প্রশ্ন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ,
অবস্থানের দেশ: বাংলাদেশ
প্রশ্নের বিষয়: তালাক বিষয়ক দুইটি প্রশ্ন
আস সালামু আলাইকুম, আমি আপনার সাইটের নিয়মিত একজন পাঠক, আশা করি সর্বশক্তিমান আল্লাহ আপনার মেধা ও পরিশ্রমকে কবুল করবেন
আমার নিচের দুইটি প্রশ্নঃ
১) নিচের কথাটুকু মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র) সাহেবের বেহেশতি যেওর এর দ্বিতীয় ভলিউম থেকে নেয়া, সেখানে লিখা
— “স্বামী মুখে বলিল , ‘আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিলাম’ এতটুকু জোরে বলিয়াছে যে, নিজে এই শব্দগুলি শুনিয়াছে। এতটুকু বলাতেই তালাক হইয়া যাইবে। ……… ”
প্রশ্ন হলো , কেউ যদি তালাক দেবার শব্দ এমন ভাবে উচ্চারণ করে যে কোন শব্দ হয় না , যিনি উচ্চারণ করেছেন তিনি নিজেও কোন শব্দ শুনতে পাননি, কিন্তু তিনি জানেন যে তিনি কোন শব্দ ছাড়া তালাক শব্দটি উচ্চারণ করেছেন (যেমনটি আমরা অনেকেই জিকির এর সময় করি, কোন শব্দ ছাড়া), এই অবস্থায় তালাকের হুকুম কি ? তালাক কি পতিত হয় না কি হয় না এই ক্ষেত্রে ?
২) আপনাদের দুইটি লেখা পড়ে মনে খানিকটা বিভ্রান্তির জন্ম হয়েছে আমার মনে, দয়া করে একটু পড়ে দেখবেন
https://ahlehaqmedia.com/3216 — এই লিঙ্কে উত্তরে লিখা “……….ঠিক তেমনি তালাক শব্দ। এটি খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। …… ”
অন্যদিকে https://ahlehaqmedia.com/3216 — এই লিঙ্কে উত্তরে লিখা ” স্ত্রীকে তালাক দেবার নিয়ত করা ছাড়া এমনিতেই তালাক শব্দ উচ্চারণ করা দ্বারা কোন তালাক পতিত হয় না। ………. ”
একটিতে দেখতে পাচ্ছি নিয়ত না থাকলেও তালাক হয়ে যাবে বলে বলা হচ্ছে, আরেকটিতে বলা হচ্ছে নিয়ত না থাকলে তালাক হবে না
আমার শরীয়ত সম্পর্কে কম জ্ঞান থাকায় আমি এই প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ খানিকটা বিভ্রান্তির শিকার, আশা করি আপনি আমাকে এই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবেন
ধন্যবাদ
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মূলত লেখাগুলোত কোন বৈপরিত্ব নেই। তালাক সহীহ হবার জন্য কয়েকটি বিষয় শর্ত। যথা-
১- স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলা।
২-মুখ দিয়ে শব্দ করে উচ্চারণ করে তালাক দেয়া। বা লিখিত আকারে তালাক প্রদান করা।
উপরোক্ত দু’টি বিষয় থেকে কয়েকটি বিষয় বেরিয়ে যাচ্ছে-
১-স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করা ছাড়া এমনিতে তালাক শব্দ উচ্চারণ করার দ্বারা তালাক হবে না।
২-বিড় বিড় করে তালাক শব্দ উচ্চারণ করল, কিন্তু কোন শব্দ হল না, তাহলে তালাক হবে না।
কিন্তু নিয়ত ছাড়া স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক বলার দ্বারা তালাক হয়ে যাবে। যেহেতু এখানে উভয় শর্তই তথা স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলা, এবং তালাক শব্দ বলা উভয় শর্তই পাওয়া গেছে।
আর আপনার যে প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে সন্দেহ হয়েছে সেখানে, কিন্তু উক্ত ব্যক্তি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক দেয়নি, বরং মনের অজান্তে বিড় বিড় করে তালাক শব্দ বের হয়েছে। স্ত্রীকে তালাক দেবার উদ্দেশ্যে নয়। স্ত্রীর দিকে নিসবতও করা হয়নি। তাই এর দ্বারা তালাক হয়নি।
যাইহোক, “নিয়ত” শব্দটির দ্বারা সন্দেহ তৈরী হওয়ায় আমরা নিয়ত শব্দটি কেটে “নিসবত” শব্দটি জোড়ে দিলাম।
يشترط بالاتفاق القصد فى الطلاق، وهو إرادة التلفظ به ولو لم ينو فلا يقع طلاق فقيه يكره ولا طلاق حاك عن نفسه أو غيره لأنه لام يقصد معناه، بل قصد التعليم والحكاية، (الفقه الاسلام وادلته، كتاب الطلاق، باب شروط الطلاق-7/368)
لو كرر مسائل الطلاق بحضرة زوجته ويقول: أنت طالق ولا ينوى طلاقا لا تطلق، (فتح القدير، كتاب الطلاق، باب ايقاع الطلاق-4/4)
لَوْ قَالَ: امْرَأَةٌ طَالِقٌ أَوْ قَالَ طَلَّقْت امْرَأَةً ثَلَاثًا وَقَالَ لَمْ أَعْنِ امْرَأَتِي يُصَدَّقُ اهـ وَيُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّهُ لَوْ لَمْ يَقُلْ ذَلِكَ تَطْلُقُ امْرَأَتُهُ، لِأَنَّ الْعَادَةَ أَنَّ مَنْ لَهُ امْرَأَةٌ إنَّمَا يَحْلِفُ بِطَلَاقِهَا لَا بِطَلَاقِ غَيْرِهَا، فَقَوْلُهُ إنِّي حَلَفْت بِالطَّلَاقِ يَنْصَرِفُ إلَيْهَا مَا لَمْ يُرِدْ غَيْرَهَا لِأَنَّهُ يَحْتَمِلُهُ كَلَامُهُ، بِخِلَافِ مَا لَوْ ذَكَرَ اسْمَهَا أَوْ اسْمَ أَبِيهَا أَوْ أُمَّهَا أَوْ وَلَدَهَا فَقَالَ: عَمْرَةُ طَالِقٌ أَوْ بِنْتُ فُلَانٍ أَوْ بِنْتُ فُلَانَةَ أَوْ أُمُّ فُلَانٍ، فَقَدْ صَرَّحُوا بِأَنَّهَا تَطْلُقُ، وَأَنَّهُ لَوْ قَالَ: لَمْ أَعْنِ امْرَأَتِي لَا يُصَدَّقُ قَضَاءً إذَا كَانَتْ امْرَأَتُهُ كَمَا وَصَفَ (رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب سن بوش-3/248، وكذا فى الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الباب الثانى فى ايقاع الطلاق-1/358، وكذا فى قاضى خان على هامش الهندية-1/465، وكذا فى الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطلاق، نوع فى ايقاع بطريق الإضمار-3/280
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।