প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আমি মাওঃ হুসাইন আহমাদ। লাখোহাটী সরদার পাড়া, দিঘলিয়া উপজেলা, খুলনা থেকে
সম্মানিত মুফতি সাহেব দাঃবাঃ
আমার প্রশ্ন হলো আমার মাসজিদের অধিকাংশ মুসল্লি দিন মজুর।
দীর্ঘদিন ধরে সুরা তারাবি পড়ে আসছে।
এ বছর নতুন কমিটি খতম তারাবি পড়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে করে মুসল্লিদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয়।
এ কারণে জুমার দিনে মুসল্লিদের থেকে রায় নিয়ে যেদিকে মুসল্লির রায় বেশি হবে সেই তারাবি পড়া হবে।
রায় নিয়ে তারাবি বাছাই করা কতটুকু শরিয়াত সম্মত?
এটা যদি একটু দ্রুত জানাতেন তাহলে মহল্লাবাসী নিজেদের ভিতর ফেৎনা থেকে বাঁচতে পারতো।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তারাবীহ নামাযে এক খতম কুরআন পড়াও সুন্নাতে মুআক্কাদা। মুসল্লিদের অলসতার কারণে উক্ত সুন্নত ছেড়ে দেয়া যাবে না।
সুতরাং রায়ের ভিত্তিতে সুন্নত তরক করার মানসিকতা খুবই গর্হিত ও অন্যায়। মসজিদ কমিটির উচিত সুযোগ থাকলে খতমে তারাবীর ব্যবস্থা করা। এতে করে অধিকাংশ মুসল্লিগণ রাজি না থাকলেও।
কুরআনের মাসে নামাযের মাঝে পূর্ণ কুরআন শোনার মত সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া খুবই হতভাগা হবার আলামত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْرَضُ عَلَيْهِ الْقُرْآنُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ، فَلَمَّا كَانَ الْعَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ،
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রতি রমজানে একবার কুরআন পেশ বা তিলাওয়াত করা হতো, তবে তার ইন্তিকালের বছর তার কাছ তা দু’বার পেশ বা তিলাওয়াত করা হয়। [ সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৭৯৩৮,সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৬৯]
عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، قَالَ: ” دَعَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ بِثَلَاثَةِ قُرَّاءٍ فَاسْتَقْرَأَهُمْ، فَأَمَرَ أَسْرَعَهُمْ قِرَاءَةً أَنْ يَقْرَأَ لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِثَلَاثِينَ آيَةً، وَأَمَرَ أَوْسَطَهُمْ أَنْ يَقْرَأَ خَمْسًا وَعِشْرِينَ، وَأَمَرَ أَبْطَأَهُمْ أَنْ يَقْرَأَ عِشْرِينَ آيَةً “
হযরত উসমান নাহদী রহঃ বলেন, হযরত উমর রাঃ তিন ক্বারীকে ডাকলেন। তারপর তাদের কিরাত শুনলেন। দ্রুত তিলাওয়াতকারীকে আদেশ করলেন রমজানে (তারাবীর মাঝে) লোকদের (প্রতি রাকাতে) ত্রিশ আয়াত করে পড়ার, মধ্যম ধরণের তিলাওয়াতকারীকে পঁচিশ আয়াত এবং ধীরে তিলাওয়াতকারীকে বিশ আয়াত পড়ার হুকুম দিলেন। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩০০৪, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪২৯৫]
عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: «مَنْ أَمَّ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ فَلْيَأْخُذْ بِهِمُ الْيُسْرَ، فَإِنْ كَانَ بَطِيءَ الْقِرَاءَةِ فَلْيَخْتِمِ الْقُرْآنَ خَتْمَةً، وَإِنْ كَانَ قِرَاءَتُهُ بَيْنَ ذَلِكَ فَخَتْمَةٌ وَنِصْفٌ، فَإِنْ كَانَ سَرِيعَ الْقِرَاءَةِ فَمَرَّتَيْنِ»
হযরত হাসান বসরী রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি রমজানে লোকদের (তারাবীর) ইমামতী করে, সে যেন সহজতা অবলম্বন করে। যদি তার কিরাত ধীরে ধীরে হয়, তাহলে যেন এক খতম কুরআন পড়ে। যদি মধ্যম ধরণের হয়, তাহলে দেড় খতম। আর যদি দ্রুত হয়, তাহলে দুই খতম করবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-৫/২২২, হাদীস নং-৭৭৬১]
كَانَ مُحَمَّد بن إِسْمَاعِيل البُخَارِيّ إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ يجْتَمع إِلَيْهِ أَصْحَابه فيصلى بهم وَيقْرَأ فِي كل رَكْعَة عشْرين آيَة وَكَذَلِكَ إِلَى أَن يخْتم الْقُرْآن وَكَانَ يقْرَأ فِي السحر مَا بَين النّصْف إِلَى الثُّلُث من الْقُرْآن فيختم عِنْد السحر فِي كل ثَلَاث لَيَال
যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ এর বন্ধুরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবী] নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন। {হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬}
(وَالْخَتْمُ) مَرَّةً سُنَّةٌ وَمَرَّتَيْنِ فَضِيلَةٌ وَثَلَاثًا أَفْضَلُ. (وَلَا يُتْرَكُ) الْخَتْمُ (لِكَسَلِ الْقَوْمِ) (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الوتر والنوافل، مبحث صلاة التراويح-2/497)
السنة فى التراويح إنما هو الختم مرة، فلا يترك لكسل القوم (الفتاوى الهندية-1\130
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]