী মুসা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব ছিলেন নামাযে, তখন তিনি [আগে] ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৩৮}
عن أبى مجلز قال : دخلت المسجد في صلاة الغداة مع بن عمر وابن عباس رضي الله عنهم والإمام يصلى فأما بن عمر رضي الله عنهما فدخل في الصف وأما بن عباس رضي الله عنهما فصلى ركعتين ثم دخل مع الإمام (رقم الحديث-3029)
আবী মিজলাস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ফজরের নামাযে একদা ইবনে ওমর রাঃ, ইবনে আব্বাস রাঃ এর সাথে মসজিদে প্রবেশ করলাম এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব নামায পড়াচ্ছিল। তখন ইবনে ওমর রাঃ কাতারে শামিল হয়ে গেলেন। আর ইবনে আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। তারপর ইমামের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-৩০২৯}
عن أبى عثمان الأنصاري قال : جاء عبد الله بن عباس والإمام في صلاة الغداة ولم يكن صلى الركعتين فصلى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما الركعتين خلف الإمام ثم دخل معهم وقد روى عن بن عمر مثل ذلك
আবু উসমান আলআনসারী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস এমতাবস্থায় এলেন যে, ইমাম সাহেব ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। আর তিনি ফজরের [সুন্নত] দুই রাকাত পড়েননি। তাই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন ইমামের পিছনে। তারপর তিনি ইমামের সাথে শরীক হলেন। ইবনে ওমর রাঃ এর ব্যাপারেও এমনি বর্ণিত। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪০}
نافعا يقول : أيقظت بن عمر رضي الله عنهما لصلاة الفجر وقد أقيمت الصلاة فقام فصلى الركعتين
হযরত নাফে বলেনঃ আমি ইবনে ওমর রাঃ কে ফজরের নামাযের জন্য জাগালাম এমতাবস্থায় যে, ফজরের নামায জামাত দাঁড়িয়ে গেছে। তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪২}
عن أبى الدرداء : أنه كان يدخل المسجد والناس صفوف في صلاة الفجر فيصلى ركعتين في ناحية المسجد ثم يدخل مع القوم في الصلاة
আবু দারদা থেকে বর্ণিত। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, লোকেরা ফজরের নামাযের কাতারে ছিল, [তথা নামায শুরু করে দিয়েছে] তখন তিনি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন মসজিদের কিনারায়,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৪৪}
عن أبى عثمان النهدي قال : كنا نأتي عمر بن الخطاب رضي الله عنه قبل أن نصلى ركعتين قبل الصبح وهو في الصلاة فنصلى ركعتين في آخر المسجد ثم ندخل مع القوم في صلاتهم
আবু উসমান আননাহদী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমরা ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এর কাছে এলাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত পড়ার আগে। তখন তিনি নামাযরত ছিলেন। তখন আমরা মসজিদের শেষ মাথায় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লাম। তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলাম। {শরহু মাআনিল আসার, হাদীস নং-২০৪৬}
الشعبي يقول : كان مسروق يجىء الى القوم وهم في الصلاة ولم يكن ركع ركعتي الفجر فيصلى ركعتين في المسجد ثم يدخل مع القوم في صلاتهم
শাবী থেকে বর্ণিত। মাসরূক লোকদের কাছে এমন সময় এলেন যখন তারা নামায পড়ছিল। তিনি সে সময় ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়েন নি। তাই তিনি মসজিদে দুই রাকাত [সুন্নত] পড়লেন,তারপর লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেন। {তাহাবী শরীফ,হাদীস নং-২০৪৮}
يزيد بن إبراهيم عن الحسن : أنه كان يقول إذا دخلت المسجد ولم تصل ركعتي الفجر فصلهما وان كان الإمام يصلى ثم ادخل مع الإمام
ইয়াযিদ বিন ইবরাহীম হাসান [বসরী রহঃ} থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, তুমি যদি এমতাবস্থায় মসজিদে প্রবেশ কর যে, তুমি ফজরের দুই রাকাত [সুন্নত] পড়নি, তাহলে তা পড় যদিও ইমাম নামায পড়াচ্ছে। তারপর ইমামের সাথে শরীক হও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২০৫০}
رجل انتهى إلى الإمام والناس فى صلاة الفجر، إن خشى أت تفوته ركعة من الفجر بالجماعة، ويدرك ركعة صلى سنة الفجر ركعتين عند باب المسجد، ثم دخل المسجد، فيصلى مع القوم، وإن خاف أن تفوته الركعتان جميعا دخل مع القوم فى صلاتهم (تاتارخانية-2/308، رقم-2511، الهداية-1/152، رد المحتار، زكريا-2/510، كرتاشى-2/57، العرف الشاذى على هامش الترمذى-97)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– [email protected]