প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / ব্যাঙ্গ করে তিন তালাক প্রদান করলে করণীয় কী?

ব্যাঙ্গ করে তিন তালাক প্রদান করলে করণীয় কী?

প্রশ্ন

স্বামী স্ত্রী কথা কাটাকাটি বা ঝগড়ার মাঝে স্ত্রী স্বামীকে বলছে, তুই আমারে তালাক দে,  বেশি উত্তেজিত হয়ে তারপর স্বামী স্ত্রীকে থামানোর বা বুঝানোর জন্য তালাক শব্দটি ব্যঙ্গ করে বলেছে। একাধিকবার। তিনের অধিক।

যাতে স্ত্রী চুপ হয়ে যায়। স্বামী স্ত্রীকে প্রকৃতভাবে তালাক দেওয়ার জন্য একাধিকবার বলে নাই।

স্বামী জানে না যে, তালাক শব্দটি ব্যঙ্গ করে বললে তালাক হয়ে যাবে। যদি জানতো, তাহলে ব্যঙ্গ করেও তালাক দিতো না।

বিঃদ্রঃ

স্বামী স্ত্রী তাদের দুইটি সন্তান আছে। প্রথম সন্তানটির বয়স ৩ বছর। দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ১ বছর।

অতএব, এই বক্তব্যটি স্বামী স্ত্রী দুইজনের উক্ত বক্তব্য। তাদের মনের আকাঙ্খা আবার একসাথে করা। যেহেতু স্বামীর তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না।

এখন উভয়ের শরীয়ত সম্মত করণীয় কী?

আর কোন পদ্ধতি বা সুযোগ আছে কি না?

সহজ কএকটি হালালা বা পদ্ধতি বলে দিলে উপকৃত হতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক কোন খেলনা বা ভয় দেখানোর জন্য জিনিস নয়। এটি খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। ঠাট্টাচ্ছলে কাউকে খুন করলে যেমন খুন হয়ে যায়। তেমনি ঠাট্টাচ্ছলে কাউকে তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়।

সেই হিসেবে আপনার স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গেছে। আপনার উপর আপনার স্ত্রী এখন হারাম।

কেবল মাত্র এখন আপনার স্ত্রীর যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়। সেখানে ঘরসংসার করে। শারিরীক সম্পর্কও হয়। তারপর কোন কারণে দ্বিতীয় স্বামী মারা যায়, বা দ্বিতীয় স্বামী তালাক প্রদান করে, তাহলে ইদ্দত শেষে আপনি উক্ত স্ত্রীলোককে  নতুন মোহর ধার্য করে আবার বিয়ে করতে পারবেন।

এছাড়া দ্বিতীয় কোন গত্যান্তর নেই।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন বিষয় এমন,যা ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল,তালাক,বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়,তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {সূরা বাকারা-২৩০}

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *