প্রশ্ন
অনেকে বন্ধক কৃত জমি থেকে উপকৃত হয়, এর আগে জেনেছি বাৎসরিক চুক্তিতে জমি ভাড়ায় নিলে এ জমি থেকেও উপকৃত হওয়া যাবে।
কিন্তু অনেকে এ বন্ধক জমি অধিক মূল্যে মূল মালিক বা অন্য কাউকে লিজ দিয়ে থাকে, যেমন আমি ২০ শতক জমি বাৎসরিক ১০০০ টাকা কর্তনে বন্ধক নিলাম।
এ জমি আবার অপর কাউকে বাৎসরিক ১০০০০ টাকায় ইজারা দিলাম। এমন দেয়া যাবে কি না?
প্রশ্নকর্তা: Abdullah Ar Rajib
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বন্ধক মানে রেহেন। যা ব্যক্তির কাছে আমানত হিসেবে থাকে। আর আমানতের বস্তু থেকে উপকার গ্রহণ জায়েজ নয়।
এ হিসেবে বন্ধকী বস্তু দিয়ে উপকার নেয়া যেমন লিজ দেয়া ইত্যাদি জায়েজ নয়।
إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا (سورة النساء-58)
فلو رهنه خاتما، فجعله فى خنصره فهو ضامن، لأنه متعد بالاستعمال (هداية-4/522)
তবে বন্ধক না নিয়ে যদি জমিটি ভাড়া নেয়া হয়, তাহলে তা থেকে উপকার গ্রহণ জায়েজ আছে।
সুতরাং বন্ধক জমি লিজ দেয়ার বৈধতা বিষয়ক প্রশ্ন করাটাই ভুল।
আর যদি বলেন যে বাৎসরিক ভাড়ার বিনিময়ে জমি গ্রহণ করেছে, তাহলে সেটিকে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধকী জমি নয়, বরং ইজারা চুক্তিকৃত জমি বা ভাড়াকৃত জমি বলতে হবে।
এ হলো, আপনার প্রশ্নের ভুল নিয়ে কথা। এবার বুঝুন আপনার মূল প্রশ্নের উত্তর।
আপনার প্রশ্নটি হলো, কারো কাছ থেকে বাৎসরিক ভাড়ার বিনিময়ে জমি নিয়ে, সেটিকে আরো বেশি মূল্যের ভাড়ায় দিয়ে লাভ করা জায়েজ আছে কি না? এটাই আপনার মূল প্রশ্ন।
এক্ষেত্রে তিন সূরত। যথা:
১
যদি জমি ভাড়া হিসেবে গ্রহণকারী টাকা তথা নগদ অর্থের বিনিময়ে জমি ভাড়া নেয়, তারপর জমিটি টাকা ছাড়া অন্য কোন বস্তুরর বিনিময়ে ভাড়া দেয়, বা প্রথম ভাড়া গ্রহণকারী জমি ভাড়া নিলো কোন বস্তুর বিনিময়ে, আর সে তারপর কাউকে ভাড়া দিল টাকার বিনিময়ে।
তাহলে এ সূরতে প্রথম ভাড়া গ্রহিতা প্রথম ভাড়ার চেয়ে কম বা বেশি যত ইচ্ছা ভাড়া দিতে পারে। এ সূরত জায়েজ।
২
যদি প্রথম ভাড়া গ্রহিতা জমি ভাড়া নেবার পর উক্ত জমিতে কোন উন্নয়ের কাজ করে, যেমন কোন কাঠামো তৈরী করলো, বা তাতে মাটি ভরাট করলো, বা ঘর বানালো, রং করালো ইত্যাদি কাজ করে। অর্থাৎ প্রথম ভাড়া নেয়ার পর তাতে ইনভেষ্ট করে থাকে, তাহলে উক্ত ভাড়া গ্রহিতার জন্য অন্য কাউকে বেশি দামে ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন জায়েজ আছে।
৩
যদি প্রথম ভাড়া গ্রহিতা নগদ অর্থ তথা টাকার বিনিময়ে জমি ভাড়া করে, তারপর কোন পরিবর্তন করা ছাড়াই এর চেয়ে বেশি মূল্যে উক্ত জমি ভাড়া দেয়, তাহলে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ তার জন্য জায়েজ হবে না। বরং অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া টাকা দান করে দেয়া আবশ্যক। তবে সমমানে বা কমমূল্যে ভাড়া দিতে পারবে। বেশি মূল্যে পারবে না।
فإن آجر بأكثر مما استأجر به من جنس ذلك ولم يزد فى الدار شيئا ولا آجر شيئا من ماله آخر من ماله مما يجوز عقد الإجارة عليه لا يطيب له الزيادة، وفى شرح الطحطاوى: ويتصدق به، وأما إذا زاد فى الدار شيئا بأن جصصها أو طينها، أو ما أشبه ذلك، أو آجر مع ما استأجر شيئا من ماله يجوز أن يعقد عليه عقد الإجارة يطيب له الزيادة، وكذلك إذا آجره بمجلس آخر يطيب له الزيادة (الفتاوى التاتارخانية-15/50، رقم-22115)
فى الدر المختار: وَلَوْ آجَرَ بِأَكْثَرَ تَصَدَّقَ بِالْفَضْلِ إلَّا فِي مَسْأَلَتَيْنِ: إذَا آجَرَهَا بِخِلَافِ الْجِنْسِ أَوْ أَصْلَحَ فِيهَا شَيْئًا
وفى رد المحتار: أَيْ جِنْسِ مَا اسْتَأْجَرَ بِهِ وَكَذَا إذَا آجَرَ مَعَ مَا اسْتَأْجَرَ شَيْئًا مِنْ مَالِهِ يَجُوزُ أَنْ تُعْقَدَ عَلَيْهِ الْإِجَارَةُ فَإِنَّهُ تَطِيبُ لَهُ الزِّيَادَةُ كَمَا فِي الْخُلَاصَةِ. (قَوْلُهُ أَوْ أَصْلَحَ فِيهَا شَيْئًا) بِأَنْ جَصَّصَهَا أَوْ فَعَلَ فِيهَا مُسَنَّاةً وَكَذَا كُلُّ عَمَلٍ قَائِمٍ؛ لِأَنَّ الزِّيَادَةَ بِمُقَابَلَةِ مَا زَادَ مِنْ عِنْدِهِ حَمْلًا لِأَمْرِهِ عَلَى الصَّلَاحِ كَمَا فِي الْمَبْسُوطِ (رد المحتار، كتاب الإجارة، باب ما يجوز من الإجارة وما يكون خلافا فيها، زكريا-9/38، كرتاشى-6/29)
وإن آجرها بأكثر مما استأجرها فهى جائزة أيضا إلا أنه إن كانت الأجرة الثانية من الأجرة الأولى، فإن زيادة لا تطيب له ويتصدق بها (الفتاوى الهندية-4/425)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com