প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / জীবদ্দশায় মেয়েকে সমুদয় সম্পদ লিখে দেয়া এবং শরয়ী বন্টন নীতি প্রসঙ্গে

জীবদ্দশায় মেয়েকে সমুদয় সম্পদ লিখে দেয়া এবং শরয়ী বন্টন নীতি প্রসঙ্গে

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম।

আমার নাম ইকবাল মাহমুদ। আমার দুটি প্রশ্ন আছে। একটি হল, পিতা তার জীবদ্দশায় একমাত্র মেয়েকে তার সমুদয় সম্পত্তি লিখে দিতে পারবেন কি?

অন্যটি হল, আমরা ২ ভাই ১ বোন। আমার বাবার ঢাকায় ২টি বাড়ি এবং গ্রামের বাড়িতে ৭০০ গাছ সহ আড়াই বিঘা জমি আছে। এবং ব্যাংক-এ ৬/৭ লাখ টাকা আছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, তিনি এখনও ভাল আছেন। যদি তিনি বণ্টন করতে চান তাহলে কিভাবে করলে তা সুষম হবে?

দয়া করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমাকে যুক্তি সহকারে এর সদুত্তর জানাবেন।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

১ম প্রশ্নের জবাব

হ্যাঁ, পিতা তার জীবদ্দশায় সুস্থ্য থাকা অবস্থায়, যে কাউকে তার সমুদয় সম্পত্তি লিখে দিতে পারে। সেই হিসেবে যে কোন সন্তানকেও সমুদয় সম্পত্তি লিখে দিতে পারে। সুতরাং মেয়েকেও লিখে দিতে পারবে। মৃত্যুর পর যাকে সম্পদ লিখে দেয়া হয়েছে, তাকে ছাড়া আর কেউ উক্ত সম্পদের হকদার হবে না।

বাকি কাউকে ঠকানোর উদ্দেশ্য সমুদয় সম্পদ লিখে দিলে কাজটি প্রয়োগ হয়ে গেলেও ব্যক্তি গোনাহগার হবে।

وفى الهندية- ولو وهب رجل شيئا لأولاده في الصحة وأراد تفضيل البعض على البعض في ذلك لا رواية لهذا في الأصل عن أصحابنا، وروي عن أبي حنيفة – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا كان التفضيل لزيادة فضل له في الدين، وإن كانا سواء يكره وروى المعلى عن أبي يوسف – رحمه الله تعالى – أنه لا بأس به إذا لم يقصد به الإضرار، وإن قصد به الإضرار سوى بينهم يعطي الابنة مثل ما يعطي للابن وعليه الفتوى هكذا في فتاوى قاضي خان وهو المختار، – (الفتاوى الهندية، كتاب الهبة، الباب السادس في الهبة للصغير ٤/٣۹۱، رد المحتار-12/608)

فى البيضاوى- والمالك هو المتصرف فى الأعيان  المملوكة كيف شاء الخ (تفسير بيضاوى، سورة الفاتحة- 1/7)

বস্তুর মালিক বস্তুতে যেভাবে ইচ্ছে হস্তক্ষেপ করেতে পারে। {তাফসীরে বায়যাবী-১/৭}

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ، قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»

অর্থ- হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ওয়ারিসকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের মিরাস থেকে বঞ্চিত করবেন। {ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ২৭০৩, সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-২৮৫}

২য় প্রশ্নের জবাব

আপনার এ প্রশ্নটির জবাব আসলে ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। এ বন্টনটি কি জীবদ্দশায় করতে চান? নাকি মৃত্যুর পর হিসেবে করতে চান?

দু’টির হিসেব ভিন্ন।

যদি জীবদ্দশায় করতে চান। তাহলে এর জবাব প্রথম প্রশ্নের জবাবে অতিক্রান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার পিতার ইচ্ছে। যাকে যত ইচেছ দান করতে পারেন। ইচ্ছে হলে কাউকে বেশি, কাউকে কম, বা সবাইকে সমান সমান সম্পদ দিতে পারেন। এটি সম্পূর্ণই তার এখতিয়ার। এক্ষেত্রে ইনসাফের সাথে বন্টন করাই শরীয়তের পরামর্শ।

ইনসাফ বলতে। যেমন দুই ভাইয়ের মাঝে এক ভাই দারিদ্র। আরেক ভাই ধনী। তাহলে ধনী ভাইকে কম সম্পদ আর গরীবকে বেশি সম্পদ প্রদান করা। আর যদি মেয়ে অসহায় থাকে, তাহলে তাকেও বেশি সম্পদ প্রদান করা। মোটকথা, আপনার বিবেকই বলে দিবে কোনটি সঠিক হবে। আর কোনটি বেঠিক হবে। শরয়ী বিধান এখানে মৃত্যুর আগে বন্টনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে স্বাধীনতা প্রদান করেছে। বাকি ইনসাফ রক্ষা করার তাগিতও প্রদান করে।

আর যদি মৃত্যুর পরের শরয়ী বন্টন নীতি অনুপাতে জীবদ্দশায়ই বন্টন করতে চান।

তাহলে এক্ষেত্রে দেখতে হবে আপনার আর কোন নিকটত্মীয় আছে কি না? যেমন আপনার পিতার পিতা বা মা। আপনাদের মা প্রমূখ।

এরকম নিকটত্মীয় সবার নাম না বললে মৃত্যু পরবর্তী শরয়ী বন্টন নীতি বলা সম্ভব হবে না। সবার নাম বলতে হবে। তারপর শরয়ী বন্টন নীতি বলা সম্ভব হবে।

যদি আর কোন নিকটাত্মীয় না থাকে। শুধুই আপনারা দুই ভাই ও এক বোন থাকেন। তাহলে মৃত্যু পরবর্তী হিসেবে শরয়ী বন্টন নীতি হল। আপনার পিতার সমুদয় সম্পদকে মোট ৫ ভাগে ভাগ করা হবে। তারপর দুই ভাগ দুই ভাগ করে আপনাদের দুই ভাই নিবে। অর্থাৎ আপনাদের দুই ভাই পাবে ৪ ভাগ। আর এক ভাগ পাবে আপনার বোন।

وصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ [٤:١١]

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। কিন্তু কেবল কন্যা যদি দুয়ের অধিক হয়, তাহলে তাদের জন্য পরিত্যাক্ত সম্পত্তির দুই তৃতিয়াংশ, আর মাত্র এক কন্যা থাকলে তার জন্য অর্ধাংশ নির্ধারিত। {সূরা নিসা-১১}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *