প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম
ভাই আমি সিজিল আহমেদ
হবিগঞ্জ থেকে।
আমি হবিগঞ্জে আলিয়া মাদ্রাসাই পরি।
আমার ফেসবুকে ১ লা মাজহাবির বন্দুর প্রশ্ন,
রাসুল সা: বলেছেন আমি যেভাবে নামাজ পরেছি টিক তেমনি আমার মতে করে নামাজ পর।
হের প্রশ্ন রাসুল সা: এই হাদিস অনুযায়ী রাসুল সা: এর মত করে নামাজ পরবো মাজহাবের দরকার কি?
মাজহাব যদি সঠিক হতো তাহলে নামায আদায় করার পদ্বতি ভিন্ন কেন?
প্লিজ ভাই দয়া করে ইহার উত্তর টা দিবেন।
ফি আমানিল্লাহ 🙂
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশ্ন দু’টি। যথা-
১-হাদীস অনুযায়ী নামায পড়বো, আবার মাযহাব কেন?
২-মাযহাব সঠিক হলে নামায আদায় পদ্ধতি ভিন্ন কেন?
দু’টি প্রশ্নই মাযহাব ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে সৃষ্ট।
উক্ত ভাইটি না মাযহাব সম্পর্কে জানেন। না হাদীস সম্পর্কে জানেন। না মাযহাবের অর্থ ও হাকীকত বুঝেন। না হাদীস সম্পর্কে তার ন্যুনতম জ্ঞান আছে।
মাযহাব কি?
আমরা ইতোপূর্বের অনেক লেখা ও ভিডিওতে তা পরিস্কার বলেছি। ভাল করে অনুধাবন করতে সেসব লেখা ও ভিডিও দেখে নিন। যেমন পড়ুন-
মাযহাব ও তাকলীদ বিষয়ক লেখা ও ভিডিও লিংকসমূহ
এখানে সহজে বুঝানোর জন্য বলছি- মাযহাব অর্থ পথ। কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত শরয়ী বিধানাবলী মানার পথের নাম হল মাযহাব। যেমন কুরআন ও হাদীসে অজুর কথা এসেছে। কিন্তু ওজুর ফরজ কয়টি? সুন্নত কয়টি? ওয়াজিব কয়টি? ইত্যাদি স্পষ্ট শব্দে আসেনি। তো মাযহাবের কিতাবে কুরআন ও হাদীসকে সামনে রেখে উক্ত বিষয়াবলীকে সাজিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।
মাযহাব কোন আলাদা বস্তুর নাম নয়। বরং কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বিধানাবলীর সুবিন্যাস্ত রূপের নাম।
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে হাদীস থাকতে মাযহাব কেন? তাহলে প্রশ্ন করুন-ওজুর ফরজ কয়টা? নামাযের ফরজ কয়টা? ওজুর মুস্তাহাব কয়টা? গোসলের ফরজ কয়টা? নামাযের শর্ত কয়টা? ওজু ভঙ্গের কারণ কয়টা? নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি?
এভাবে নামায, রোজা, হজ্ব, ওজু, যাকাত, ইত্যাদির, ফরজ, সুন্নাত, মুস্তাহাব, ভঙ্গের কারণ ইত্যাদি নির্দিষ্ট আকারে কেউ যদি হাদীস থেকে স্পষ্ট শব্দে দেখিয়ে দিতে পারে, তাহলে আসলে মাযহাবের কোন দরকারই নেই।
মাযহাবেরতো সৃষ্টিই হয়েছে কুরআন ও হাদীস বুঝার জন্য। এটির প্রয়োজনই হয়েছে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বিষয়াবলী স্পষ্ট করার জন্য।
সুতরাং হাদীস থাকতে মাযহাব কেন এমন প্রশ্ন মুর্খ ব্যক্তি ছাড়া আর কে করতে পারে?
মাযহাব যদি আলাদা কিছু হতো, তাহলে এমন প্রশ্ন যৌক্তিক হতো। কিন্তু মাযহাবতো আলাদা কোন বিষয়ই নয়। বরং কুরআন ও হাদীসেরই বিন্যাস্ত রূপ। তাহলে হাদীস থাকতে মাযহাব কেন? এমন প্রশ্ন অসাড় প্রশ্ন নয়কি?
এলজামী জবাব
মাযহাব তথা কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞদের কথা না মেনে শুধু হাদীস অনুপাতে নামায পড়তে চাইলে প্রশ্ন হল-
১
নামাযের ফরজ কয়টি? সহীহ হাদীস দ্বারা নির্দিষ্ট আকারে জানতে চাই।
২
নামাযের ওয়াজিব কয়টি?
৩
নামাযের সুন্নত কয়টি?
৪
নামাযের শর্ত কয়টি?
৫
নামায ভঙ্গের কারণ কয়টি?
৬
নামাযের মুস্তাহাব কয়টি?
৭
নামাযের মাকরূহাত কয়টি?
৮
ফরজ কাকে বলে?
৯
সুন্নত কাকে বলে?
১০
মুস্তাহাব কাকে বলে?
উপরোক্ত বিষয়গুলো কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে পরিস্কার শব্দে দেখান। কোন মাযহাবী ব্যক্তির উক্তি নকল করা যাবে না। শুধুই হাদীস দিয়ে প্রমাণ করুন।
তাহলেই বুঝা যাবে, আমাদের উক্ত পন্ডিত ব্যক্তির আসল হাকীকত।
আরো জানতে পড়ুন-
আহলে হাদীস নামধারীদের কাছে দলীল চাই [পর্ব-১]
আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি লা-মাযহাব ভাইটির চূড়ান্ত মুর্খতার প্রমাণবাহী। তিনি হাদীসের কোন কিতাবই মনে হয় পড়েননি। হাদীসের কিতাব না পড়েই তিনি কিভাবে আহলে হাদীস হয়ে গেলেন?
তিনি যদি তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ এবং আবু দাউদ এ চারটি হাদীসের কিতাব এক নজরও খুলে পড়তেন। তাহলে এমন আহমকী প্রশ্ন করতেন না। বরং তিনি নিজেই বলতেন যে, হাদীস ভিন্ন ভিন্ন, তাই নামায আদায় পদ্ধতিও ভিন্ন।
ভিন্নতা মাযহাবের দোষ নয়। বরং হাদীসে বর্ণিত আমলী ভিন্নতার কারণে মাযহাব তথা আমলের পথ ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে।
সুতরাং এক্ষেত্রে মাযহাবকে দোষারূপ করা অজ্ঞতা বৈ আর কী হতে পারে?
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]