প্রশ্ন
আমাদের দেশের একজন প্রসিদ্ধ দা’ঈ তিনি তার বয়ানে প্রায়ই বলেন যে, উম্মতে মুহাম্মদী জাহান্নামে যাবে। কিন্তু নবীর বরকতে তাদের শাস্তি হবে না। তাদের পায়ে বেড়ি হবে না। তাদের চেহারা কালো হবে না। জাহান্নামের আগুন তাদের কাছে আসতে পারবে না। বরং তারা জাহান্নামে ঘুমিয়ে থাকবে। শাস্তি টেরই পাবে না। ঘুম থেকে উঠার পর তাদের জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতে নেয়া হবে।
আসলে এসব কথার বাস্তবতা কতটুকু? দয়া করে দলীলসহ জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
এরকম কথার কোন ভিত্তি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে এমন কোন হাদীস বর্ণিত নেই।
তবে একথা ঠিক যে, উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে মুসলমানগণ জাহন্নামে চিরস্থায়ী হবে না। তারা আপন গোনাহের পরিমাণ অনুপাতে শাস্তি ভোগ করে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ يُعَذَّبُ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ التَّوْحِيدِ فِي النَّارِ حَتَّى يَكُونُوا فِيهَا حُمَمًا ثُمَّ تُدْرِكُهُمُ الرَّحْمَةُ فَيُخْرَجُونَ وَيُطْرَحُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْجَنَّةِ . قَالَ فَيَرُشُّ عَلَيْهِمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْمَاءَ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْغُثَاءُ فِي حِمَالَةِ السَّيْلِ ثُمَّ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ
জাবির (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিছু তাওহীদবাদী লোককেও জাহান্নামের শাস্তি প্রদান করা হবে। এমনকি তারা তাতে পুড়তে পুড়তে কয়লার মতো হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলার রহমতে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং জান্নাতের দরজায় নিক্ষেপ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতে বসবাসকারীরা তাদের উপর পানি ছিটিয়ে দিবে। যার ফলে তারা সজীব হয়ে যাবে যেমনটি বন্যার স্রোত চলে যাবার পর মাটিতে উদ্ভিদ গজায়। তারপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫৯৭]
হাদীসটি সহীহ।
وأهل الكبائر من أمة محمد صلى الله عليه وسلم فى النار لا يخلدون إذا ماتوا وهم موحدون….. وإن شاء عذبهم فى النار بعد له، ثم يخرجهم منها برحمته وشفاعة الشافعين من أهل طاعته، ثم يبعثهم إلى جنته (شرح العقيدة الطواوية، دار الكتب العلمية0369-370)
কয়েকটি তাফসীরের কিতাবে এ সংক্রান্ত একটি বর্ণনা আসছে। যাতে বলা হয়েছে যে, মুসলমান জাহান্নামীদের বেড়ি পড়ানো হবে না, তাদের চেহারা কালো হবে না, সেজদার জায়গায় জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না ইত্যাদি।
কিন্তু উক্ত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। মুনকার ও জাল বলে জারাহ তা’দীলের ইমামগণ মত দিয়েছেন। তাই এ বক্তব্যকে হাদীস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়।
ইবনুর জাওযী বলেন: এ হাদীস সহীহ নয়। [আলইলালুল মুতানাহিয়া-২/৯৪০]
ইবনে রজব বলেন, উক্ত হাদীস মুনকার। [আততাখয়ীফ মিনান নার-২৪৮]
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন, এটি মুনকার। [আলমু’তালিফু ওয়াল মুখতালিফু-২/৬৬৭]
সুতরাং এমন বানোয়াট বর্ণনার উপর ভিত্তি করে জাহান্নামের আযাব সংক্রান্ত বিশুদ্ধ বর্ণনার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করা জায়েজ নয়। তাই এহেন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com
হযরত আপনাদের এই প্রশ্নের মধ্যে ও উত্তর এর মধ্যে একটা লেখার ভুল হয়েছে। আর তা হল,
[উম্মতে মুহাম্মদী জান্নাতে যাবে। কিন্তু নবীর বরকতে তাদের শাস্তি হবে না।]
উপরের লেখার মধ্যে জান্নাত হবে না বরং জাহান্নাম হবে।
উত্তরেও এই একই ভুল আছে। দয়া করি ঠিক করলে ভালো হয়।
জাযাকাল্লাহ। ঠিক করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।