প্রচ্ছদ / ঈমান ও আমল / ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা কি হযরত উমর রাঃ সারা বছর পড়তেন?

ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা কি হযরত উমর রাঃ সারা বছর পড়তেন?

প্রশ্ন

From: মাহমুদ
বিষয়ঃ কুনূতে নাযেলা

প্রশ্নঃ
উমার রাঃ এর আমল হিসেবে আমাদের মসজিদে ফজর নামাজে সারা বৎসর কুনূতে নাযেলা পড়া হয়।

জানার বিষয় হল এটা উমার রাঃ থেকে প্রমানিত কি না ,শরিয়তে এর বিধান কী এবং হাদীসে কুনুতে নাযেলা কোনটি। দলীল সহ উল্লেখ করলে উপকৃত হব।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বি’রে মাউনায় সত্তরজন সাহাবীকে ধোঁকা দিয়ে নিয়ে হত্যা করায় হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বদদুআ করে এক মাস লাগাতার ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়েছেন।

সুতরাং কেবল মুসলমানদের ঘোর বিপদের সময় কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব। এটাই বিশুদ্ধ মত।

সারা বছর কুনুতে নাজেলা পড়ার প্রমাণ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাগণ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়।

তবে যদি পড়ে তাহলে জায়েজ আছে। নাজায়েজ বা হারাম নয়।

আর উমর রাঃ সারা বছর ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়েছেন মর্মে কোন প্রমাণ নেই।

عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْجَعِيِّ سَعْدِ بْنِ طَارِقٍ، قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي: يَا أَبَتِ إِنَّكَ قَدْ صَلَّيْتَ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ وَعَلِيٍّ هَاهُنَا بِالْكُوفَةِ، نَحْوًا مِنْ خَمْسِ سِنِينَ، «فَكَانُوا يَقْنُتُونَ فِي الْفَجْرِ؟» فَقَالَ: أَيْ بُنَيَّ مُحْدَثٌ

আবূ মালিক আল-আশজাঈ সা’দ ইবনু তারেক (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা! আপনি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আবূ বাকর , উমার ও উসমান (রাঃ) এর পিছনে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন এবং এই কুফায় আলী -এর পেছনে প্রায় পাঁচ বছর সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তাঁরা কি ফজরের সালাতে দুআ কুনূত পড়তেন? তিনি বলেন, হে বৎস! এটা তো নতুন শুরু হল। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২৪১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৪৭৪, আলমু’জামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৫২১৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৭৮, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪০২, মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৬৯৬১]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: «لَمْ يَقْنُتِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا شَهْرًا وَاحِدًا، لَمْ يَقْنُتْ قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাজেলা পড়েছেন এক মাস। এর আগে ও পরে কখনো কুনুতে নাজেলা পড়েননি। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১৫৬৯]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنَّهُ لَمْ يَقْنُتْ فِي الْفَجْرِ إِلَّا شَهْرًا وَاحِدًا، حَارَبَ حَيًّا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، قَنَتَ يَدْعُو عَلَيْهِمْ، لَمْ يُرَ قَانِتًا قَبْلَهَا وَلَا بَعْدَهَا»

ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযে কেবল এক মাস কুনুতে নাজেলা পড়েছেন। যাতে জীবিত মুশরিকদের বিরুদ্ধে তিনি বদদুআ করেছেন। এর আগেও পরে কখনোই তিনি কুনুতে নাজেলা পড়েননি। [কিতাবুল আছার লিআবী ইউসুফ, হাদীস নং-৩৪৯]

عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ، «أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ لَمْ يَقْنُتْ فِي الْفَجْرِ»

আমর বিন মাইমূন রহঃ বলেন, হযরত উমর রাঃ ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়তেন না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং-৬৯৬২]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، «أَنَّ الْأَسْوَدَ، وَعَمْرَو بْنَ مَيْمُونٍ، أَنَّهُمَا صَلَّيَا خَلْفَ عُمَرَ الْفَجْرَ فَلَمْ يَقْنُتْ»

ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন, আসওয়াদ এবং আমর বিন মাইমূন রহঃ উমর রাঃ এর পিছনে ফজর  নামায পড়েছেন। তখন উমর রাঃ কুনুতে নাজেলা পড়েননি। [মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং-৬৯৬৫]

عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ عُمَرَ «أَنَّهُمَا كَانَا لَا يَقْنُتَانِ فِي الْفَجْرِ»

সাঈদ বিন যুবায়ের রহঃ থেকে বর্ণিত। ইবনে আব্বাস রাঃ এবং ইবনে উমর রাঃ তারা উভয়ে ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়তেন না। [মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং-৬৯৭০]

عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، «أَنَّ عُمَرَ كَانَ لَا يَقْنُتُ فِي الْفَجْرِ»

সাঈদ বিন যুবায়ের রহঃ বলেন, উমর রাঃ ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়তেন না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং-৬৯৭২]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، «أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ لَا يَقْنُتُ فِي الْفَجْرِ»

ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন, উমর রাঃ ফজরের নামাযে কুনুতে নাজেলা পড়তেন না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা নং-৬৯৭৩]

কুনুতে নাজেলা

اللَّهُمَّ اهْدِنَا فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنَا فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنَا فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لَنَا فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنَا شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ )سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2960

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ) سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2962

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *