প্রচ্ছদ / চিকিৎসা/তদবীর / হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে কমিশন গ্রহণ কি জায়েজ?

হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে কমিশন গ্রহণ কি জায়েজ?

প্রশ্ন

সম্মানিত মুফতি সাহেব হুজুর!!!আল্লহ  সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আপনাকে ও আপনাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। দুনিয়াতে সম্মানিত ও প্রশস্ত রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন!!! আপনাদের সমস্ত কাজগুলোকে আসান ও কবুল করে নিন!!!

হুজুর আমি একটি হাসপাতালের সেবার সাথে যুক্ত হতে চাচ্ছি।

এখানে মাশাআল্লাহ শরীয়াতকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও কিছু দিকে ত্রুটি রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। যেমন কখনো কখনো পুরুষ চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়ে পড়ে মহিলা রোগীদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য। তবে দিনের পর দিন শরয়ী ব্যবস্থাপনা আর উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের আলেমদের একটি ভরসার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি রূপ নিচ্ছে।তবে প্রতিষ্ঠানটি সাথে আর্থিক ভাবে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আমার কিছু সংশয় তৈরি হচ্ছে সেগুলো সমাধান আপনার খেদমতে আরজ করছি…

  1. আমি এমন প্রতিষ্ঠানে রোগী প্রদান করতে পারব কিনা??

 

  1. আমি রোগী প্রদান করার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান যে লভ্যাংশটুকু পাচ্ছে সেখান থেকে আমাকে বিনিময়ে 10% প্রদান করতে চাচ্ছে আমার পরিশ্রমের বিনিময়ে। এটি আমার জন্য জায়েজ হবে কিনা??

 

  1. আমি যেখান থেকে রোগী সংগ্রহ করি যেমন: গ্রাম্য চিকিৎসকদের কাছ থেকে, তারা এভাবে শর্ত জুড়ে দেন যে প্রতিষ্ঠান বিল করবে 13000 টাকা। আর সেই বিল থেকে তাকে দিতে হবে দু হাজার টাকা। আর আমি যে রোগী দিলাম বা রোগীর ব্যবস্থা করে দিলাম এর বিনিময়ে তারা আমাকে এক হাজার টাকা প্রদান করবে। তখন প্রতিষ্ঠান থাকছে 10 হাজার টাকা। তবে সেবায় কোন ত্রুটি ঘটে না। আর এই ধরণের অপারেশন এর জন্য একই মানের অন্য প্রতিষ্ঠানে বিল করা হয় ষোল থেকে সতেরো হাজার টাকা। উপরোক্ত সূরতে আমার জন্য টাকা নেয়া জায়েজ হবে কিনা??

 

  1. রোগীকে আমি নিয়ে আসলাম, হাসপাতালে সাথে চুক্তি করে নিলাম বিল আমিই করব আপনাদেরকে আমি একটি নির্ধারিত অংশ দিব বাকিটুকু আমার, যেমন আমি একজন রোগী নিয়ে আসলাম, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমি চুক্তি করলাম বিল আমিই করব। আমি বিল করলাম ১২,০০০ টাকা। হাসপাতালকে দিলাম ১০,০০০ টাকা। বাকি দুই হাজার টাকা কি আমার জন্য জায়েজ হবে?? এ টাকাটা আমি নিতে চাচ্ছি পারিশ্রমিক হিসেবে কারণ এ রোগীটিকে এখানে নিয়ে আসার পিছনে আমার যথেষ্ট শ্রম দিতে হয়েছে।

 

৫. আমি হাসপাতালে রোগী দিব— এই শর্তে তারা আমাকে নিয়োগ দিলো। এর জন্য বেতন নির্ধারণ করলো ৫০০০ টাকা। তারপর যত রোগী আমি আনবো প্রত্যেক রোগীর ওপর আমাকে এক হাজার টাকা করে দিবে। এভাবে টাকা নেয়া কি জায়েজ হবে? আমার কষ্ট করে রোগী আনার পারিশ্রমিক হিসেবে তারা আমাকে টাকাটা দিতে চাচ্ছে।

 

  1. যেহেতু হাসপাতালটি মূলত মহিলাদের কে সেবা প্রদান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে কিন্তু কখনো কখনো অপারেশন থিয়েটারে মহিলা চিকিৎসকদের পাশাপাশি পুরুষ চিকিৎসকদেরও দাঁড়াতে হয় এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে শরীয়তের আহকাম জানতে চাচ্ছি এবং করনীয় কি যা তা জানতে যাচ্ছি।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিষ্ঠান সেবার মান যথেষ্ট উন্নত, মোটামুটি শরিয়াভিত্তিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো হয়,বিল কম করা হয়, পর্দার ব্যাপারে খুব খুব খেয়াল রাখা হয়, এসব কারণে আমি সেখানে রোগী দেয়ার ব্যাপারটা চিন্তা করছি,এবং সেখানকার সেবার সাথে নিজেকে যুক্ত করার চিন্তা করছি।রোগী আনার ব্যাপারে আমি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বদনাম করি না বরং শুধুমাত্র এ প্রতিষ্ঠানের সুবিধাগুলো তুলে ধরি।

যদি উপরোক্ত সবগুলো পদ্ধতি শরীয়ত সম্মত না হয় তাহলে আমি কিভাবে শরীয়ত মোতাবেক ওই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা উপার্জন করতে পারি সে ব্যাপারে আমাকে দিকনির্দেশনা দিলে মেহেরবানি হয়!!

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার জন্য উক্ত হাসপাতালে রোগী প্রদান করে কমিশন হিসেবে অর্থ গ্রহণ জায়েজ আছে।

তবে হাসপাতালের সেবার মান উন্নত না হলে সেখানে রোগী পাঠানো জায়েজ হবে না।

আর মহিলা ডাক্তার না থাকা অবস্থায় জরুরত হলে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করা জায়েজ আছে। তবে মহিলা ডাক্তার থাকা অবস্থায় জায়েজ নেই।

ولم ير ابن سرين وعطاء وابراهيم والحسن بأجر السمسار بأسا (صحيح البخارى، النسخة الهندية-1/303)

سئل محمد بن سلمة عن أجرة السمسار، فقال: ارجو أنه لا بأس به،…… لكثرة التعامل (رد المحتار، زكريا-9/87، كرتاشى-6/63، تاتارخانية-15/137، رقم-22462)

وَيحرم النّظر إِلَى الْعَوْرَة إلاَّ عِنْد الضَّرُورَة كالطبيب (ملتقى الأبحر مع مجمع الانهر، كتاب الكراهية، فصل فى النظر-4/199، تبيين الحقائق، كتاب الكراهية، فصل فى النظر واللمس-7/38، الفتاوى السراجية، كتاب الكراهية، باب النظر واللمس-73، حاشية صحيح البخارى-1/403)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected] 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *