প্রচ্ছদ / আনন্দ/বিনোদন / স্কুল কলেজে ছাত্রদের থেকে নেয়া বিভিন্ন ফান্ডের টাকা শিক্ষকদের জন্য গ্রহণ করা কি জায়েজ?

স্কুল কলেজে ছাত্রদের থেকে নেয়া বিভিন্ন ফান্ডের টাকা শিক্ষকদের জন্য গ্রহণ করা কি জায়েজ?

প্রশ্ন

প্রশ্নকারীর নাম: এস.এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন

ঠিকানা: খরমপুর, শেরপুর টাউন

জেলা/শহর: শেরপুর সদর, শেরপুর।

দেশ: বাংলাদেশ

প্রশ্নের বিষয়: শিক্ষা প্রিতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা শিক্ষকদের গ্রহন প্রসঙ্গে

বিস্তারিত:
—————-
আসসালামু আলাইকুম।
আমি একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষকদের বেতন, বোনাস সব কিছুই সরকার প্রদান করে। শক্ষার্থীদের কাছ থেকে গৃহীত সরকারি বেতনের অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট হতে প্রতি বছর সেশন ফি হিসেবে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন ফান্ডে নির্ধারিত পরিমান টাকা নেয়া হয়। এগুলো বেসরকারি ফান্ডে জমা থাকে। এর পরিমান  প্রতিটি  সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে প্রায় সমান, সামান্য কম বেশি হতে পারে। যেমন, খেলাধুলা, মিলাদ/পূজা, বাগান, পাঠাগার, মুদ্রন, বিবিধ, পরিচয়পত্র, স্কাউট/গার্ল গাইড, রেড ক্রিসেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, টিফিন, নিবীন বরণ/বিদায়, কম্পিউটার ইত্যাদি। এসকল ফান্ডের টাকা সাধারনত শিক্ষকরাই খরচ করেন, যে ফান্ডের টাকা সেই সংক্রান্ত কাজে। যেমন মিলাদ ফান্ডের টাকা দিয়ে বার্ষিক মিলাদ আয়োজন করা হয়, শিক্ষার্থীদের মাঝে মিলাদ উপলক্ষে আয়জিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার (তিলাও্যাত, হামদ/নাথ, আবৃত্তি ) পুরষ্কার প্রদান, তাবারক প্রদান কারার কাজে মিলাদ ফান্ডের টাকা খরচ করা হয়। খেলাধুলার টাকাও বার্ষিক ক্রীরানুষ্ঠানের আয়োজনে ও পুরষ্কার প্রদানে খরচ হয়।

এক্ষেত্রে প্রতিটি ফান্ডের জন্য একজন শিক্ষককে আহ্বায়ক ও আর দুই/তিনজনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং উক্ত কমিটিই যাবতীয় খরচ করেন, হিসেব রাখেন, তবে ফান্ডের তাকা প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়া উত্তলন করা যায় না কিন্তু প্রধান শিক্ষক চাইলে কমিটিকে না জাইয়েই টাকা উত্তলন করতে পারেন।

টিফিনের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া হয় এবং এর জন্যও কমিটি থাকে।

বিদ্যালয় পরিচালনার স্বার্থে অনেক সময় এক ফান্ডের টাকা অন্য ফাণ্ডে খরচ করা হয় ঘাটতি বা উদবৃত্ত থাকা স্বাপেক্ষে।

উদবৃত্ত টাকার সিংহভাগ প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন এবং কিছু অংশ সকল শিক্ষকদের মাঝে নগদ বা বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বাবদ বন্টন করা হয়।

তাছাড়াও,  মিলাদের তাবারক শক্ষার্থীরা জনপ্রতি এক প্যাকেট পায়, কিন্ত শিক্ষকরা পান ৫/১০ প্যাকেট।

খেলাধুলার পুরশকার বিজয়ী শিক্ষার্থীরা পায় ২০০/১৫০/১০০ তাকা সমমুল্যের অথচ শিক্ষকরা শুভেচ্ছা পুরস্কার নেন ১০০০/১৫০০ টাকা সমমুল্যের।

শিক্ষার্থীরা টিফিন খায় যেদিন যা দেয়া হয় তার একটি করে, আর শিক্ষক নেন দুটি বা তিনটি করে।

অন্যান্য কমিটির কাজ দৃশ্যমান হোক বা না হোক, প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, আহ্বায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ ফান্ডের টাকা বন্টন করে নেন। কিন্তু সেশন ফি-র টাকা শুধু শিক্ষার্থীদের।

অনেক শিক্ষককে বলতে শোনা যায় যে, ‘গত কমিটি খেলা থেকে ১০০০/- দিয়েছে, দেখি এবারের কমিটি কত দেয়’। বা ‘ এবার মিলাদ কমিটি জায়নামাজ দিলে নিবনা, অন্য কিছু দিতে হবে।’

অথচ শিক্ষকদের যদি এই উপহার না দেয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থিদের পুরষ্কারের মান, খাবারের মান আরও অনেক ভালো হয়।

এমতাবস্থায় আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
শরীয়তের আলোকে-
১। শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় কেনা টিফিন শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থির সমান বা বেশি হারে খেতে পারবেন কিনা।
২। খেলার ফান্ডের টাকা শিক্ষার্থীদের জন্য কম খরচ করে উদবৃত্ত তাকা থেকে শিক্ষকরা উপহার হিসেবে নগদ তাকা বা উপহার সামগ্রী গ্রহন করতে পারবেন কি না?
৩। মিলাদের ফান্ডের টাকা থেকে শিক্ষকরা উপহার বাঁ নগদ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন কি না? তাবারক বেশি খেতে পারবেন কি না?

আশা করি আমি আমার প্রশ্ন করতে পেরেছি।

উত্তর

وعليم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ টিফিনের টাকা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের টিফিনেই ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য উক্ত টিফিন গ্রহণ করা কিছুতেই জায়েজ নয়। সমান বা বেশি কিছুই পারবে না। যাদের জন্য টিফিন কেবল সেসব শিক্ষার্থীদের জন্যই তা ব্যবহার করা আবশ্যক।

খেলার ফান্ডের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পুরস্কার ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য খরচে ব্যবহার করবে। শিক্ষকদের জন্য উপহার ও টাকা গ্রহণ কিছুতেই বৈধ হবে না।

তবে  দায়িত্বশীল শিক্ষকদের কমিটি কর্তৃক যদি কোন ফী ধরা থাকে,তাহলে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে নির্ধারিত অর্থ গ্রহণ করা জায়েজ আছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সবার জন্য উক্ত ফান্ডের টাকা হাদিয়া বা উপহার হিসেবে গ্রহণ করা জায়েজ হবে না।

যেমন উদাহরণ স্বরূপ দৌড় প্রতিযোগিতা যে শিক্ষক পরিচালনা করবেন,  তার জন্য কথার কথা পাঁচশত  টাকা হাদিয়া নির্ধারণ করা হলো, এভাবে যদি কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন হিসেবে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে খেলাধুলা পরিচালনাকারীদের নির্ধারিত হারে হাদিয়া বা পারিশ্রমিক দেয়া যাবে। কিন্তু আমভাবে সকলকে কোন কাজ ছাড়াই এমনিতেই হাদিয়া প্রদান জায়েজ নয়।

নির্ধারিত ফান্ডের অর্থ কেবল সেই ফান্ডের প্রয়োজনেই ব্যবহার করতে হবে। অন্য কাজে তা ব্যবহার জায়েজ নয়। এক্ষেত্রেও দায়িত্বশীলদের জন্য যদি ফি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তাদের নির্ধারিত ফী পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা যাবে। কিন্তু ঢালাওভাবে সকলকে টাকা বন্টন করে দেয়া জায়েজ নয়।

এটা আমানতের খিয়ানত। যা সম্পূর্ণরূপে হারাম।

তবারকের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা উচিত। তবে দাতা ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কমবেশি করাতে কোন সমস্যা নেই।

ان الله يأمركم أن تؤدوا الأمانات إلى أهلها (سورة النساء-58)

ليس أداء الأمانة منحصرا فى مال الوديعة ونحو ذلك، بل كل حق لأحد على أحد أمانة يجب أدائه لأهله كما يدل عليه سبب نزول هذه الآية (تفسير مظهرى، سورة النساء، رقم الآية-58، قديم-2/148، جديد-2/364)

ولو فضل من الخشب ونحوه شيء فهو على وجهين، إن كان يقدر على أربابها يشاورهم القيم فى ذلك، وإن كان لا يقدر على أربابها فللقيم أن يفعل به ما يرى، وفى جامع الجوامع: وما فضل من الخشب ونحوه جاز صرفه فى قنطرة أخرى بجنبها بمشورة أربابها، أوقاف على قنطرة فيبس الوادى وصار الماء إلى شعبة أخرى من الأرض من  تلك المحلة،  واحتيج إلى عمارة القنطرة للوادى الجديد، فهل يجوز صرف القنطرة الأولى إلى الثانية، إن كانت القنطرة الثانية للعامة، وليس هناك قنطرة أخرى للعامة أقرب إلى القنطرة الأولى جاز (الفتاوى التاتاخرخانية-8/196، رقم-11623)

وقال النبى  صلى الله عليه  وسلم: المسلمون عند شروطهم،( صحيح البخارى-1/303)

وأما شرائط الصحة، فمنها، رضا المتعاقدين (الفتاوى الهندية-4/411، جديد-4/440)

والأجرة إنما تكون فى مقابلة العمل (رد المحتار،  زكريا-4/307، كرتاشى-3/156)

ليس لأحد أن  يأخذ ما غيره بلا سبب شرعى (شرح المجلة الأحكام  العدلية، رستم باز-1/62، رقم-97، قواعد الفقه-110، رقم-269، الموسوعة  الفقهية الكويتية-21/112)

لا يحل لمسلم أن يأخذ ما أخيه بغير حق (مجمع الزوائد-4/171)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *