প্রচ্ছদ / কাফন-দাফন-জানাযা / লাশ দাফন করার পর সম্মিলিত বা একাকী মুনাজাতের বিধান কী?

লাশ দাফন করার পর সম্মিলিত বা একাকী মুনাজাতের বিধান কী?

প্রশ্ন

লাশ দাফন করার পর সবাই একত্রিত হয়ে মুনাজাত করা কি জায়েয আছে?

— মুফীজুল ইসলাম, নরসিংদী।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কয়েকটি বর্ণনা শুরুতে দেখে নেইঃ

وَفِي حَدِيثِ بن مَسْعُودٍ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللَّهِ ذِي النِّجَادَيْنِ الْحَدِيثَ وَفِيهِ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ أَخْرَجَهُ أَبُو عَوَانَةَ فِي صَحِيحه (فتح البارى، كتاب الدعوات، قَوْلُهُ بَابُ الدُّعَاءِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ-11/209)

হযরত ইবনে মাসঊদ রাঃ এর বর্ণনায় এসেছে [তিনি বলেনঃ] যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জুন নাজাদাইনের কবরে দেখলাম। …………. যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাফন থেকে ফারিগ হলেন, তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুললেন। ইমাম আবূ আওয়ানা তার “সহীহ” নামক গ্রন্থে বর্ণনাটি এনেছেন। [ফাতহুল বারী-১১/২০৯]

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ، فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ

হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃতের দাফন থেকে ফারিগ হতেন, তখন তিনি সেখানে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য দুআ কর, এবং তার জন্য দৃঢ়তার দুআ কর। কেননা, এখনি তাকে সুওয়াল করা হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২২১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এসেছে যে,

حَتَّى جَاءَ الْبَقِيعَ فَقَامَ، فَأَطَالَ الْقِيَامَ، ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ،

তিনি জান্নাতুল বাকীতে আসলেন, এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। তারপর তিনবার উভয় হাতকে উঠালেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭৪]

উপরোক্ত হাদীসগুলোর দিকে তাকালে আমাদের পরিস্কার হয়ে যায় যে, দাফন করার পর, বা কবরের পাশে দাড়িয়ে, কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে মুনাজাত করা হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই প্রমাণিত।

আর সম্মিলিত মুনাজাত বিষয়ে হাদীসে এসেছেঃ

عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيِّ – وَكَانَ مُسْتَجَابًا -: أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرِبَ الدُّرُوبِ، فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَقُولُ: ” «لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ، إِلَّا أَجَابَهُمُ اللَّهُ

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَقَالَ: الْهَنْبَاطُ بِالرُّومِيَّةِ: صَاحِبُ الْجَيْشِ. وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَهُوَ حَسَنُ الْحَدِيثِ.

হযরত হাবীব বিন মাসলামা আলফিহরী রাঃ। যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। তাকে একবার একটি বাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের পর তিনি যখন শত্রুর সম্মুখিন হলেন। তখন লোকদের বললেন, আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন “যখনি কোন দল একত্র হয়, তারপর তাদের কথক দুআ করে, আর অপরদল আমীন বলে তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন”।

{মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪৭, মুস্তাতাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৫৪৭৮, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৫৩৬}

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসের সূত্রের প্রতিটি রাবী সহীহের রাবী। ইবনে লাহিয়াহ ছাড়া। কিন্তু সেও হাসান পর্যায়ের রাবী। {মাযমাউয যাওয়ায়েদ-১৭৩৪৭}

عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا

হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন জামাআত তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করার আশায় আল্লাহর দরবারে হাত উঠায়, তখন আল্লাহর উপর হক হল প্রার্থিত বিষয় উক্ত জামাতকে প্রদান করা। {আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৬১৪২, আততারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১৪৪, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩১৪৫}

আল্লামা হায়ছামী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদের সকল রাবীগণ সহীহের রাবী।{ মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭৩৪১}

উপরোক্ত হাদীসসমূহের আলোকে বিধান হল,

মৃতকে দাফন করার পর, তার কবরের পাশে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দুআ করা জায়েজ আছে।

একাকী করাও জায়েজ আছে, আর সম্মিলিতভাবে করাও জায়েজ আছে।

এ দুআকে জরুরী মনে করা বা দাফনের সুন্নাত মনে করা বিদআত।

যারা এভাবে দুআ না করে চলে যায়, তাদের ভর্ৎসনা করা জায়েজ নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *