প্রচ্ছদ / নাম ও বংশ/নবজাতক / কতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে নামে আগে “হযরত” বলা যায়?

কতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে নামে আগে “হযরত” বলা যায়?

প্রশ্ন

নাম : সাহেদ সরকার

থানা:মনোহরদী, জেলা:নরসিংদী, ঢাকা

আমাদের প্রিয় নবী মোহাম্মদ ( সা:)  এর নামের পূর্বে হযরত লিখা হয়।

প্রশ্ন :  আমাদের চারপাশে আলেমদের নামের পূর্বে মুফতি, মাওলানা ব্যবহার করে। কিন্তু হযরত কথাটা কতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে বা কি ধরনের ডিগ্রী অর্জন করলে এই হযরত কথাটা লিখা বা ব্যবহার করা যায়, যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন খুবই উপকৃত হইতাম।

এই হযরত কথাটা তাদের নামের পূর্বে ব্যবহার করাটা কতটা গ্রহণযোগ্য।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনি আমাকে বলুনতো “মাননীয়” “সম্মানিত” “মহামান্য”জনাব, ইত্যাদি বিশেষণ কি ধরণের ডিগ্রি অর্জন করলে একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়?

প্রসিদ্ধ উর্দু অভিধান “ফিরুজুল লুগাত”এ “হযরত”শব্দের অর্থ করা হয়েছে উক্ত শব্দগুলো দিয়ে। সেখানে আরেকটি বিষয়ও লেখা হয়েছে, সেটি হল এটি সম্মানসূচক একটি শব্দ। {ফিরুজুল লুগাত-৩০৪}

এ উপমহাদেশে সম্মান বুঝাতে হযরত শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি কোন ব্যক্তি বিশেষ বা কোন ডিগ্রির সাথে খাস কোন শব্দ নয়। তাই যেকোন সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রেই তা ব্যবহার করা যাবে। এতে কোন সমস্যা নেই।

রাসূলে কারীম সাঃ ও যেহেতু আল্লাহ তাআলার পর সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিত্ব তাই তাঁর ক্ষেত্রেও “হযরত”শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নবীজী সাঃ এর ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহারের অর্থ এই নয় যে, এটি আর কারো জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, এ শব্দটি রাসূল সাঃ এর সাথে খাস কোন শব্দ নয়। যদি খাস শব্দ হতো তাহলে তা অন্য কারো জন্য তা ব্যবহার করা জায়েজ হতো না। যেমন খাতামুল মুরসালীন, খাতামুন্নবী, রাসূলে আরাবী, সাইয়্যিদুল কাউনাইন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইত্যাদি শব্দ রাসূল সাঃ এর সাথে খাস শব্দ। এসব অন্য কারো জন্য ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

যেকোন সম্মানিত ব্যক্তির বেলায়ই “হযরত”শব্দ ব্যবহার করা যাবে। এর জন্য কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

আলেমদের নামের আগে লোকেরা এ শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। এটি সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ। আর আলেম উলামাগণ সম্মানযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইলম -আমলী ও বয়সের দিক থেকে বড়দের সম্মান করার শিক্ষা রাসূল সাঃ দিয়েছেন। সেটি শব্দের সাথে ব্যবহারের মাধ্যমেও হতে হবে। আর আমাদের দেশের প্রচলন অনুযায়ী যেহেতু এ শব্দ দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়, তাই এটি আলেমদের ক্ষেত্রে ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ  اللَّهِ إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ، وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِي فِيهِ وَالْجَافِي عَنْهُ، وَإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ

হযরত আবূ মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, “বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কুরআনের ব্যাপারে খেয়ানতকারী নয়, এবং তা পরিত্যাগকারী নয় এমন কুরআনের ধারক বাহক [হাফেজ, কারী, আলেম, মুফাসসির, মুফতী প্রমূখ] দের সম্মান করা, এবং ন্যায়পরায়ন বাদশার সম্মান করা আল্লাহ তাআলাকে সম্মান করারই নামান্তর। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৮৪৩, আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-৩৫৭, মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-৭৩৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩০৭০, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৩৬, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৩১৬, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-২৪৩৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২১৯২২}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. আবু সাইদ ইবন মুখতার

    দারুণ উত্তর দিয়েছেন!
    প্রশ্নকারীর প্রশ্নে হাসি পেয়েছিল বটে। তবে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! তিনি প্রশ্ন করেছেন এটা খুব ইতিবাচক। আমাদের জন্য চিন্তার বিষয় হবে যখন মানুষ প্রশ্ন না করে, না জেনে যাচ্ছেতাই ভাববে ও বলে বেড়াবে!

    -জা’যাকুমুল্লাহ! 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *