প্রশ্ন
“লা-মাযহাবী” কে??
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এক নং “””লা- মাযহাবী””” ছিলেন । মাযহাবীদের কাছে আমার কিছু জিজ্ঞাসাঃ
(১) আবু হানীফা রহ কি হানাফী মাযহাব তৈরী করেছেন?
(২) আবু হানীফা রহঃ কি সব বিষয়ে সমাধান দিয়ে গেছে? যদি দিয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে নতুন সমস্যা দেখা দেয় কেন???
(৩) আবু হানীফার জন্মের আগের দিন যেসব মানুষ মারা গেছে তারা কোন মাযহাব মানতো? তারা সবাই “লা-মাযহাবী” ছিল ??
(৪) আবু হানীফা যখন শিশু ছিলো তখন সারা দুনিয়ার মুসলিমগণ কোন মাযহাব মানতো? “লা-মাযহাব” কি??
(৫) আবু হানীফা তো আর জন্ম থেকেই মুজতাহিদ ছিলেননা। মুজতাহিদ হতে কম করে হলেও ২৫/৩০ বছর বয়স হয়েছে তার। তাহলে আবু হানীফার বয়স ২৫/৩০ বছর হওয়ার আগে সারা দুনিয়ার মুসলিমরা কোন মাযহাব মানতো?
(৬) “লা-মাযহাবী” কি?? দলিল সহ জানতে চাই।
(আর একটি কথাঃ আমি যখন কুরান ও সহীহ হাদীসের কথা বলি তখন মাযহাবীরা আন্দাজে আবুল তাবুল বলে) উপরিউক্ত প্রশ্নের জবাব চাই।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আমরা অনেক বারই বলেছি যে, লা-মাযহাবী হবার জন্য দু’টি বিষয় জরুরী। যথা-
১
মুর্খ হতে হয়।
২
বেআদব হতে হয়।
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো দেখে তা আমাদের কাছে পরিস্কার। উপরোক্ত দু’টি সিফাতই পুরোদমে প্রশ্নকারীর মাঝে বিদ্যমান।
আসলে যারাই মাযহাবের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন, তারা মূলত মাযহাবের হাকীকত সম্পর্কে একেবারেই শিশু। ন্যুনতম কোন ধারণাই নেই। সবচে’ আফসোসের বিষয় হল, এসব বন্ধুরা তাদের এ মুর্খতা দূর করার জন্য পড়াশোনা করতেরও রাজি নন। এটি আমাদের খুবই কষ্ট দেয়।
অথচ আমাদের আহলে হক মিডিয়ার ওয়েব সাইটে মাযহাব বিষয়ক অনেক প্রবন্ধ, প্রশ্নোত্তর এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। যা যে কোন বিবেকবান ব্যক্তি দেখলেই বুঝতে পারবেন মাযহাব কি জিনিস?
যদি প্রশ্নকারী আমাদের প্রকাশিত লেখাগুলো পড়তেন, তাহলে হাস্যকরভাবে উপরোক্ত প্রশ্নগুলো করতেন না।
এ প্রশ্নগুলো জন্মই নিয়েছে মাযহাব সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে।
মাযহাব শব্দের অর্থ হল, পথ। যার গন্তব্য হল কুরআন ও সুন্নাহ। আরেক শব্দে বললে, মাযহাব হল, মাধ্যম, যার গন্তব্যের নাম হল, কুরআন ও সুন্নাহ।
আমরা সবাই কুরআন ও সুন্নাহ অনুপাতে আমল করতে চাই। অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত অজুর ফরজ, হাদীসে বর্ণিত অযুর সুন্নত, মুস্তাহাব, অযু ভঙ্গের কারণ, কুরআনও হাদীসে বর্ণিত নামাযের আরকান, ফারায়েজ, নামাযের মাসনূনাত, কতগুলি ওয়াজিব, নামায ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট কারণ কতগুলো? আমাদের দৈনন্দীন জীবনের জীবনঘনিষ্ট মাসায়েলের শরয়ী সমাধান কি? এসব বিষয় আমরা কুরআন ও হাদীসের রীতি অনুপাতে আমল করে আল্লাহকে খুশি করতে চাই।
কিন্তু আমরা গায়রে মুজতাহিদ হবার কারণে, কুরআন খুলে স্পষ্ট শব্দে অজুর ফরজ দেখতে পাই না। হাদীস খুলে নাম্বারসহ গোসলের ফরজ, নামাযের বিবিধ মাসায়েল নাম্বারসহ, নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারি না। তখন আমরা মুজতাহিদ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বের করা অযুর মাসায়েল, গোসলের মাসায়েল, নামাযের মাসায়েল ইত্যাদি নাম্বারসহ, আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে তারা যা সংকলিত করেছেন, সেই পথনির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা আল্লাহর কুরআন ও তার নবীজী সাঃ এর সুন্নাহের অনুসরণ করি।
