লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সারকথা
১
সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে আশায়েরা ও মাতুরিদী এর মুতাকাদ্দিমীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণের বক্তব্য হল, এসব আল্লাহ তাআলার সিফাত। এসবের বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়। আর হাকীকী অর্থ আমাদের নিশ্চিতরূপে জানা নেই।
এসবের কোন একটি অর্থ নির্ধারণ করা ছাড়াই আমরা এসবকে আল্লাহর হাওয়ালা করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, এসবের যে অর্থই হোক তা আল্লাহর শান অনুপাতে যথার্থ। আমরা এর উপর ঈমান রাখি। কিন্তু বাহ্যিক অর্থ একমাত্র বলে নির্দিষ্ট করি না।
এর নাম তাফয়ীজ।
২
আশায়েরা ও মাতুরিদী মুতাআখখিরীনদের মতেও আসল হল তাফয়ীজ। তবে যেহেতু সালাফ থেকে কতিপয় স্থানে তাবীল পাওয়া যায়। তাই সাধারণ মানুষের ঈমানকে রক্ষা করার জন্য সম্ভাবনার স্তরে রেখে তাবীল করা জায়েজ আছে।
এখানে তাবীল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বাহ্যিক অর্থকে বাদ দিয়ে আল্লাহর শান অনুপাতে অন্য কোন অর্থ বলা সম্ভাবনার স্থানে রেখে। নিশ্চিতভাবে এটাই অর্থ এমন নয়।
৩
ভ্রান্ত ফিরক্বা মু’তাজিলাদের মতে এসব সিফাতের তাবীল করা ওয়াজিব।
৪
মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমারা সিফাতে মুতাশাবিহাতের বাহ্যিক অর্থকে আবশ্যক করে। তারা দাবী করে, আল্লাহ তাআলার মানুষের মতই হাত, পা, মুখ ইত্যাদি অঙ্গ আছে। তিনি মানুষের মতই বসেন, মানুষের মতই উঠেন, মানুষের মতই নড়াচড়া করেন। উপরে উঠেন নিচে নামেন ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)।
৫
সালাফী নামধারী লা মাযহাবীদের মতে আল্লাহর يد তথা হাত, عين তথা চোখ, قدم তথা পা, ইস্তিওয়া আলাল আরশ ইত্যাদি সিফাতের বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য। তাদের মতে হাত দ্বারা মানুষ যেমন ধরার কাজে ব্যবহার করে এমন হাতই উদ্দেশ্য। আর চোখের দ্বারা মানুষ যেমন দেখার কাজে ব্যবহৃত করে এমন অঙ্গই উদ্দেশ্য। পা দ্বারা মানুষ যেমন হাটার কাজে ব্যবহার করে এমন অঙ্গই উদ্দেশ্য। ইস্তিওয়া আলাল আরশ দ্বারা মানুষ যেমন কোন কিছুর উপর বসার জন্য ব্যবহার করে তেমনি উদ্দেশ্য।
অনেকটা মুজাসসিমা ও মুশাব্বিহাদের মতই তাদের আকীদা। তবে একটু পার্থক্য হল, মুজাসসিমা ও মুশাব্বিহারা বাহ্যিক অর্থকে মানুষের মত হবার দাবী করে। আর সালাফী নামধারী লা মাযহাবীরা বলে থাকে যে, এসব সিফাত মানুষের অঙ্গ প্রতঙ্গের মত নয়। বরং তা আল্লাহর শান অনুপাতে হবে। তিনি যেমন বড়, তেমন তার সিফাতগুলোও তেমন বড় বড় হবে।
আল্লাহর হাতের পরিধি কতটুকু? এটা তার শান অনুপাতে। পায়ের পরিধি কতটুকু? এটা তার শান অনুপাতে। এসবকে আল্লাহর সিফাতে জাতিয়্যাহ নামে অভিহিত করে।
আর সন্তুষ্টি, রাগ, ইস্তিওয়া আলাল আরশ, প্রথম আসমানে নেমে আসাকে সিফাতে ফে’লিয়্যাহ নামে অভিহিত করে থাকে।
তাদের বক্তব্য অনুপাতে এসবের তাবীল করা তাহরীফ তথা অর্থ বিকৃতি এবং তাফয়ীজ করা তা’তীল তথা সিফাতটিকে অস্বিকারের নামান্তর।
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হল, যেহেতু এসবের বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য। তাই সেই অর্থ গ্রহণ না করে অন্য অর্থ গ্রহণ তাহরীফের শামিল।
আর কোন অর্থই গ্রহণ না করে তাফয়ীজ করাটা মুআত্তাল তথা সিফাতটি অস্বিকারের নামান্তর।
সুক্ষ্ণ পার্থক্যটি বুঝুন
আমরা যখন বলি কোন ব্যক্তি শুনেন বা দেখেন। তখন আমরা দু’টি বিষয় বুঝতে পারি। এক হল, যিনি শুনছেন তিনি শোনার ক্ষমতা রাখেন এবং যিনি দেখছেন তিনি দেখার ক্ষমতা রাখেন। দ্বিতীয়ত তার একটি কান রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি শুনতে পেয়েছেন এবং দু’টি চোখ রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি দেখেন।
ঠিক “শুনেন বা দেখেন” কথাটি যখন আমরা আল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যবহার করি তখন এর দ্বারা কি উদ্দেশ্য?
আমরা বলি যে, আল্লাহ তাআলা শুনেন। সৃষ্টির চেয়ে আরো উত্তমভাবেই শুনেন। তার শ্রবণটা মানুষের মত নয়। তিনি সর্বশ্রোতা।
তিনি দেখেন। সৃষ্টির চেয়ে উত্তমরূপেই তিনি দেখেন। তার দেখাটা মানুষের মত নয়। তিনি সর্বদ্রষ্টা।
তবে তার শ্রবণের জন্য কান নামক কোন অঙ্গ থাকা জরুরী নয়। তিনি কিসের মাধ্যমে শুনেন? তা আমাদের জানা নেই। বাকি তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বোত্তম শ্রোতা।
তেমনি তার দেখার জন্য চোখ নামক অঙ্গ থাকা জরুরী নয়। তিনি কিসের মাধ্যমে দেখেন? তা আমাদের জানা নেই। বাকি তিনি সর্বদ্রষ্টা।
আর লা লামাযহাবীদের মতে আল্লাহর শ্রবণের জন্য মানুষের মতই কান থাকা দরকার। তেমনি দেখার জন্য চোখ থাকা আবশ্যক।
তবে সেই কান ও চোখটা মানুষের মত নয়, বরং আল্লাহর মত। যেহেতু তার মত কেউ হতে পারে না। তাই আল্লাহর কান ও চোখটা তার মতই।
তাহলে বুঝা গেল, সালাফী নামক লা মাযহাবীরা আল্লাহর শ্রবণের জন্য মানুষের মতই কানের প্রতি মুখাপেক্ষী এবং দেখার জন্য চোখের প্রতি মুখাপেক্ষী হবার দাবী করছে।
যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর শানের খেলাফ একটি বিদআতি আকীদা বৈ কিছু নয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