প্রশ্ন
From: মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম
বিষয়ঃ নামাজের মাসায়েল
প্রশ্নঃ
আমরা এতদিন জেনে এসেছি যে, যোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হয়ে; কিন্তু আমাদের এলাকার কিছু ওলামায়ে কেরাম যোহরের ফরজের পূর্বে 2 রাকাত পরেন। আসলে শরীয়তে এর ভিত্তি কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
জোহরের ফরজের আগে চার রাকাত নামায সুন্নতে মুআক্কাদা। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা আদায় করেছেন মর্মে হাদীস এসেছে। সুতরাং যারা এ চার রাকাত নিয়মিত ছেড়ে দেয়, তারা সুন্নতে মুআক্কাদা তরকের গোনাহগার হবে।
نْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لاَ يَدَعُ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الغَدَاةِ»
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের আগের চার রাকাআত এবং ফজরের আগের দুই রাকাআত কখনো ছাড়তেন না। [সহীহ বুখারী-১/১৫৭, হাদীস নং-১১৮২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৫৩]
عَنْ قَابُوسَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَرْسَلَ أَبِي إِلَى عَائِشَةَ: أَيُّ صَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ أَحَبَّ إِلَيْهِ أَنْ يُوَاظِبَ عَلَيْهَا؟ قَالَتْ: «كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ، يُطِيلُ فِيهِنَّ الْقِيَامَ، وَيُحْسِنُ فِيهِنَّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ»
হযরত কবূছ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমার পিতা হযরত আয়শা রাঃ এর কাছে পত্র লিখলেন যে, কোন নামায নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা আদায় করতে পছন্দ করতেন। আয়শা রাঃ বললেন, নবীজী জোহরের আগের চার রাকাআত নিয়মিত পড়তেন। এতে দীর্ঘ কিয়াম করতেন এবং রুকু সেজদা ধীরস্থীরভাবে সুন্দর করে আদায় করতেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১১৫৬]
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا لَمْ يُصَلِّ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ صَلاَّهُنَّ بَعْدَهَا
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো যদি জোহরের চার রাকাআত আগে পড়তে না পারতেন, তাহলে জোহরের পর তা আদায় করে নিতেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪২৬]
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ.
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের আগে চার রাকাআত এবং পরে দুই রাকাত পড়তেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪২৪]
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ
হযরত উম্মে হাবীবা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের আগের চার রাকাআত এবং পরে চার রাকাআত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪২৭]
আমরা উপরোক্ত হাদীসগুলোতে দেখলাম যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের আগের চার রাকাআত কখনো ছাড়তেন না। নিয়মিত পড়তেন। কখনো সময়ের কারণে পড়তে না পারলে জোহরের ফরজ পড়ার পর তা আদায় করে নিতেন। যা এ চার রাকাআত কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই প্রকাশ করছে।
এ হল, সুন্নাতে মুআক্কাদা চার রাকাত। যা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। এছাড়া কিছু নামায আছে যা সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। যা তিনি কখনো পড়তেন। আবার কখনো ছাড়তেন।
এর মাঝে রয়েছে জোহরের ফরজের আগে দুই রাকাআত। যা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়মিত পড়তেন না।
তাই আমরা বলি, জোহরের আগে চার রাকাআত সুন্নতে মুআক্কাদা। যা সর্বদা পড়তে হবে। আর দুই রাকাত গায়রে মুআক্কাদা। যা সুযোগ থাকলে পড়বে। আর না থাকলে ছেড়ে দিবে।
যেমন হাদীসে ইরশাদ হয়েছেঃ
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ، وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ، وَبَعْدَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ فِي بَيْتِهِ، وَبَعْدَ صَلَاةِ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ، وَكَانَ لَا يُصَلِّي بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের আগে দুই রাকাআত, এবং পরে দুই রাকাআত এবং মাগরিবের পর ঘরে দুই রাকাআত এবং ইশার পর দুই রাকাআত পড়তেন। আর জুমআর দিন জুমআর পর ঘরে না এসে দুই রাকাত পড়তেন না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৫২]
সুতরাং জোহরের আগের চার রাকাআত সুন্নাতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিয়ে শুধু গায়রে মুআক্কাদা দুই রাকাআত আদায় করা কিছুতেই সঠিক কাজ নয়। বরং ভুল কাজ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]