তাহলে কী দাঁড়াল? আমরা মানছি কিন্তু কুরআন ও হাদীস। কিন্তু বুঝি না বলে যিনি বুঝেন, তার বের করা মাসায়েলের অনুসরণ করে মূলত কুরআন ও হাদীসেরই অনুসরণ করছি।
এর নামই মাযহাবের অনুসরণ। মুজতাহিদ ইমামগণ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে যে মাসায়েলগুলো বের করে আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে, নাম্বার দিয়ে দিয়ে আলাদা করে লিখে যা সংকলিত করেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বের করা সেসব মাসআলার সংকলনের নাম হল মাযহাব।
তো মাযহাব অনুসরণ করে আমরা কুরআন ও সুন্নাহই মূলত অনুসরণ করছি। মূলত কোন উম্মতীকে নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ছিলেন, তখন সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে ও জিজ্ঞাসা করে মাসআলার সমাধান করে নিতেন।
তার পরবর্তীতে তাবেয়ীগণ সাহাবাগণের মাঝে যারা মুজতাহিদ ছিলেন, তাদের কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে আমল করতেন। আরেক শব্দে মুজতাহিদ সাহাবাগণের মাযহাব অনুপাতে আমল করতেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কারো কাছ থেকে সব মাসআলার মৌলিক সমাধান নির্ভর কোন পথ প্রসিদ্ধ হয়নি।
তাবেয়ীগণের মাঝে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সর্বপ্রথম কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবাগণ রাঃ আমলগুলোকে একত্র করার জন্য চল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট ফুক্বাহা বোর্ড গঠন করেন। এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মাসায়েল কুরআন ও সুন্নাহের মূলনীতি আকারে সংকলিত হয়।
এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে সাহাবায়ে কেরামের পথ তথা মাযহাব অনুসরণ করা হতো। আর ইমাম আবূ হানীফা রহঃ তা একসাথে করে দেবার কারণে তার পরবর্তীতে তার দিকে নিসবত করে তার একত্র করা কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক মাসায়েলগুলো অনুসৃত হতে থাকে। এরপর ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম আহমাদ রহঃ এভাবে কুরআন ও হাদীসকে সামনে রেখে মাসায়েল সংকলিত করেন। যা পরবর্তীতে তাদের নামে প্রসিদ্ধি পায়।
যেমন সাহাবা যুগে, তাবেয়ী যুগে সবাই হাদীস মানতেন। কিন্তু বুখারী, মুসলিমের হাদীস নামে মানতেন না। বরং শুধু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস হিসেবে মানতেন। কোন কিতাবের হাদীস নামে মানতেন না।
কিন্তু পরবর্তীতে ইমামরা তা সংকলিত আকারে কিতাবে সন্নিবেশিত করার পর আমরা বুখারীর হাদীস, মুসলিমের হাদীস বলে হাদীসের পরিচয় প্রদান করি। কিন্তু এর মানে হাদীস বুখারীর থাকে না, হাদীস কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই থাকে। কিন্তু সংকলন ইমাম বুখারী মুসলিম করার কারণে তাদের দিকে নিসবত করে বুখারী মুসলিমের হাদীস বলে থাকি। তেমনি মাসআলা কুরআন ওহাদীসের হওয়া সত্বেও একত্র ইমাম আবূ হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী করার কারণে হানাফী শাফেয়ী ইত্যাদি মাযহাব বলে থাকি।
এ বিষয়ে পরিস্কার জানতে পড়ুন- https://ahlehaqmedia.com/3002-4/
ভিডিও https://ahlehaqmedia.com/5038/
মৌলিক কথা বুঝার পর এবার ভাইটির উদ্ভট সব প্রশ্নের জবাব বুঝে নেই।
১ম প্রশ্নের জবাব
হানাফী মাযহাব ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর গবেষণালব্ধ না হলে তা হানাফী মাযহাব হল কিভাবে?
এটা কী ধরণের মুর্খতাসূলভ প্রশ্ন।
আমরা যদি পাল্টা প্রশ্ন করিঃ
বুখারী শরীফ কি ইমাম বুখারী সংকলিত করেছেন?
এ আহমকী প্রশ্নের কী জবাব হবে?
এ প্রশ্নের যে জবাব, হানাফী মাযহাব কি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কি না? এ প্রশ্নের একই জবাব।
২য় প্রশ্নের জবাব
ইমাম আবূ হানীফা রহঃ সব সমস্যার সমাধান দিয়ে গেছেন একথা আপনাকে কে বলেছেন? এটিতো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। ইমাম হানীফা রহঃ সহ ফুক্বাহায়ে কেরাম দ্বীনী বিষয়ের সমাধানের কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে কিছু মূলনীতিগত সমাধান আবিস্কার করে গেছেন। যার মাধ্যমে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান বের করা যায়। এর মানে সব সমস্যার সমাধান তারা গিয়েছেন একথা বলা যাবে না। আর একথা কেউ বলে না। বলতে পারে লা-মাযহাবী নামক অজ্ঞ ব্যক্তিরাই।
৩য় ৪র্থ ও ৫ম প্রশ্নের জবাব
আমাদের উপরোক্ত ভূমিকা পড়ে নিলে আপনাদের কাছে পরিস্কার হবার কথা যে, এ প্রশ্নটি কতটা মুর্খতার পরিচায়ক। এ প্রশ্নটি এমনঃ
ইমাম বুখারী রহঃ তার বুখারী শরীফ সংকলন করার আগে যেসব মানুষ মারা গেছেন, তারা সবাই কোন হাদীসের কিতাব মানতো? তারা কি সবাই হাদীসহীন ছিল?
এটি একটি জাহেলী প্রশ্ন। তেমনি হানাফী মাযহাব সংকলিত হবার আগের লোকদের লা-মাযহাবী বলাটাও মুর্খতা ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
যেমন আমরা প্রথম প্রশ্নের ক্ষেত্রে বলে থাকি যে, বুখারী সংকলনের আগে সবাই হাদীস মানতেন। কিন্তু তা কোন কিতাবের হাদীস? সেই নাম কেউ বলতেন না। কারণ তা কিতাব আকারে সংকলিত হয়নি।
তেমনি হানাফী মাযহাব আকারে সংকলিত হবার আগেও লোকজন উপরোক্ত মাসআলার উপর আমল করতেন, কিন্তু তা হানাফী মাযহাব নাম পায়নি। কারণ তখনো ইমাম আবূ হানীফা রহঃ তা সংকলিত করেননি।
তো সংকলিত হবার আগেই এসবের নাম হানাফী মাযহাব কিভাবে হবে?
আর তারা হানাফী মাযহাব না পাবার পরও কিভাবে লা-মাযহাবী হবে? পাবার পর না মানলে তিনি লা-মাযহাবী হতে পারেন। কিন্তু পাবার আগেই কিভাবে লা-মাযহাবী হবেন?
এমন অহেতুক প্রশ্ন গণ্ডমুর্খ ছাড়া আর করতে পারে?
৬ষ্ঠ প্রশ্নের জবাব
মুজতাহিদ কাকে বলে?
মুজতাহিদ ঐ ব্যক্তিকে বলে, যিনি কুরআন ও সুন্নাহ ঘেটে নিজে নিজে অজু গোসল, নামায, হজ্ব ইত্যাদিসহ মানুষের জীবন ঘনিষ্ট সকল মাসায়েল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ, মুস্তাহাব, মাকরূহ, এসব ভেঙ্গে যাবার কারণ ইত্যাদি আলাদা আলাদা করে বের করে আমল করতে সক্ষম, উক্ত ব্যক্তিকে বলে মুজতাহিদ। অর্থাৎ যিনি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জীবন ঘনিষ্ট যাবতীয় মাসায়েল বের করে আমল করতে পারেন, তাকে বলা হয় মুজতাহিদ। যেমন চার মাযহাবের ইমামগণ ছিলেন মুজতাহিদ।
মুকাল্লিদ কাকে বলে?
মুকাল্লিদ উক্ত ব্যক্তিকে বলে, যিনি নিজে নিজে কুরআন ও সুন্নাহ ঘেটে জীবন ঘনিষ্ট সকল মাসায়েল নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারে না, কিন্তু যিনি পারেন, সেই মুজতাহিদের বের করা মাসায়েল অনুপাতে আমল করে আল্লাহর বিধানের পাবন্দী করেন। উক্ত ব্যক্তিকে বলা হয় মুকাল্লিদ।
যেমন আমরা সবাই হানাফী মাযহাবের মুকাল্লিদ।
গায়রে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী কারা?
যারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে নিজ প্রাজ্ঞতায় জীবন ঘনিষ্ঠ সমস্ত মাসায়েল নির্দিষ্ট আকারে বের করতে পারেও না, আবার যারা পারেন, সেই মুজতাহিদের উদ্ভাবিত মাসায়েল অনুসরণও করেন না, বরং নিজে নিজে পন্ডিতী করেন, তাদের বলা হয়, গায়রে মুকাল্লিদ বা লা-মাযহাবী। তাদেরই আরেক নাম (কথিত) আহলে হাদীস।
কয়েকটি উপমার মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবেঃ
উপমা নং-১
সমুদ্রের তলদেশে হীরা মাণিক্য জহরত রয়েছে। যা সবারই প্রয়োজন। কিন্তু সবাই ডুবুরী নয়। ডুবুরী নিজ যোগ্যতায় ডুব দিয়ে সমুদ্রের তলদেশ থেকে হীরা মাণিক্য জহরত আহরণ করে তা ব্যবহার করে।
আর যারা ডুবুরী নয়, তারা উক্ত ডুবুরীর মাধ্যমে উক্ত হীরা মাণিক্য সংগ্রহ করে ব্যবহার করে।
যারা ডুব দিতে জানে না, তারা ডুবুরীর মাধ্যমে হীরা মাণিক্য জহরত পেয়ে ডুবুরীর জন্য দুআ করে। কিন্তু শুকরিয়ায় মাথা নত করে আল্লাহর দরবারে।
আরেক দল ডুবুরী নয়। আবার ডুবুরীর কাছেও যায় না, বরং ডুব না জানা সত্বেও ডুব দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
তেমনি কুরআন ও হাদীসের অভ্যন্তরে মাসায়েলের হীরা মাণিক্য জহরত লুকায়িত। মুজতাহিদ স্বীয় যোগ্যতা বলে সে মাসআলা বের করে আমল করে। আর মুকাল্লিদরা মুজতাহিদের আহরিত মাসায়েলের হীরা মাণিক্য দ্বারা আমল করে।
মুকাল্লিদগণ মুজতাহিদের আহরিত মাসায়েল অনুপাতে আমল করে ইবাদত করে আল্লাহর। আর মাসায়েল সংগ্রাহক মুজতাহিদের জন্য দুআ করে।
আর গায়রে মুকাল্লিদ/লা-মাযহাবীরা মুজতাহিদের কাছে না গিয়ে মাসায়েল বের করার যোগ্যতা না থাকা সত্বেও গবেষণার নামে দ্বীনের মাঝে ফিতনার সৃষ্টি করে।
উপমা নং-২
কোন এলাকায় নতুন নির্মিত মসজিদের সকল মুসল্লির জন্যই অযু করতে পানি প্রয়োজন। কিন্তু সবার পক্ষে জমিন খনন করে পানি বের করে অযু করা সম্ভব নয়।
তখন জমিন খনন করতে সক্ষম কোন দানবীর ব্যক্তি এসে তার মুজাহাদা মেহনত ও শ্রম দিয়ে জমিনের নিচ থেকে মুসল্লিদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে কুপ ইত্যাদি খনন করে দেয়।
খননকৃত কুপের পানি আল্লাহর সৃষ্টি করা। সেই পানি কেবল দানবীর ব্যক্তিটি স্বীয় মুজাহাদা দিয়ে প্রকাশ করে দিয়ে মুসল্লিদের উপর ইহসান করে থাকে। অনেক সময় পানি প্রকাশক উক্ত ব্যক্তির নামে কুপের নামকরণও হয়ে যায়। নামকরণ ব্যক্তির নামে হলেও সবাই জানেন উক্ত পানি জমিনের নিচে জমিনের সৃষ্টি লগ্ন থেকেই ছিল এবং পানির ¯্রষ্টা আল্লাহ তাআলা। দানবীর ব্যক্তি কেবল পানির প্রকাশক।
তখন উক্ত মসজিদের মুসল্লিরা কূপের পানি দ্বারা অযু করে মসজিদে প্রবেশ করে ইবাদত করে আল্লাহর। কিন্তু যেহেতু দানবীর ব্যক্তিটি জমিনের নিচ থেকে পানি প্রকাশ করে দিয়ে মুসল্লিদের উপর ইহসান করেছে, তাই মুসল্লিগণ উক্ত পানি দিয়ে অযু করে দানবীর ব্যক্তির জন্য দুআ করে।
তেমনি কুরআন সুন্নাহের গভীরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অযু, গোসল, সালাত ইত্যাদিরর ফরজ, সুন্নত মুস্তাহাব ইত্যাদি কুরআন ও হাদীসের সূচনালগ্ন থেকেই তাতে প্রবিষ্ট করিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সবার পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে সেসব মাসায়েল নিজে নিজে বের করে আমল সম্ভব নয়। কিন্তু সবারই অযু করা প্রয়োজন। সবাই নামায পড়া প্রয়োজন।
তখন মুজতাহিদ ইমামগণ তাদের মুজাহাদা মেহনত দিয়ে কুরআন ও হাদীসের ভিতর থেকে মাসায়েলগুলো বের করে, আলাদা আলাদা শিরোনাম দিয়ে দিয়ে, নির্দিষ্ট আকারে লিপিবদ্ধ করে উম্মতের জন্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।
তখন মুজতাহিদের অনুসারীরা সেসব মাসায়েল অনুপাতে দ্বীন পালন করে, আর মাসায়েল বের করে দিয়ে ইহসানকারী মুজতাহিদ ইমামদের জন্য দুআ করে। কিন্তু ইবাদত করে আল্লাহর।
লা-মাযহাবী হল, সে ব্যক্তি, যার উপকারী পানির কূপ খননেরও ক্ষমতা নেই, আবার যিনি খনন করেছেন, তার থেকে পানিও আহরহন করে না, বরং একবার এক ডুবায়, আরেকবার আরেক ডুবায় মুখ দেয়, তার নাম হল, লা-মাযহাবী বা গায়রে মুকাল্লিদ।
উপমা নং-৩
নামাযের ইমামগণ ইমাম হবার কারণে তারা সরাসরি আল্লাহর ইবাদত করে, আর মুসল্লিরা ইমামের অনুসরণে ইবাদত আল্লাহরই করে। কিন্তু বাহ্যিকভাবে অনুসরণ করে ইমামের।
তেমনি মুজতাহিদগণ ইমাম হবার কারণে তারা সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মাসায়েল বের করে আমল করেন, আর মুকাল্লিদগণ মুজতাহিদ ইমামদের অনুসরণে ইবাদত করে আল্লাহর। কিন্তু বাহ্যিকভাবে অনুসরণ করে মুজতাহিদ ইমামের।
লা-মাযহাবী বা গায়রে মুকাল্লিদ হল ঐ ব্যক্তি, যে মসজিদের ইমাম হবার যোগ্যতাও রাখে না, আবার মুক্তাদীও হয় না, বরং মাঝখানে দাঁড়িয়ে ইমাম ও মুসল্লির মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে।
উপমা নং-৪
বাংলাদেশের সংবিধানের কোন আইনী জটিলতায় কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে, উক্ত ব্যক্তি সংবিধান বিশেষজ্ঞ উকীলের কাছে গমণ করে। আর উক্ত উকীলের পথনির্দেশনায় মুআক্কিল ব্যক্তি বাংলাদেশের সংবিধান মান্য করে।
এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি উকীলের নির্দেশনা মানার কারণে মুআক্কিলকে সংবিধান বিরোধী আখ্যায়িত করে না। করাটা আহমকী ছাড়া আর কী’বা হতে পারে?
তেমনি কুরআন ও সুন্নাহ হল আল্লাহর দেয়া সংবিধান। যারা এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ নয়, তারা উক্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ইমামদের পথনির্দেশনায় আল্লাহর সংবিধান মান্য করে থাকে।
যে আইন বুঝেও না, আবার আইনজ্ঞের কাছে যায় না, নিজে নিজেই পণ্ডিতি করে ধরা খায়, তার নাম লা-মাযহাবী বা গায়রে মুকাল্লিদ।
আশা করি মাযহাবের অনুসরণের হাকীকত পরিস্কার হয়ে গেছে। মাযহাব মানা মানে কুরআন ও হাদীসের ভিন্ন কিছু মানা নয়। বরং কুরআন ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির পথনির্দেশনায় কুরআন ও হাদীস মানার নাম হল মাযহাব অনুসরণ। আর কুরআন ও হাদীস না বুঝার পরও নিজের উদ্ভট বুঝ অনুপাতে দ্বীন মানার নামই হল “লা-মাযহাব” বা গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত।
শেষ কথার জবাব
আপনি যদি কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে সম্মক অবগতি না থাকা সত্বেও কুরআন ও হাদীসের নামে উদ্ভট সব কথা বলেন, তখন কুরআন ও সুন্নাহ বিশেষজ্ঞের দিকনির্দেশনা অনুপাতে দ্বীনে শরীয়ত মান্যকারীরাতো আপনার এ অপরিণামদর্শী মুর্খতাকে বাঁধা দিবেই। এটা কি স্বাভাবিক নয়?
মাযহাব ও তাকলীদ ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে আরো গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হলে পড়ুন ও দেখুন
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস– মাদরাসা উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]
জাযাকাল্লাহ
আপনার কথাগুলোর সাথে একমত এবং কথায় যুক্তি ও বাস্তবতা রয়েছে।।।