প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে কী করবে?

স্বামী স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হলে কী করবে?

প্রশ্ন

তানভীর আহমেদ

আমি বিবাহিত।  বিয়ের বয়স ১ বছর ১০ মাস। আমাদের এখন পযন্ত কোন সন্তানাদি নেই। বিয়ের পর হতে আমার স্ত্রীর সাথে আমার বনিবনা হচ্ছে না। এতদিন ভেবেছি হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। আমি আমার স্ত্রীর কোন দোষ এই জনসন্মুখে তুলছি না। আমি এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। আমি তাকে তালাক দিতে চাই। দয়া করে ইসলামের আলোকে প্রচলিত প্রক্রিয়া টি জানাবেন। উত্তর এর অপেক্ষায় রইলাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামের মৌল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে। তিন তালাকের নয়। আবারো বলি ইসলামে তিন তালাক দেয়া জায়েজ নয়। তবে তিন তালাক দিলে পতিত হয়ে যায়। যেমন কাউকে হত্যা করা জায়েজ নয়। কিন্তু হত্যা করলে হত্যা সংঘটিত হয়ে যায়।

তেমনি তিন তালাক এক সাথে দেয়া জায়েজ নয়। তবে দিলে পতিত হয়ে যায়। তাই আপনি যদি একদম নিরূপায় হয়ে গিয়ে থাকেন। কোন ভাবেই সম্পর্কটিক্ আর টিকিয়ে রাখতে না পারেন, তাহলে লিখিত বা মৌখিকভাবে এক তালাক দিয়ে দিন। দুই বা তিন তালাক নয়। এক তালাক দেয়ার পর আপনার স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময়ে আপনাদের উভয়ের মাঝে বনিবনা হয়ে গেলে আবার তাকে বিয়ে করা ছাড়াই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। আর যদি ইদ্দতের সময় শেষ হয়ে যায়, তাহলে স্ত্রী আপনার বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গেছে। তাকে যদি আবার ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে তাকে আবার মোহব ধার্য করে বিয়ে করে ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুবা আপনার স্ত্রী অন্য যে কারো সাথে তখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আশা করি পূর্ণ মাসআলাটি পরিস্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

فى الفتاوى الهندية- وَإِذَا طَلَّقَ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ تَطْلِيقَةً رَجْعِيَّةً أَوْ تَطْلِيقَتَيْنِ فَلَهُ أَنْ يُرَاجِعَهَا فِي عِدَّتِهَا رَضِيَتْ بِذَلِكَ أَوْ لَمْ تَرْضَ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ (الفتاوى الهندية-1/470، هداية-2/394

فى الفتاوى الهندية-إذا كان الطلاق بائنا دون الثلاث فله أن يتزوجها في العدة وبعد انقضائها وإن كان الطلاق ثلاثا في الحرة وثنتين في الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيره نكاحا صحيحا (الفتاوى الهندية-1/472-473

কোন মানুষের সব কিছুই ভাল লাগবে এমন নয়। এ কারণেই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩}

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪}

এ কারণে যথাসাধ্যা চেষ্টা করুন যেন তালাক না হয়। উভয় উভয়কে বুঝতে শিখুন। পারস্পরিক অধিকারের প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হোন। আল্লাহ তাআলা আপনাদের পরিবারকে সুখি রাখুন। ভাঙ্গন থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. Jajakallah Khair for the details.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *