প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম হুজুর!
আমি আল্লাহর একজন নিকৃষ্টতম পাপী বান্দা। আল্লাহর পথে চলার এবং পাপ থেকে মুক্তি লাভের আশায় ও নিজেকে পুরোপুরি ইস্লামের পথে চালানোর জন্য আপনার দ্বারস্থ হয়েছি, দয়া করে আমাকে আল্লার পথে চলার জন্য আমার প্রশ্নের উত্তরটা জানাবেন।
প্রশ্নঃ হুজুর! আমরা ২০১৫ সালে নিজেরা পছন্দ করে কাজী অফিসে গিয়ে দুইজন সাক্ষীর সামনে বিবাহ করি অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই।আর আমার স্ত্রী বিবাহের সময় সাবালিকা ছিলেন এবং চাকুরী করতেন। এই কারনে আমাদের দুই পরিবারের লোকজন আমাদের কোন ব্যাপারে আর কখনোই হস্তক্ষেপ করতেন না এবং আর কিছু বলতেনো না।
আমি ২০১৬ সালের দিকে শয়তানের প্ররোচনায় পরে তাকে মোবাইলের মাধ্যমে তিন তালাক বলে ফেলি। তারপর থেকে আমরা দুইজন আলাদা থাকা শুরু করি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসের দিকে সে (তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী) আমাকে মোবাইলের মাধ্যমে জানায় যে, তিনি আমার থেকে তালাক পাওয়ার পরে তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হবার পরে আবার নতুন করে নিজ পছন্দমত বিবাহ করে নিয়েছিল এবং সংসার (সহবাস) ও করেছিল, কিন্তু সেই স্বামী ও তাকে মোবাইলের মাধ্যমে তিন তালাক দিয়ে দেয়। তাই সে আমাকে তাকে পুনরায় বিবাহ করার প্রস্তাব দেয়। আমি তার কথার উপর ভিত্তি করে তাকে বিবাহের জন্য রাজী হই, এবং তাকে তার ইদ্দত শেষে বিবাহ করি।
কিন্তু তার ইদ্দতের মাঝে আমাদের দেখা ও শারীরীক মেলামাশা হয়।
“এমতাবস্থায় আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ টা কি সহিহ হয়েছে কিনা হুজুরের কাছে জানতে চাই?”
“যদি সহিহ না হয়ে থাকে তাহলে সহি হওয়ার কোন উপায় আছে কিনা হুজুরের কাছে জানতে চাই?”
হুজুর সঠিকভাবে ইসলাম মানার জন্য আপনার উত্তর টা আমার জন্য অতীব জরূরী।আল্লাহর এই পাপী বান্দা ইস্লামের সুশীতল ছায়ায় আসার জন্য আপনার উত্তরের অপেক্ষায় আছে। দয়া করে একটু দ্রুত উত্তরটা দিলে ইস্লামের পথে সহীহভাবে চলতে পারব।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
উপরোক্ত বর্ণনা অনুপাতে যদি দ্বিতীয় স্বামীর তালাক দেবার পর ইদ্দত শেষেই বিয়ে করা হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের দ্বিতীয় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু ইদ্দতের মাঝে সহবাস করার কারণে যিনার গোনাহ হয়েছে। তাই আল্লাহর কাছে কায়মানোবাক্যে তওবা করতে হবে।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيركৱ
হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল বুহুসিল ইসলামিয়া ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।