প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণের অনুমতিপ্রাপ্তির পর পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করলে তালাক হবে?

স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণের অনুমতিপ্রাপ্তির পর পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করলে তালাক হবে?

প্রশ্ন

জরুরি সমাধান কামনা করছি।

আসসালামু আলাইকুম

হযরত

তালাক চেয়ে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী থেকে অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি সংক্ষেপে আপনাকে বলছি।

বনিবনা হয়না তাই আর সংসার করবেনা স্ত্রী। তাই স্বামীকে ফোন কল করেছে পাঁচ মাস বাবার বাড়ি অবস্থান করার পর। যা নিম্নরূপ:

স্ত্রী: আমিতো আপনার সংসারে যাবোনা এটা আপনি ভালো করেই জানেন।

স্বামী: হ্যাঁ।

স্ত্রী: তাহলে বসে আছেন কেন? আমাকে ছাড়েন না কেন?

স্বামী: আমি ছাড়তাম কি জন্য? তুই আগে অন্য জনের সাথে বিয়ে বসছোস, ১৪ জনের সংসার করছোস, তোরে আবার ছাড়া লাগে কেন?

 

স্ত্রী: তাহলে কি আমি ছাড়তাম?

স্বামী: তোরা আমার কাছ থেকে চক্রান্ত করে টাকা নিছোস, আমি তোদের নামে মামলা করবো ইত্যাদি।

স্ত্রী: আপনার যা মন চায় করেন সমস্যা নেই।

স্ত্রী: আচ্ছা এখন আপনি (সম্পর্ক) শেষ করবেন, না আমি শেষ করবো?

স্বামী: তুই পারলে কর।

স্ত্রী: আবার বলল, পারলে আমি (শেষ) করে ফেলতাম?

স্বামী: হ্যাঁ কর।

এরপর আরো কিছু কথা হলো,,,

স্ত্রী: আমার অনুমতি দরকার ছিল, আমি অনুমতি পাইছি।

স্বামী: আরো কিছু কথা বলল,,,,

স্ত্রী: আপনার যা খুশি করেন, আমার কাজ (তালাক) আমি করতেছি।

স্বামী: কর গিয়ে অশুবিধা নাই। তুই যে আগে আরেকজনের সংসার করছোস তা তো তোর বাপে আমারে বলেনি।

এরপর স্ত্রী আরো কিছু কথা বলার পর সমাপ্তি ঘটে।

এই হলো স্ত্রীর তালাকের অনুমতি পাওয়ার কথা-বার্তা।

এই অনুমতি থেকে স্ত্রী নিজের উপর তিন তালাক গ্রহণ করেছে এভাবে যে, আমার স্বামীর দেওয়া ক্ষমতা বলে,আমি আমার নিজের উপর এক তালাক গ্রহণ করলাম, দুই তালাক গ্রহণ করলাম, তিন তালাক গ্রহণ করলাম।

এরপর ইদ্দত শেষ করে স্ত্রী অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করতেছে।

নোটঃ স্বামী জানতো যে, স্ত্রী আর তার সংসারে যাবেনা, যা সে স্বীকার করেছে ফোন কলের শুরুতেই। কারণ স্বামীর বয়স ৬১ বছর আর স্ত্রীর বয়স ৩০ বছর। স্বামী বদ মেজাজি, বনিবনা হতোনা এবং স্বামী শারীরিক ভাবে মেলামেশায়ও অক্ষম।

মোহর চার লক্ষ টাকা ছিল, তার মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা উসুল আর বকেয়া আছে আড়াই লক্ষ টাকা।

( হয়তো টাকা পরিশোধের ভয়ে স্বামী তালাক না দিয়ে স্ত্রীর পক্ষ থেকে সম্পর্ক শেষ হোক এটা চাইছে সম্ভবত )

এখানে লক্ষ করুন যে, ফোনে কথা শুরু হয়েছে তালাক চাওয়া নিয়ে। তালাক সম্পর্কিত ও অন্যান্য কথাবার্তার এক পর্যায়ে

স্ত্রী বলেছিল–

১) আচ্ছা এখন আপনি (সম্পর্ক) শেষ করবেন, না আমি শেষ করবো?

স্বামী বলেছে, তুই পারলে কর।

স্ত্রী: আবার বলল, পারলে আমি (শেষ) করে ফেলতাম?

স্বামী বলেছে, হ্যাঁ কর। তারপর আরো কিছু কথা বলার পর-

২) স্ত্রী বলেছে, আমার অনুমতি দরকার ছিল, আমি অনুমতি পাইছি।

( এখানে স্বামী অন্যান্য কথা বললেও স্ত্রীর অনুমতির দাবি অস্বীকার করেনি )

৩) স্বামী আরো কিছু কথা বলার পর স্ত্রী বললো, আপনার যা খুশি করেন, আমার কাজ (তালাক) আমি করতেছি।

স্বামী বলেছে, কর গিয়ে অশুবিদা নাই। তুই যে আগে আরেকজনের সংসার করছোস তোর বাপে তো তা আমাকে বলেনি।

(এখানেও স্বামী কর গিয়ে অসুবিধা নাই বলেছে )

জনাব মুফতি সাহেবের নিকট জানতে চাই, নিচের এই তিনটা পয়েন্ট বিবেচনায় নিলে শরীয়ত মোতাবেক স্ত্রী কে তালাক গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে সাব্যস্ত হয়েছে কি না? এবং স্ত্রীর তিন তালাক গ্রহণ ও ইদ্দত শেষে অন্যত্র বিয়ে ও সংসার সহীহ হচ্ছে কি না?

(অনেকে বলেছে তালাক হয়েছে, আবার কেউ কেউ বলে হয়নি)

আশা করি অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব গণ দলিল সহ দ্রুত সমাধান দিবেন।

জাযাকাল্লাহ

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বিবরণ অনুপাতে স্বামী যখন ১ম ও ৩য় সূরতে তালাকের অনুমতি প্রদান করেছে তা কথোপথনের উক্ত মজলিস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। যদি ঐ সময়ই বা ঐ বৈঠকেই স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে গেছে।

সুতরাং ইদ্দত শেষে অন্যত্র বিয়ে করাটাও শুদ্ধ আছে।

কিন্তু অনুমতিপ্রাপ্তির পর সেই বৈঠকে তালাক নিজের উপর পতিত না করে, যদি অন্য সময় নিজের উপর তালাক পতিত করে নেয়, তাহলে তালাকটি সম্পন্ন হয়নি।

উক্ত স্ত্রী তার প্রথম স্বামীর স্ত্রী হিসেবেই বাকি আছে।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

اذ قال لامرأته: اختارى ينوى بذلك الطلاق…. فلها ان تطلق نفسها ما دامت فى مجلسها ذلك، وأن تطاول يوما أو أكثر…… وإذا قامت عن مجلسها قبل ان تختار نفسها وكذا إذا اشتغلت بمعل آخر…. يبطل خيارها (الفتاوى الهندية-1/387، جديد-1/455)

قال لها اختارى: أشار بعدم ذكر قبولها إلى أنه تمليك يتم بالمملك وحده، فلو رجع قبل انقضاء المجلس لم يصح (رد المحتار، زكريا-4/552، كرتاشى-3/315)

اذا قال لها طلقى نفسك سواء قال لها إن شئت او لا، فلها ان تطلق نفسها فى ذلك المجلس خاصة (الفتاوى الهندية-1/402، رد المحتار، زكريا-4/574)

قال لها اختارى او امرك بيدك …….. او طلقى نفسك فلها ان تطلق فى مجلس عملها به مشافهة او اخبارا…. لا تطلق بعده اى بعد المجلس (رد المحتار، زكريا-4/553، كرتاشى-3/315، الفتاوى الهندية-1/387)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

ইমেইল[email protected] 

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *