প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / ‘মিথ্যা বলে আল্লাহ যেন আমাদের বিয়ে কবুল না করে” বিয়ের আগে বলার দ্বারা কি বিয়ের পর তালাক হয়ে যায়?

‘মিথ্যা বলে আল্লাহ যেন আমাদের বিয়ে কবুল না করে” বিয়ের আগে বলার দ্বারা কি বিয়ের পর তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন

প্রিয় হুজুর, সালাম নিবেন।অনেক বেশি পেরেশানিতে আছি বিয়ের পূর্বে শর্তযুক্ত তালাক  বিষয়ক মাসআলা নিয়ে।লেখাটি বড় হলেও দয়া করে সম্পূর্ণ পড়ে,বুঝে কোরআন হাদীসের আলোকে সঠিক মাসআলা দিবেন।প্রেম করে বিয়ে করেছি ২.৫ বছর হলো প্রায়। তালাক শব্দটা বারবার লিখতে ভয় হয় তাই তামাক শব্দটি লেখলাম আশা করি বুঝে নিবেন।

বিয়ের আগের ঘটনাসমূহ

আমরা সমবয়সী ক্লাসমেইট ছিলাম। তাকে ১টা ছেলে পছন্দ করত। একদিন ছেলেটি তার সম্পর্কে আমাকে বাজে কথা বলল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ ছেলের সাথে কোন রিলেশন ছিল কিনা। সে প্রথমে না করেছিল। পরে যখন কসম কাটিয়ে শপথ করে বলিয়েছি  তখন সে বলছে যে রিলেশন ছিল।

সেই তখন থেকেই সন্দেহ শুরু। আমি তাকে কয়েকদিন পরপর বারবার এসব জিজ্ঞাসা করেছি। এখনও সময় আছে সত্য বল যে খারাপ কোন রিলেশন ছিল কিনা বা এই সেই। এখন মিথ্যা বলে পার পেলেও বিয়ের পরে পার পাবানা। বিয়ের ১ম রাতেই ধরব আমি।

আমি তাকে বলে বলে শিখিয়ে দিয়ে যেভাবে শপথ করাতাম

আমি এখন যা যা প্রশ্ন করব এই মুহুর্তে যতটুকু শিওর মনে পড়বে সব সত্য বলব, মনে থাকা সত্বেও (সামান্য পরিমান/মাঝে মাঝে জাররা পরিমান শব্দটাও বলতাম) লুকাবনা বা ইচ্ছে করে গোপন করবনা। মনে থাকা সত্বেও যদি গোপন করস তাহলে আল্লাহর কসম করে বল আল্লাহ যেন আমাদের বিয়ে কবুল না করে। আর কবুল করলেই কি ১ম রাতেই তো তালাকের শর্ত দিয়ে এমনভাবে প্রশ্ন করব যে তখন তো মিথ্যা বলতে পারবিনা। সত্য বের হবেই। আর বের হলেই তো তামাক  দিয়ে দিব/হয়ে যাবি। সন্দেহের বশে বিয়ের আগে এরকমভাবে অনেক অনেকবার তাকে অসংখ্য প্রশ্ন করেছি। যেমন-কেমন প্রেম ছিল, ফোনে কি ধরনের কথা বলেছে, কোন খারাপ কথা/সম্পর্ক ছিল কিনা…এই সেই অনেক প্রশ্ন।

অনেক সময় তাকে এমনি এসব মিথ্যা শপথ/পরীক্ষা করে দেখতাম যে দেখি এভাবে সে শপথ করার সাহস করতে পারে কিনা। কারন হয়তো এতবড় শপথ করে সেতো মিথ্যা বলতে পারবে না এজন্যই বেশি বেশি এসব মিথ্যা ভয় দেখাতাম।

তার উত্তর তখন যেমন ছিল

যতবার এমনভাবে শপথ করিয়ে জিজ্ঞাসা করেছি বেশিরভাগ সময়ই সে বলত দেখ ওর সাথে প্রেম ছিল ৫,৬ বছর আগের কথা। ফোনে কথা বলেছি অনেক। তখন কি কি কথা বলেছি, খারাপ কোন কথা ছিল কিনা, বলে থাকলেও এতসব এখন তো ১০০% মনে করা সম্ভব না। বলার সময় মনের অজান্তেই অনেক কিছু তো মিসিং হতেই পারে। যতটুকু এই মুহুর্তে শিওর মনে পড়ছে তাই বলছি তবে মনে থাকা সত্বেও লুকাবনা তবে অনেক কিছু মিসিং হতেই পারে। আমিও তাই বলতাম যে যতটুকু শিওর মনে আছে তাই বল। কোনকিছু শিওর মনে না হলে সেটা বলার দরকার নাই।

**পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের দিন অনেক ভয় হচ্ছিল যে আমি যে এতদিন এসব শপথ করিয়ে প্রশ্ন করেছি এখন বিয়ে কবুল হবে কিনা। বিয়ের দিন এটাই বড় ভয় ছিল। আর কবুল হলেও তামাক হয়ে যায় কিনা কেননা বিয়ের পর ধরব তাকে তখন সত্য বের হলে তামাক হবি/দিব এই সেই বলছি। আবার পরক্ষনেই মনে হত সমস্যা কি আমিতো মন থেকে এসব বলিনি জাস্ট সত্য বের করার জন্য মিথ্যা ভয় দেখিয়েছি। তখন মনে হচ্ছিল তামাক হবে কেন আমিতো বিয়ের পরে তামাকের শর্ত দিয়া কোনদিনই তাকে এসব প্রশ্নই করবই না।

সারাদিন নামাজ পরে, সিজদায় পরে দোয়া করেছি আল্লাহ যেন বিয়ে কবুল করে নেয়, তামাক যেন না হয়। তামাক নিয়ে বেশি ভয় হয়নি কেননা বিয়ের পরেতো জিজ্ঞাসা করবই না কিন্তু বিয়ে কবুল হওয়া নিয়ে ভয় হয়েছে অনেক।

বিয়ের পরের ঘটনা

বিয়ের পরে তামাকের শর্ত দিয়ে আজ পর্যন্ত জিজ্ঞাসা কখনো করিনি। ইউটিউবে ওয়াজ শুনার অভ্যাস আছে আমার। হঠাৎ একদিন বিয়ের পূর্বেই তামাক এরকম ১টা ভিডিও সামনে আসল আমিও শুনলাম। ভয় পেয়ে গেলাম। তখন থেকেই তামাক বিষয়ক যত ভিডিও সব দেখলাম বা গুগলে যত লেখা আছে সব পড়লাম। শুরু হলো আমার ভয়/সন্দেহ। ঘুমাতে পারতাম না। না চাইলেও সারাক্ষণ এসবি মাথায় আসত। কিভাবে কি শপথ করিয়েছিলাম এই সেই…। এখন নানান ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

যেমন

১। বিয়ের আগে যে বলতাম বিয়ে করে লাভ কি ১ম রাতেই তো তামাকের শর্ত দিয়ে এমনভাবে জিজ্ঞাসা করব যে জাররা পরিমান সত্য থাকলেও সেটা বের হবেই। আর বের হলেই ১ম রাতেই তো তামাক হয়ে যাবি/দিব।আমার ভয়/সন্দেহটা হচ্ছে এখানেই যে, এতবার বলার মাঝে কখনো কি শুধু এইটুকু বলেছিলাম  কিনা যে বিয়ে হয়ে/কবুল হয়ে লাভ কি বুঝতেই আছস তামাক হয়ে যাবি/দিব (যদি এটি বলেও থাকি সেটা দ্বারা সরাসরি বিয়ের সাথে তামাক হওয়া বুঝায়নি, ওইযে বিয়ের রাতে তামাকের শর্ত দিয়ে জিজ্ঞেস করব ওটাকেই হয়তো বুঝিয়েছি)

২। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সেদিন মনে হলো যে এমনভাবে কি  বিয়ের আগে যে শপথ করিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিনা, যে মিথ্যা বললে কিন্তু আল্লাহ বিয়ে কবুল করবে না (আর কবুল করলেই কি সঙ্গে সঙ্গেই তামাক হয়ে যাই/যাবি/দিব) এমনটা এই শপথের সাথে কখনো বলেছিলাম কিনা এইটা নিয়েও সন্দেহ হচ্ছে।এই সন্দেহ টাই বেশি ডাড়া করে বেড়াচ্ছে।

এই ১ ও ২ নং ভয়/সন্দেহটাই ১ বছর থেকে দিন রাত সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে হয়তো বলছি। আবার মনে হচ্ছে  এরকমভাবে বলার তো প্রশ্নই আসেনা।বললে তো বিয়ের দিন সারাদিন যখন ভাবলাম তখন তো মনে পড়তো। তখনতো এগুলো মনে হয়নি। এখন কেন সন্দেহ/ভয় হচ্ছে বললাম কিনা?দিন যত যাচ্ছে ভয়/সন্দেহ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। আর নিতে পারছি না।আমি তাকেও বলেছিলাম মনে করে দেখতো এসব বলছিলাম কিনা, সেও সঠিক মনে করতে পারছেনা। এ কোন জেলখানায় পরেছি আমি।নামায পরে কত কেদেছি। কত দোয়া করেছি।আগে তামাক বিষয়ে এত কিছু জানতাম না। সন্দেহের বশে তামাক হয়না জানি তাও এখান থেকে বের হতে পারছিনা। সন্তান নেয়ার জন্য সবাই প্রতিনিয়ত প্রেশার দিচ্ছে ভয়ে নিতেও পারছিনা। সে আসলেই অনেক ভালো একটি মেয়ে। আমি এখন অনেক অনুতপ্ত।বিয়ের আগে না বুঝেই তার উপর অনেক জুলুম করেছি। তার শাস্তি এখন আমি পাচ্ছি। এর থেকে মরে গেলেও আমি শান্তি পেতাম।একটি সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছি। অনেক দায়িত্ব আমার কাধে কিন্তু কোন কাজেই মন দিতে পারছি না। চাইলেই হয়তো ঘুষ বানিজ্য করে আলিসান জীবনযাপন করতে পারতাম কিন্তু হারাম খাবার খেয়ে নামাযে দাড়ানোর মত সাহস নেই আমার। কেননা হারামে ইবাদত কবুল হয়না। করজোর অনুরোধ করছি দয়া করে ভাল করে পড়ে,বুঝে সঠিক মাসয়ালা দিবেন। পরকালে জান্নাত চাই আমি। এর জন্য হাজার কষ্ট হলেও যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিব আমি।

আর যদি সমস্যা না থাকে তবে কি আরেকবার বিয়ে করা  নেয়া উচিৎ??(তাতে যদি ভয়/খুতখুতি/সন্দেহ একটু  কমে ও একটু যদি মানসিক শান্তি পাই)।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে বিবাহের আগের কথোপকথনে কোন প্রকার শর্তযুক্ত তালাক হয়নি। বিবাহের পরও কোন তালাক হয়নি।

সুতরাং অহেতুক পেরেশান হবার কিছু নেই।

আপনার জন্য পরামর্শ হলো:

আজ থেকে তালাকের কোন প্রকার মাসআলা পড়বেন না।

যত ওয়াসওয়াসাই আসুক কাউকে তালাক সংক্রান্ত মাসআলা জিজ্ঞাসা করবেন না। তালাক বিষয়ক আলোচনাও কারো সাথে করবেন না। মনকে দৃঢ় রাখবেন আপনার কোন তালাক হয়নি,বা হবেও না।

তালাকের ওয়াসওয়াসা আসলে মনকে দৃঢ় করে ফেলবেন যে, আমার দ্বারা কোন তালাক হয়নি। এটা শয়তান আপনাকে কষ্ট দিতে মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, শয়তান মুমিনকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়।

তালাকের ওয়াসওয়াসা আসতে শুরু করলে, স্ত্রীর সাথে বা কাছের বন্ধুদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠার চেষ্টা করবেন। বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে ফেলবেন।

একা থাকবেন না। যখনি ওয়াসওয়াসা শুরু হবে, তখনি স্ত্রীর সাথে বা কাছের কোন আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে অন্য কোন বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করবেন।

বেশি বেশি ইস্তিগফার এবং সূরা ফালাক ও সূরা নাস এর আমল করবেন।

একজন বিশেষজ্ঞ মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

 

منها شك هل طلق أم لا لم يقع (الأشباه-108، جديد-196)

عدم الشك من الزوج فى الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بوقوعه (بدائعل الصنائع، كتاب الطلاق، فصل فى الرسالة-3\126، جديد-3\199)

يشترط بالاتفاق القصد فى الطلاق، وهو إرادة التلفظ به ولو لم ينو فلا يقع طلاق فقيه يكره ولا طلاق حاك عن نفسه أو غيره لأنه لام يقصد معناه، بل قصد التعليم والحكاية، (الفقه الاسلام وادلته، كتاب الطلاق، باب شروط الطلاق-7/368)

لو كرر مسائل الطلاق بحضرة زوجته ويقول: أنت طالق ولا ينوى طلاقا لا تطلق، (فتح القدير، كتاب الطلاق، باب ايقاع الطلاق-4/4)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected] 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *