প্রচ্ছদ / কুরবানী/জবেহ/আকীকা / কুরবানীর মান্নতের গোশত মান্নতকারী খেতে পারবে?

কুরবানীর মান্নতের গোশত মান্নতকারী খেতে পারবে?

প্রশ্ন

হজরত মুফতি সাহেব। September 7, 2016 তারিখে
আহসানুল ফতওয়া এর উদ্ধৃতি দিয়ে মাসআলা আহলে হক মিডিয়ার ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেছেন।
মাসআলালটি ছিল যে,
মান্নতের কুরবানির গোস্ত মান্নতকারী খেতে পারবে, এবং মান্নতকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করেছেন।

যেমন আহসানুল ফতওয়াতে লেখা আছে।
কিন্তু ২০১৮ সালে শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার এর পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাইদ সাহেবএর দস্তখতকৃত একটি ইস্তেফতাহ প্রকাশ হয়েছে ।
সেখানে লেখা আছে যে মান্নতকৃত গোস্ত মান্নতকারী খেতে পারবে না এবং আহসানুল ফতওয়াওয়ালা এখানে তার নিজস্ব মত উল্লেখ করছেন যা কেউ গ্রহণ করেন নাই ।

হজরতের কাছে জানার বিষয় হচ্ছে আমরা এখন কোন মাসআলাকে মানব বা কোনটা সঠিক মনে করব?
আপনাদেরটা নাকি মুফতি মিযান সাহেবেরটা ?
জানিয়ে উপকৃত কবরে ইনশাআল্লাহ…।

প্রশ্নকারী- junaid ahmad

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

এ মাসআলা বুঝার জন্য একথা বুঝা দরকার যে, জবাই সংশ্লিষ্ট নজর তথা মান্নত দুই ধরণের। যথা-

১- নজরে জবাহ। যাতে আসল হল পশু জবাই করা এবং গোশত সদকা করে দেয়াই মূল মাকসাদ। এ জবাইয়ের জন্য দিন এবং সময়ের পাবন্দী নেই।

২- নজরে উজহিয়্যাহ তথা মান্নতের কুরবানী। এর জন্য দু’টি শর্ত রয়েছে। যথা-

ক) এ নজরের দ্বারা তাকাররুব ইলাল্লাহ আসল উদ্দেশ্য হয়।

খ) এ নজর আদায়ের জন্য কুরবানীর দিনসমূহ হওয়া শর্ত। এর সাথে অন্তর্ভূক্ত থাকে গোশত খাওয়া এবং গোশত সদকা না করার বিষয়টিও।

আর তাকাররুব ইলাল্লাহ এর জন্য জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া ধনী গরীব সবার জন্যই জায়েজ।

সুতরাং সমাধান হল, নজরে জবাহ এর গোশত খাওয়া জবাইকারী এবং ধনী কারো জন্যই জায়েজ নয়।

আর নজরে উজহিয়্যাহ তথা কুরবানীর নজর করার গোশত খাওয়া নজরকারী এবং ধনী সবার জন্যই  জায়েজ। [ফাতাওয়া কাসিমিয়া-১৭/৮২-৮৩]

এ মাসআলাটিই আমরা ইতোপূর্বে এভাবে লিখেছি যে, যিনি কুরবানী করার মান্নত করেন, তার এর মান্নত দ্বারা উদ্দেশ্য কী?

যদি স্বাভাবিক কুরবানী করার মাকসাদ হয়, তথা প্রতি বছর কুরবানীর সময় যে কুরবানী দেয়া হয় এবং তার গোশত ভক্ষণ করা হয়, সেই কুরবানী মাকসাদ হয়, তাহলে এর গোশত মান্নতকারী খেতে কোন সমস্যা নেই।

আর যদি মাকসাদ হয়, এমন মান্নত, যার গোশত দান করে দিতে হয়, তাহলে সেই কুরবানীর গোশত মান্নতকারী এবং ধনী মানুষ খেতে পারবে না।

 

দুই সূরতের ভিন্ন হুকুম হওয়াটাই আমাদের কাছে দলীলের আলোকে অধিক শক্তিশালী বলে মনে হয়।

বিস্তারিত জানতে হলে দেখুন: ফাতাওয়া কাসিমিয়া-১৭/৭৯-৮৩]

খলীল আহমাদ সাহরানপুরী রহঃ ও উপরোক্ত মতটিই গ্রহণ করেছেন। [বজলুল মাযহুদ-৪/৭৬, জাদীদ-৯/৫৬৬-৫৬৭]

কাছাকাছি অভিমত পাওয়া যায় মুফতী মাহমূদ হাসান গঙ্গুহী রহঃ এর। দেখুন- ফাতাওয়া মাহমূদিয়া-১৭/৪৯২-৪৯৪, ঢাবেল।

 

إن الدماء أنواع ثلاثة: نوع يجوز لصاحبه أن ياكل منه بالإجماع ونوع لا يجوز له أن يأكل منه بالإجماع ونوع اختلف فيه، فالأول: دم الأضحية نفلا كان أو واجبا منذورا كان أو واجبا مبتدأ، والثانى: دم الإحصار وجزاء الصيد…… دم النذر بالذبح، والثالث دم المتعة والقران فعندنا يؤكل وعند الشافعى رحمه الله لا يؤكل (بدائع الصنائع، كتاب التضحية، باب يستحب فى الأضحية أن تكون سمينة-4\223-224)

وجملة الكلام فيه أن الدماء أنواع ثلاثة: نوع يجوز لصاحبه أن يأكل منه بالإجماع، ونوع لا يجوز له أن يأكل منه بالإجماع، ونوع اختلف فيه.

فالأول: دم الأضحية نفلًا كان أو واجبًا، منذورًا كان أو واجبًا مبتدءًا.

والثاني: دم الإحصار وجزاء الصيد ودم الكفارة الواجبة بسبب الجناية على الإحرام كلبس المخيط، وحلق الرأس، والجماع بعد الوقوف بعرفة، وغير ذلك من الجنايات، ودم النذر بالذبح.

والثالث: دم المتعة والقران فعندنا يؤكل، وعند الشافعي لا يُؤكل، ثم كل دم يجوز له أن يأكل منه لا يجب عليه أن يتصدق به بعد الذبح، إذ لو وجب عليه التصدق لما جاز له أن يأكل منه، وكل دم لا يجوز له أن يأكل منه يجب عليه أن يتصدق به بعد الذبح، إذ لو لم يجب لأدى إلى التسييب (بذل المجهود، كتاب الضحايا، باب حبس لحوم الأضاحى-9\566-567، قديم-4\76)

 

সুতরাং উপরোক্ত ফাতওয়াটি শুধুমাত্র ফক্বীহুন নফস মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রহঃ এর তাফাররুদ তথা একক মন্তব্য বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

আরও জানুন

ভুলে আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে করে সন্তান হয়ে গেলে করণীয় কী?

প্রশ্ন আসসালামুওয়ালাইকুম উস্তাজ, আমার আত্নীয় ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। অজ্ঞতা বসত আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *