প্রশ্ন
From: মুহাম্মাদ রুহুল আমিন
বিষয়ঃ কোম্পানির দেয়া নিয়ম না মেনে কাজ করে টাকা আয় কি হালাল?
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় মুফতি সাহেব, কেমন আছেন? আমার প্রশ্নটা অনেক বড় কিন্তু মনে হয় উত্তর টা ছোট হবে ইন শা আল্লাহ্।
আমি একটা ডাটা এন্ট্রি অফিস এর সুপারভাইজার। আমার অধীনে কিছু অপারেটর কাজ করে। আমাদের কাজ হল uk তে যত বাড়ি বিক্রয় ও ভাড়া হয় তার নাম্বার, নাম অথবা দুইটাই বের করে দিতে হয়। যদি নাম্বার বের করে দিতে পারি, তাহলে আমাদের দেয় ২ টাকা। আর না বের করতে পারলে দেয় ১.৪০ টাকা। কিন্তু অনেকেই একটু সময় লাগবে বলে নাম্বার না বের করে, বলে দেয় নাম্বার পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু পরে ভেরিফাই অপারেটর ঠিকই বের করে। এখন কি এভাবে স্কিপ করা কি বৈধ?
আবার আমাদের কাজের আরেকটা অংশ আছে, যার জন্য আমাদের দেয়া হয় ২০ পয়সা। এখানে ৪টা /৮টা কলাম লিখলে আমাদের ২০ পয়সা দেন। তাই অনেকেই ৮টা কলাম পেয়েও শুধু ৪টা কলাম দেন। বাকি ৪টা দিতে চান না। আবার অনেকেই ৪টা পেয়েও দিতে চাই না। এখন এই ভাবে কাজ করলে কি বৈধ হবে? আর আমি যেহেতু তাদের সুপারভাইজার, তাহলে তাদের এই অন্যায় গুলো দেখে কিছু না বললে কি গুনাগার হবো? আর আমার কি করলে কোম্পানি ও অপারেটর দের উপকার হবে।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্ন মূলত দু’টি। যথা-
১
বাড়ি বা বাসার নাম্বার ও নাম দু’টি সংগ্রহ করে দিতে পারলে নির্দিষ্ট টাকা প্রদান করা হয়। দু’টি বের করে দিতে পারলে নির্দিষ্ট টাকা। আর একটি বের করে দিতে পারলে নির্দিষ্ট টাকা।
এক্ষেত্রে কেউ যদি চেষ্টা করে বের করার সুযোগ থাকলেও একটি বের করে বলে অন্যটি পাচ্ছি না, তাহলে তার নেয়া টাকা বৈধ হবে কি না?
২
সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কলামের মাঝে সর্বোচ্চটি লেখার সুযোগ থাকার পরও সর্বনিম্ন কলাম লিখলে তাকে সুযোগ দেয়া উচিত কি না?
যারা সর্বনিম্ন কলামটিও লিখে না, তাদের ক্ষেত্রে করণীয় কী?
এবার উত্তর বুঝা সহজ হবে আশা করি।
১ নং এর উত্তর
যেহেতু দু’টি কাজের আলাদা রেট নির্দিষ্ট করা আছে। তাই একটি করে অন্যটি না করায় কর্মীদের কোন দোষ দেয়া যাবে না। বরং তারা যে কাজ করেছে তার জন্য নির্দিষ্ট রেটের টাকা প্রদান করতে হবে।
যদি এমন শর্ত থাকতো যে, দু’টি বের করলেই টাকা দেয়া হবে, একটি বের করলে দেয়া হবে না, তাহলে বিষয় ছিল ভিন্ন। তখন একটি বের করলে তাদের টাকা দেয়া বৈধ ছিল না। কিন্তু যেহেতু এখানে দু’টি কাজের পারিশ্রমিক ভিন্ন ভিন্ন। তাই শুধু নাম বের করে দিলে তার এর নির্ধারিত পারিশ্রমিক পাবার হকদার হয়ে যাবে।
এতে শরয়ী বিধান লঙ্ঘণের মত কোর কারণ ঘটেনি।
২নং এর উত্তর
যেহেতু সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্নটা উল্লেখ করে দেয়া আছে। এর মানে সর্বনিম্ন কাজটি করলেও সে পারিশ্রমিকের হকদার হয়ে যায়। তাই সর্বনিম্ন কাজটি সমাধা করলেই তাকে যথার্থ পারিশ্রমিক প্রদান করতে হবে।
সর্বোচ্চটা পাবার পরও সর্বনিম্নটা প্রদান করাকে অন্যায় বলাটা ঠিক নয়। কারণ সে ন্যুনতম উত্তীর্ণের সীমাকে পাড় করেছে। তবে এটিকে দায়িত্বে খানিক অবহেলা বলা যেতে পারে।
আর যারা সর্বনিম্নটিও না করবে, তারা কাজটি না করায় পারিশ্রমিক পাবে না।
এক্ষেত্রে অপারেটর হিসেবে আপনার দায়িত্ব হল, প্রতিষ্ঠানের নিয়মের ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আর শ্রমিকদের উদ্ভুদ্ধ করা যেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টাটা ব্যয় করেন।
আর যদি সর্বনিম্নটার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের ঈপ্সিত লাভ না হয়, তাহলে প্রয়োজনে আইন কঠোর করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। যেমন বাড়ির নাম ও নাম্বার দিতে পারলে টাকা পাবে। আট কলাম লিখতে পারলে টাকা পাবে ইত্যাদি।
اجير مشترك، الأجير المشترك من يستحق الأجر بالعمل لا بتسليم نفسه للعمل (تاتارخانية-15/281، المحيط البرهانى-1238، رقم-14036، هندية-4/500)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুসলমান তার শর্তের উপর অবিচল থাকবে। [শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]