প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
ভাই! আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা বলতেছেন যে, ইমাম আবু হানীফার বক্তব্য সব ঠিক। যদি তা’ই হয়, তাহলে মিলাদ কতটুকু শরীয়া সম্মত?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নের শুরু অংশ আর শেষের অংশের সাথে কোন মিল নেই। কি বলতে চাচ্ছেন তা পরিস্কার নয়। তবে যেহেতু এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে আপনাদের মত সরলমনা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে কতিপয় জ্ঞানপাপী অথবা অজ্ঞ ব্যক্তিরা। তাই এর একটি জবাব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
আসলে আমরা অনুসরণ করি ফিক্বহে হানাফী। আর ফিক্বহে হানাফী শুধু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্যের নাম নয়। বরং তা ইমাম আবু হানীফা রহঃ সহ তার চল্লিশ সদস্যের ফিক্বহ বোর্ড কর্তৃক কুরআন ও হাদীস থেকে উদ্ভাবনকৃত মাসায়েল সমগ্র।
ইমাম আবু হানীফা রহঃ সহ ফুক্বাহায়ে আহনাফ যেহেতু কুরআন ও হাদীসকে সামনে রেখে গবেষণা করে কুরআন ও হাদীসের ভিতরেরই মাসায়েলকেই একত্রিত করেছেন। তো সব মাসআলাতো ঠিক হবেই। কারণ ফিক্বহ ভুল হওয়া মানেতো কুরআন ও হাদীসই ভুল হয়ে যাওয়া।
যেমন ফিক্বহে হানাফীর কিতাবে ওজুর ফরজ চারটি লিখা হয়েছে। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের কোথাও এভাবে শিরোনাম দিয়ে ওজুর ফরজ লেখা নেই।
আমরা বলি ফিক্বহে হানাফীর কিতাবে লিখা ওজুর ফরজ যে চারটি লিখা হয়েছে, তা ঠিক। কারণ তা কুরআনের আয়াত থেকে উদ্ভাবনকৃত। যদিও কুরআনে স্পষ্ট শব্দে শিরোনাম দিয়ে চারটি নির্দিষ্ট করে ওজুর ফরজ নামে লিখা নেই।
এখন কেউ অজুর ফরজ অস্বিকার করলে আমরা তাকে বলবো সে কুরআন অস্বিকার করে।
এভাবেই ফিক্বহের কিতাবে সংকলিত মাসায়েলগুলো কুরআনের আয়াত ও হাদীসে নববী এবং সাহাবাগণের আমলকে সামনে রেখে সংকলিত করা। তাই এসব ভুল হওয়ার কল্পনাও করা যায় না।
বাকি আমলের ভিন্নতা থাকতে পারে। কারণ হাদীস ও সাহাবাগণের আমালের মাঝে ভিন্নতা ছিল। অর্থাৎ সুন্নাহের ভিন্নতার কারণে ফিক্বহের কিতাবে ভিন্ন ভিন্ন সুন্নাহ উদ্ধৃত হয়েছে।এর মানে কিন্তু কোন ফিক্বহকেই কুরআন ও হাদীস বিরোধী বা ভুল বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ এসব কিছুই কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবাগণের আমলেরই সংকলিত রূপ।
সুতরাং পরিস্কার বুঝা গেল, মুজতাহিদ ইমামগণের বক্তব্যকে ভুল সাব্যস্ত করা মানে হল, কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবাগণের আমলকে ভুল সাব্যস্ত করা। আল্লাহ হিফাযত করুন।
মাযহাব বিষয়ে মৌলিক ধারণা পেতে পড়ুন-
সহজ ভাষায় মাযহাব ও তাক্বলীদ ও লা-মাযহাবিয়্যাতের পরিচয়
এ ভিডিওটিও দেখতে পারেন-
সহজ ও সাবলীল ভাষায় মাযহাবের পরিচয় ও গুরুত্ব পর্যালোচনা
আর দ্বিতীয় বিষয় হল প্রচলিত মিলাদ কিয়াম।
একটি মূলনীতি খেয়াল রাখুন। সুন্নাত ও বিদআত বুঝার সহজ পথ হল, ফিক্বহের কিতাবে আমলটি করার প্রমাণ থাকা ও না থাকা।
আরো সহজ ভাষায় বলি। যেহেতু ফিক্বহে ইসলামী হল, কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবাগণের আমলের সংকলিত রূপ। তাই এসব কিতাবে যেসব আমলকে উম্মতের জন্য করার কথা উদ্ধৃত হয়েছে। বুঝা যাবে, এসবই সুন্নাহ সম্মত।
কিন্তু যদি ফিক্বহের কিতাবে কোন আমলকে অপ্রাধান্য সাব্যস্ত করা হয়, বা করতে নিষেধ লিখা হয়, বা এসবের কোন উল্লেখই না থাকে, তাহলে বুঝা যাবে এসবই নব্য সৃষ্ট। আর তা যদি দ্বীন মনে করে কেউ করে থাকে, তাহলে নির্দ্ধিধায় তা বিদআত বলে ধর্তব্য করে নিতে পারেন।
কারণ, ফুক্বাহায়ে কেরামগণ সুন্নাহ একত্রিত করণে কোন গাফলতি করেননি। ফিক্বহের কিতাবগুলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত সকল সুন্নাহগুলোকে সুবিন্যাস্তরূপে সংকলিত করে উম্মতের সামনে পেশ করে গেছেন। এখন নতুন কোন আমল দ্বীনের নামে পেশ করা হলেই বুঝা যাবে, এটি সুন্নাহ নয় বিদআত।
যেমন প্রচলিত মিলাদ, কিয়াম।প্রচলিত পদ্ধতিতে তা উদযাপনের যে রেওয়াজ পাওয়া যায়, এর কোন ভিত্তি কুরআন ও হাদীসে যেমন নেই। তেমনি নেই ফিক্বহে হানাফীসহ কোন ফিক্বহের কিতাবের মাঝে। বরং তাদের উসুল অনুপাতে বিদআত হিসেবেই প্রমাণিত।
তাহলে এমন প্রশ্ন করা যে, ইমাম আবু হানীফার কথা ঠিক হলে মিলাদ কতটুকু শরীয়ত সম্মত টাইপের প্রশ্নগুলো অজ্ঞতাসূচক প্রশ্ন।
কারণ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মিলাদ কিয়াম করতে কোথাও বলেননি। না তার কোন সাগরিদগণ বা ফুক্বাহায়ে আহনাফের কেউ এমন করতে বলেছেন।
তাই বিদআত বুঝার সহজ পদ্ধতি হল, ফিক্বহের কিতাবে করার বিধান থাকলে বুঝতে হবে তা সুন্নাহ সম্মত। আর না করার কথা থাকলে বা উল্লেখ না থাকলে বিদআতের তালিকায় অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনায় পরে যাবে।
সুতরাং মিলাদ কিয়ামকে ফিক্বহে হানাফীর বিষয় মনে করা মুর্খতা ছাড়া কিছু নয়।
ومنها التزام الكيفيات والهيئات المعينة كالذكر بهيئة الإجتماع على صوت واحد واتخاذ يوم ولادة النبى صلى الله عليه وسلم عيدا، وما اشبه ذلك.. الخ (الإعتصام-1/29
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]