প্রচ্ছদ / অপরাধ ও গোনাহ / নাবালেগ অবস্থায় কৃত গোনাহের জন্য করণীয় কী?

নাবালেগ অবস্থায় কৃত গোনাহের জন্য করণীয় কী?

প্রশ্ন

আমি তখন ছোট বয়স ১২-১৩

তখন খেলার ছলে নানা রকমের দুষ্টুমি করতাম.. তখন আমি যেনা কি বা এর শাস্তির ব্যাপারে কিছুই জানতাম না. আমার বাসার পাশেয় একজন ছেলে থাকতো তাকে মাঝে মাঝে দেখতাম রুমের দরজা লাগিয়ে ছোট একটা মেয়ের সাথে এমন কিছু করতো যেইটা আমি বুঝতাম না তখন আমি ও আমার সাথের যারা বিষয়টা লুকিয়ে দেখতাম অনেক হাসি ঠাট্টা করতাম তো হঠাত একদিন আমরাও এইরকম কিছু করার চেষ্টা করে ছিলাম তারপর আবার বছর খানেক পরে আমি নিজে একা এমন কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তারও কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি যখন আমি যেনা সম্বন্ধে পুরো বিষয়টা বুঝতে পারি তখন আমার ভিতরে অনেক রকমের মানুষিক যন্ত্রনার সৃষ্টি হয় আল্লাহ এবং জাহান্নামের ভয় মনের ভিতর চেপে বসে গেছে এখন আমি আল্লাহর কাছে নামাজ পরে তওবা করতেছি এখন আমার প্রশ্ন হলো

আমি যেইভুলটা করে ফেলেছি তা থেকে আমার মাফ পাওয়ার জন্যে কি কি করতে হবে?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনি যে বয়সের কথা উল্লেখ করছেন, সেই হিসেবে আপনি তখন নাবালেগ ছিলেন। আর নাবালেগ ব্যক্তির কৃত কর্মের জন্য কোন গোনাহ লিপিবদ্ধ করা হয় না। সেই হিসেবে উক্ত কর্মটি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য গোনাহ হলেও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আপনার গোনাহ হিসেবে গণ্য হয়নি। তাই পেরেশান হবার কারণ নেই।

কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর থেকে সর্ব প্রকার পাপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখা আবশ্যক।

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ [٢٤:٥٩

তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োঃপ্রাপ্ত হয়। [সূরা আননূর-৫৯]

عن ابن عمر رضي الله عنهما أنه عُرِض على النبي صلى الله عليه وسلم يوم أُحدٍ وله أربع عشرة سنة فلم يُجِزْه، وعُرِض عليه يوم الخندق وله خمس عشرة سنة فأجازه.

 ইবনে উমর রাঃ উহুদের জিহাদে অংশ নেবার অনুমতি চাইলেন, তখন তার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। রাসূল সাঃ তাকে অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু খন্দকের জিহাদের অংশ নিতে অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। [আলআহাদ ওয়ালমাছানী, হাদীস নং-৭৪৬]

بلوغ الغلام بالاحتلام… والجارية بالاحتلام والحيض والحبل، فإن لم يوجد فيهما شيء فحتى يتم لكل منهما خمس عشرة سنة به يفتى (رد المحتار، كتاب الحجر، فصل بلوغ الغلام بالاحتلام-9/225)

وسن البلوغ على المفتى به خمس عشرة سنة فى الجارية والغلام (رد المحتار، كتاب الطهارة، مطلب فى رطوبة الفرج-1/308)

ولمن بلغ بالسن” وهو خمسة عشر سنة على المفتى به في الغلام والجارية

وفيه ايضا: ن بلوغ الصبي بالإحتلام والإحبال والإنزال وعن بلوغ الصبية بالإحتلام والحيض والحبل فإنه لا بد من الغسل فيها قوله: “وهو خمس عشرة سنة على المفتي به” (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-108)

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّغِيرِ حَتَّى يَكْبَرَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ، أَوْ يُفِيقَ “، قَالَ أَبُو بَكْرٍ فِي حَدِيثِهِ: وَعَنِ الْمُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছেঃ ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। অধস্তন রাবী আবূ বাকর (রহ.)-এর বর্ণনায় আছেঃ বেহুঁশ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুঁশ ফিরে পায়। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৪১]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّ  رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ

আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং (৩) অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না বালেগ হয়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৯৮]

عَنْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَام، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ

আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) নাবালেগ, যতক্ষণ না তার বীর্যপাত হয় এবং (৩) পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪০৩]

وأجمع أهل العلم على أن الفرائض والأحكام تجب على المحتلم العاقل (الإشراف على مذاهب العلماء لابن المنذر-7/227

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল  বুহুসিল ইসলামী ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …