প্রশ্ন
From: Sharmin Hasan
বিষয়ঃ মানুষ কি কখনো জান্নাত অথবা জাহান্নাম থেকে বিলীন হয়ে যাবে?
প্রশ্নঃ
হাদিসে এসেছে আত্মহত্যাকারী চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। কিন্ত এই চিরকাল মানে আসলে দীর্ঘকাল বোঝানো হয়েছে। চিরকাল বলতে চিরস্থাহি সময়কে বোঝানো হয়নি।
আবার মৃত্যুর পরের জীবনে মুমিনরা চিরকাল জান্নাতে এবং কাফেররা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে বলা হয়েছে। এই চিরকাল মানে কি চিরস্থায়িত্ব বোঝানো হয়েছে নাকি দীর্ঘস্থাহিত্ব বোঝানো হয়েছে?
দয়া করে একটু কুর’আন ও হাদিসে ব্যবহৃত আরবি শব্দ বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে বলবেন। কিছু দিন আগে আমি ইবনুল কায়্যিমের ‘আর রুহ’ বইটির বাংলা অনুবাদ পড়ছিলাম। ওখানে ‘রুহ কি নশ্বর নাকি অবিনশ্বর’ এই পরিচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ” রুহ এর ধ্বংস হওয়া ধ্রুব সত্য”। জানিনা এই লাইন দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এই লাইন এর মানে কি দাঁড়ায় না যে, রুহ এক সময় বিলীন হয়ে যাবে? মানুষ কি কখনো জান্নাত অথবা জাহান্নাম থেকে বিলীন হয়ে যাবে?
দয়া করে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে উপকার করবেন। জাযাকাল্লাহ খাইর।
(প্লিজ প্লিজ প্লিজ যত তাড়াতাড়ি পারেন উত্তর জানাবেন। বিষয়টা মানসিক ভাবে পীড়া দিচ্ছে আমাকে)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ঈমানদার জান্নাতে প্রবেশ করার পর সেখানে চিরকাল বা চিরস্থায়ী থাকবে। আর কাফের জাহান্নামে প্রবেশ করার পর চিরকাল বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। এতে সন্দেহ করার কিছু নেই।
তবে গোনাহগার মুমিন জাহান্নামে যাবে। আত্মহত্যাকারী মুসলিমও জাহান্নামে যাবে। কিন্তু তারা মুমিন হবার কারণে দীর্ঘস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী শাস্তি ভোগ করে আবার জাহান্নাম মুক্ত হয়ে জান্নাতী হবে।
পড়তে পারেন: আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে?
যে বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে কোন কিছু বলেননি। এসব বিষয়ে অহেতুক ঘাঁটাঘাঁটি ও চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই।
রূহ। এটি আল্লাহর একটি আদেশ। রূহের মৃত্যু আছে কি নাই? এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। একদলের মতে মৃত্যু আছে। আরেক দলের মতে মৃত্যু নেই।
এ বিষয়ের উপর আমাদের আকীদা ও ঈমানের কোন সম্পর্ক নেই।
রূহ আছে। রূহ থাকলে মানুষ জীবিত থাকে। রূহ শরীর থেকে চলে গেলে মৃত্যু আসে। এটা ধ্রুব সত্য। মৃত্যুর পর রূহ বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হয়। তাই কবরে আজাব ও নিয়ামতের অনুভূতি পাওয়া যায়।
এসব বিষয় আমাদের ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত। এ বিষয়ে জানা ও বিশ্বাস করা জরুরী।
কিন্তু রূহের মৃত্যু আছে কি নাই? এ বিষয়ে জানা ও বিশ্বাস করা জরুরী কোন বিষয় নয়। তাই এ বিষয়ে অহেতুক চিন্তা ভাবনা করার কোন প্রয়োজন নেই।
أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٤٦:١٤]
তারাই জান্নাতের অধিকারী! তারা তথায় চিরকাল থাকবে। তারা যে কর্ম করত, এটা তারই প্রতিফল। [সূরা আহক্বাফ-১৪]
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ [٦٤:١٠]
আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, তারা তথায় অনন্তকাল থাকবে। কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল এটা। [সূরা তাগাবুন-১০]
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا [١٧:٨٥]
তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। [সূরা বনী ইসরাঈল-৮৫]
واختلف فى حقيقة الروح، فقيل: إنه جسم لطيف شابك الجسد مشابكة الماء بالعود الأخضر أجرى الله تعالى العادة بأن يخلق الحيوة ما استمرت هى فى الجسد، فإذا فارقته توقت المدة الحياة (شرح فقه الأكبر-124)
إن مذهب سلف الأمة وأئمتها أن الميت إذا مات يكون فى نعيم، أو عذاب، وإن ذلك يحصل لروحه وبدنه، وإن الروح تبقى بعد مفارة البدن منعمة أو معذبة (الروح لابن القيم-96)
وَاخْتَلَفَ النَّاسُ: هَلْ تَمُوتُ الرُّوحُ أَمْ لَا؟ فَقَالَتْ طَائِفَة: تَمُوتُ؛ لِأَنَّهَا نَفْسٌ، وَكُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَة الْمَوْتِ، وَقَدْ قَالَ تَعَالَى: {كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ} {وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ} وَقَالَ تَعَالَى: {كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ} قَالُوا: وَإِذَا كَانَتِ الْمَلَائِكَة تَمُوتُ، فَالنُّفُوسُ الْبَشَرِيَّة أَوْلَى بِالْمَوْتِ. وَقَالَ آخَرُونَ: لَا تَمُوتُ الْأَرْوَاحُ، فَإِنَّهَا خُلِقَتْ لِلْبَقَاءِ، وَإِنَّمَا تَمُوتُ الْأَبْدَانُ. قَالُوا: وَقَدْ دَلَّ عَلَى ذَلِكَ الْأَحَادِيثُ الدَّالَّة عَلَى نَعِيمِ الْأَرْوَاحِ وَعَذَابِهَا بَعْدَ الْمُفَارَقَة إِلَى أَنْ يُرْجِعَهَا اللَّهُ فِي أَجْسَادِهَا.
وَالصَّوَابُ أَنْ يُقَالَ: مَوْتُ النُّفُوسِ هُوَ مُفَارَقَتُهَا لِأَجْسَادِهَا وَخُرُوجُهَا مِنْهَا، فَإِنْ أُرِيدَ بِمَوْتِهَا هَذَا الْقَدْرُ، فَهِيَ ذَائِقَة الْمَوْتِ، وَإِنْ أُرِيدَ أَنَّهَا تُعْدَمُ وَتَفْنَى بِالْكُلِّيَّة، فَهِيَ لَا تَمُوتُ بِهَذَا الِاعْتِبَارِ، بَلْ هِيَ بَاقِيَة بَعْدَ خَلْقِهَا فِي نَعِيمٍ أَوْ فِي عَذَابٍ، كَمَا سَيَأْتِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ تَعَالَى. وَقَدْ أَخْبَرَ سُبْحَانَهُ أَنَّ أَهْلَ الْجَنَّة {لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى}، وَتِلْكَ الْمَوْتَة هي مُفَارَقَة الأرُّواحِ لِلْأجَسَادِ. وَأَمَّا قَوْلُ أَهْلِ النَّارِ: {رَبَّنَا أَمَتَّنَا اثْنَتَيْنِ}، وَقَوْلُهُ تَعَالَى: {كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ} – فَالْمُرَادُ: أَنَّهُمْ كَانُوا أَمْوَاتًا وَهُمْ نُطَفٌ فِي أَصْلَابِ آبَائِهِمْ وفي أَرْحَامِ أُمَّهَاتِهِمْ، ثُمَّ أَحْيَاهُمْ بَعْدَ ذَلِكَ، ثُمَّ أَمَاتَهُمْ، ثُمَّ يُحْيِيهِمْ يَوْمَ النُّشُورِ، وَلَيْسَ فِي ذَلِكَ إِمَاتَة أَرْوَاحِهِمْ قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَة، وَإِلَّا كَانَتْ ثَلَاثَ مَوْتَاتٍ.
وَصَعْقُ الْأَرْوَاحِ عِنْدَ النَّفْخِ فِي الصُّوَرِ لَا يَلْزَمُ مِنْهُ مَوْتُهَا، فَإِنَّ النَّاسَ يُصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَة إِذَا جَاءَ اللَّهُ لِفَصْلِ الْقَضَاءِ، وَأَشْرَقَتِ الْأَرْضُ بِنُورِه، وَلَيْسَ ذَلِكَ بِمَوْتٍ (شرح العقيدة الطحاوية-391-392)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী, নরসিংদী।
ইমেইল– [email protected]