প্রশ্ন
From: shahnur roshid
বিষয়ঃ সাহাবা চরিত কিতাবের প্রতি অপবাদ
প্রশ্নঃ
একজন জাকির নায়েকের ভক্ত আমাকে প্রায় জ্বালাতন করে। হাফেজ জাকারিয়া রহ: কর্তৃক রচিত সাহাব চরিত কিতাবে,২৪০,২৪১ নম্বর পৃষ্ঠায়,১২ তম অধ্যায়ের ৬,৭ নম্বর ঘটনায় বলা আছে হযরত ইবনে যোবায়ের রা: এবং হযরত আবু ওবায়দা রা:
রাসুল সা: এর রক্ত পান করেছিলেন। ।
ওই লোকটার কথা হলো এটা একটা মিথ্যা এবং বানোয়াট কুফরি আকিদার ঘটনা।
আমার প্রশ্ন হল আসলেই ঘটনা গুলো কতটুকু সত্য এবং এগুলো অন্য কোন কিতাবে পাওয়া যায় কিনা? ?
ধন্যবাদ।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কুয়ার ব্যাঙ এর কাছে যেমন কুয়ার উপরে দেখা আকাশটাই পুরো পৃথিবী। তেমনি অজ্ঞ লা মাযহাবীদের কাছে তাদের পড়া দুই একটা বাংলা বই আর কিছু সীমিত জ্ঞানের অধিকারী শায়েখদের লেকচারই ইসলাম। এতটুকুই দ্বীন।
ইসলামের সুবিশাল ভান্ডার। কুরআন ও হাদীসের সীমাহীন সমুদ্র বিষয়ে তাদের অজ্ঞতাই এমন বক্তব্য দেয়ার কারণ।
বিশুদ্ধ সুত্রে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতকে মিথ্যা বানোয়াট ও কুফরী বলা অজ্ঞতার চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা ছাড়া আর কী হতে পারে?
হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাঃ কর্তৃক রাসূল সাঃ এর রক্ত পান করার ঘটনা নিম্ন বর্ণিত কিতাবে রয়েছে। যথা-
১- মুস্তাদরাকে হাকেম-৩/৫৫৩
২- সুনানুল কুবরা লিলবায়াহাকী-৭/৬৭
৩- সিয়ারু আলামিন নুবালা-৩/৩৬৬
৪- মাযমাউজ যাওয়াদ-৮/২৭০
৫- কানযুল উম্মাল-১৩/৪৬৯
৬-আলখাসায়েলুল কুবরা লিসসুয়ুতী-২/২৫২
৭-আলইসাবাহ-২/৩১০
৮- হিলয়াতুল আওলিয়া-১/৩৩০
উক্ত বর্ণনা বিষয়ে মুহাদ্দিসীনদের মন্তব্য
# হাফেজ নূরুদ্দীন হায়সামী রহঃ এ ঘটনাকে রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্টের অধ্যায়ে বর্ণনা করে বলেনঃ এটি তাবারানী ও বাজ্জারের বর্ণনা। আর মুসনাদে বাজ্জারের সমস্ত বর্ণনাকারী সহীহ এর রাবী। হুনাইদ বিন কাসেম রহঃ ছাড়া, তবে সেও সেকা তথা গ্রহণযোগ্য রাবী। {মাযমাউজ জাওয়েদ-৮/২৭০}
# ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর রাঃ কর্তৃক রাসূল সাঃ এর রক্ত পান করার ঘটনাটি হযরত আসমা বিনতে আবী বকর রাঃ এবং হযরত সালমান ফারসী রাঃ থেকেও একাধিক সনদে বর্ণিত। [সুনানুল কুবরালিল বায়হাকী-৭/৬৭}
# হাফেজ শামসুদ্দীন জাহাবী রহঃ বলেনঃ এ বর্ণনাটিকে ইমাম আবী ইয়ালা স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন, এবং লিখেছেন যে, হুনাইদ রহঃ বর্ণনাকারীর উপর কেউ জরাহ করেছেন বলে আমার জানা নেই। {সিয়ারু আলামিন নুবালা-২/৩৬৬}
# আল্লামা আলী মুত্তাকী হানাফী রহঃ এ ঘটনা বর্ণনা করে বলেনঃ এ বর্ণনার সকল রাবী সেকা তথা গ্রহণযোগ্য। {কানযুল উম্মাল-১৩/৪৬৯}
হযরত মালিক বিন সিনান রাঃ কর্তৃক রাসূল সাঃ এর রক্ত পানের ঘটনা নিম্নবর্ণিত কিতাবে বর্ণিত। যথা-
১- হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী শাফেয়ী রহঃ এ ঘটনাটি ইবনে আবী আসেম, বাগবী, সহীহ ইবনুস সুকুন এবং সুনানে সাঈদ বিন মানসুরের হাওয়ালায় নকল করেন। {আল ইসাবাহ-৩/৩২৫, মিশর থেকে প্রকাশিত}
২-গায়রে মুকাল্লিদদের প্রসিদ্ধ মাদরাসা জামিয়াতুল উলুম আলআসরিয়্যা থেকে প্রকাশিত মুখতাসার সীরাতে রাসূল সাঃ লিইবনে আব্দুল ওহাব নজদী-৪০২}
মোটকথা
উভয় ঘটনাই সনদযুক্ত। তাই দলিল ছাড়া এ ঘটনা দু’টি অস্বিকার করতে পারি না। এছাড়া প্রবাহিত রক্ত নাপাক হওয়া সম্পর্কিত আয়াত এ ঘটনা দু’টি সংঘটিত হওয়ার আগের ঘটনা। প্রখ্যাত তাফসীরবীদ আল্লামা কুরতুবী রহঃ বলেন যে, এ প্রবাহিত রক্ত নাপাক হওয়া সম্পর্কিত আয়াত নাজীল হয়েছে বিদায় হজ্বের দিন আরাফার ময়দানে। {তাফসীরে কুরতুবী-২/২১৬}
হাফেজ ইবনে আব্দিল বার মালেকী রহঃ লিখেন যে, মালিক বিন সিনান রাঃ গাযওয়ায়ে ওহুদে শহীদ হয়েছেন। {আলইসতিয়াব মাআল ইসাবাহ-৩/৩৫০}
আর ওহুদ যুদ্ধে এমন সাহাবীগণও শহীদ হয়েছেন যারা মদ পান করতেন। কারণ তখনো মদ হারাম হওয়া সংক্রান্ত আয়াত নাজীল হয়নি।
তেমনি রক্ত নাপাক হওয়া সংক্রান্ত আয়াত নাজীল না হওয়ার কারণে সাহাবীদ্বয় রক্ত পান করেছেন। তাই এতে প্রশ্ন করার কোন অবকাশই বাকি থাকে না। যদি প্রশ্ন করে থাকে কোন গায়রে মুকাল্লিদ তাহলে তাদের জন্য এটা জরুরী যে, তারা এটা প্রমাণ করবেন যে, সাহাবীদ্বয় রক্ত পান করেছেন রক্ত পান নিষিদ্ধ হওয়ার আয়াত নাজীলের পর। যদি না পারে, তাহলে এ প্রোপাগান্ডা বন্ধ করা উচিত।
দ্বিতীয় কথা হল
জমহুর ওলামাদের মতে রাসূল সাঃ এর ফুযালা তথা উচ্ছিষ্ট অংশ পাক। তাই আর কোন প্রশ্নই বাকি থাকে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com