লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
আকায়েদের গুরুত্ব
আকায়েদ ও আমালের সমষ্টির নাম হল দ্বীনে ইসলাম। এ দুইয়ের মাঝে আকায়েদ হল মূল বুনিয়াদ আর আমাল হল, সেটির শাখা প্রশাখা। অন্য শব্দে বললে আকীদা হল, বৃক্ষের শিকড়। আর আমাল হল, সেই বৃক্ষের ডালপালা।
সুতরাং যদি শিকড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাহলে বৃক্ষটিও দুর্বল এবং ভেঙ্গে পড়বে।
এজন্য আকায়েদ সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আকীদা ঈমান ও কুফরের পার্থক্যকারী। আখেরাতে মুক্তি ও আজাবপ্রাপ্ত হবার মানদন্ড। আমল মৌলিকভাবে জান্নাতী ও জাহান্নামী হবার মানদন্ড নয়। বরং আকীদা জান্নাতী ও জাহান্নামী হবার মানদন্ড। মোটকথা, আকীদা দ্বীনের মৌল বিষয়। আর আমল তার শাখামাত্র।
আকায়েদ প্রমাণের জন্য কুরআনের আয়াত এবং মুতাওয়াতির হাদীস জরুরী। এরচে’ নিচের পর্যায়ের হাদীসের মাধ্যমে যদিও আমল প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু আকীদা প্রমাণিত হয় না। কারণ তা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
ومعرفة العقائد عن أدلتها…… وقيد الجمهور الأدلة بالقطعية لأن اتباع الظن فى العقائد مذموم (نبراس، شرح لشرح العقائد-24)
আকীদায়ে সিফাতে বারী তাআলা
এটি খুবই নাজুক মাসআলা। তাই একান্ত বাধ্য না হলে এ মাসআলা বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনায় জড়ানো জায়েজ নয়।
এ মাসআলার পর্যালোচনায় একদল এতো বেশি সীমালঙ্ঘণ করেছে যে, তারা মুশাব্বিহা, মুজাসসিমা হয়ে গেছে। আরেকদল সিফাতে বারী তাআলায় এতো বেশি তাবীল ও ব্যাখ্যায় ডুবেছে যে, তারা জাহমিয়া, মু’তাজিলা এবং মুআত্তিলা হয়ে গেছে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সত্যিকার অনুসারীগণ সর্বদাই শরীয়ত বিষয়ে রাহে এ’তেদাল তথা মধ্যপন্থী অবস্থান বজায় রেখেছে।
আল্লাহ তাআলা মুতাশাবিহাত বিষয়ে আলোচনা পর্যালোনা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। সেই সাথে কারা এসব সিফাতে মুতাশাবিহাত নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে তাদের পরিচয়ও কুরআনে প্রকাশিত করেছেন।
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}
সুতরাং বর্তমানের বক্রমনের লা মাযহাবীরা সিফাতে মুতাশিবাহাত নিয়েই সবচে’ বেশি ফেতনাবাজীতে লিপ্ত। তাদের ফিতনার কারণে আমরা অপরাগ হয়ে এ বিষয়ে দু’কলম লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা সেটাই, যা নববী যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত মুতাওয়াতির সূত্রে উলামায়ে উম্মতের মাধ্যমে পৌঁছেছে। যা আজও তাই রয়েছে। যেমনটি সাহাবাযুগে বিশ্বাস করা হতো। এর মাঝে সামান্যতম কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন সাধিত হবে না। হতে পারে না।
সিফাতে বারী তাআলা বা আল্লাহর গুণবাচক শব্দ বিষয়ে ৩টি অভিমত!
১
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে অবস্থান খুবই স্পষ্ট এবং মধ্যপন্থী। আর সেটা হল, সিফাতে মুতাশাবিহাতকে প্রমাণিত বিশ্বাস করতে হবে। এর অর্থ আল্লাহ তাআলার উপর সোপর্দ করা। তিনি এসবের সঠিক অর্থ ও শান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। সেই সাথে এর সাথে সর্বপ্রকার সৃষ্টির আকৃতি এবং সাদৃশ্যকে অস্বিকার করে।
এটাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ এভাবে বলেন,
التفويض مع تنزيه الله تعالى وصفاته عن مشابهة المخلوقات مع نفى الكيفية عنه
২
মুজাসসিমাদের বাতিল আকীদা রোধ করার জন্য মুতাআখখীরীনগণ সাধারণ্যের ঈমান বাঁচানোর জন্য প্রয়োজন ও সম্ভাবনার স্তরে রেখে মুতাশাবিহাতের তাবীল বা ব্যাখ্যাও করেছেন।
এ কারণেই কখনো কখনো সিফাতে ইয়াদ এর তাবীল ‘কুদরত, নিয়ামত’। সিফাতে আইন এর তাবীল হিফাযত, ফিসাতে নফসের তাবীল জাত, এবং সিফাতে নুজূলের তাবীল নুজূলে রহমাত করেছেন।
কতিপয় আহলে বিদআত এ প্রশ্ন করেন যে, সিফাতের ক্ষেত্রে কোন প্রকার তাবীল করাই জায়েজ নয়। কারণ এটা মুতাজিলা ও জাহমিয়াদের মাসলাক।
কিন্তু মুহাক্কিকীনগণ বলে থাকেন যে, আহলে সুন্নাতের অনুসারীগণ এমনভাবে তাবীল করেন যে, যাতে করে আসল সিফাতটি বাকি থাকে। এতে করে তা’তীল আবশ্যক হয় না। সেই সাথে তাবীলটাকে সম্ভাবনা হিসেবে আখ্যা দেন। নিশ্চিত এটাই ব্যাখ্যা এমনটি বলেন না।
আর মু’তাজিলা এবং জাহমিয়ারা সিফাতের তাবীল করে নিশ্চিত বলে। যার ফলে আসল সিফাতটি মুতাআজজার এবং মুআত্তাল হয়ে যায়।
সুতরাং দুই দলকে এক বলাটা অন্যায় অপবাদ ছাড়া কিছু নয়।
৩
আল্লাহ তাআলার যেসব সিফাত কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। তা দুই প্রকার। যথা-
১) যার অর্থ স্পষ্ট। যেমন ইলম, কুদরত, ইরাদা তথা ইচ্ছা, কালাম তথা কথা ইত্যাদি।
এমন সিফাতগুলোকে মুহকামাত এবং ওয়াজিহাত বলা হয়।
এসব সিফাত বিষয়ে আহলে হক উলামাগণের ঐক্যমত্য যে, এসবের বাহ্যিক অর্থের উপর বিশ্বাস করা আবশ্যক।
এসব সিফাতের বেলায় কোন প্রকার তাবীল করা জায়েজ নয়।
২) এমন সিফাত যার অর্থটা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য। শুধুমাত্র শব্দের অর্থ এবং আভিধানিক অনুবাদ দ্বারা এ বিষয়ে অকাট্য এবং নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয় না।
রায় এবং কিয়াসের এসব ক্ষেত্রে কোন সুযোগ নেই। কাশফ ও ইলহামও এক্ষেত্রে প্রমাণ্য হিসেবে প্রযোজ্য হবে না।
যেমন وجه মুখ, يد হাত, নফস, عين চোখ, ساق পিন্ডুলী, قدم পা, اصابع আঙ্গুলী, আরশের উপর মুস্তায়ী হওয়া ইত্যাদি।
এ ধরণের সিফাতগুলোকে মুতাশাবিহাত বলা হয়।
সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে মতামত
আহলে হক উলামাগণের কাছে সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে দু’টি মতবাদ রয়েছে। যথা-
১) তাফয়ীজ। ২) তাবীল।
তাফয়ীজ
সিফাতের নস, ইবারত তথা আয়াত বা হাদীসকে কোন প্রকার ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ছাড়া বিশ্বাস করা। সেই সাথে উক্ত সিফাতী শব্দের ঐ সকল অর্থকেও অস্বিকার করা যা আল্লাহর শানের খেলাফ।
এ বিশ্বাসও রাখা যে, এসবের সহীহ অর্থ সেটাই, যা আল্লাহর শানের মুয়াফিক তথা উপযুক্ত।
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِسْحَاقَ الْقَاضِي أَنْبَأَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ عَنْ حَمَّادِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ حَازِمٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يسار أن صبيغ بن عسل قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَجَعَلَ يَسْأَلُ عَنْ مُتَشَابِهِ الْقُرْآنِ وَعَنْ أَشْيَاءَ، فَبَلَغَ ذَلِكَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَبَعَثَ إِلَيْهِ عُمَرُ فَأَحْضَرَهُ وَقَدْ أَعَدَّ لَهُ عَرَاجِينَ مِنْ عَرَاجِينِ النَّخْلِ. فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ لَهُ عُمَرُ: مَنْ أَنْتَ؟ قَالَ: أَنَا عَبْدُ اللَّهِ صَبِيغٌ. فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَأَنَا عَبْدُ اللَّهِ عُمَرُ، ثُمَّ قَامَ إِلَيْهِ فَضَرَبَ رَأْسَهُ بِعُرْجُونٍ فَشَجَّهُ، ثُمَّ تَابَعَ ضَرْبَهُ حَتَّى سَالَ دَمُهُ عَلَى وَجْهِهِ، فَقَالَ: حَسْبُكَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ فَقَدْ وَاللَّهِ ذَهَبَ مَا كُنْتُ أَجِدُ فِي رَأْسِي
হযরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রহঃ থেকে বর্ণিত। হযরত ছবীগ বিন ইসল রহঃ হযরত উমর রাঃ এর শাসনামলে মদীনা মুনাওয়ারায় আসেন। তখন ছবীগ রহঃ কুরআনে কারীমের মুতাশাবিহাত এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন। এ সংবাদ যখন হযরত উমর রাঃ এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি এক ব্যক্তিকে তাকে ধরে আনতে পাঠালেন। যখন তাকে উপস্থিত করা হল। হযরত উমর রাঃ খেজুরের শিকড় দিয়ে একটি লাঠি প্রস্তুত করলেন। তারপর তাকে উমর রাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর বান্দা ছবীগ। তখন হযরত উমর রাঃ বললেন, আমিও আল্লাহর বান্দা উমর। তারপর দাঁড়িয়ে তার মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন। এতে করে তিনি রক্তাক্ত হলেন। তারপরও তিনি মারতেই লাগলেন। ফলে তার রক্ত তার চেহারায় প্রবাহিত হতে লাগল।
তারপর ছবীগ বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! যথেষ্ট হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমার মাথা থেকে সেসব সন্দেহ সংশয় দূর হয়ে গেছে। [তাফসীরে কুরতুবী-৪/১৪-১৫]
সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে নিরব থাকার কারণ
১) এসব মুতাশাবিহাতের কোন একটি অর্থকে নির্ধারণ করার কোন অকাট্য দলীল বিদ্যমান নেই।
এই কারণে একটি অর্থকে নির্ধারণ করাটা জন্ন তথা ধারণার পর্যায়ভূক্ত থাকে।
এ কারণে এসবের অর্থকে তাফয়ীজ করাটাই সবচে’ উত্তম ও নিরাপদ।
তবে কোন প্রয়োজনে তাবীল করাও জায়েজ আছে। যেমন কোন সন্দেহ সংশয়কে দূরা করা উদ্দেশ্য হলে।
২) আমাদের কাছে এমন কোন অকাট্য দলীল নেই যে, এ শব্দের এটাই একমাত্র অর্থ। এ কারণেই হযরত ইবনে কুদামা মাকদীসী রহঃ বলেন,
فَإِن أَكثر مَا عِنْد المتأول أَن هَذِه اللَّفْظَة تحْتَمل هَذَا الْمَعْنى فِي اللُّغَة وَلَيْسَ يلْزم من مُجَرّد إحتمال اللَّفْظ للمعنى أَن يكون مرَادا بِهِ فَإِنَّهُ كَمَا يحْتَمل هَذَا الْمَعْنى يحْتَمل غَيره وَقد يحْتَمل مَعَاني أخر لَا يعلمهَا
অধিকাংশ মুতাআউলীনগণের কাছে এটাই কথা যে, শব্দটির আভিধানিক অর্থ হিসেবে একটি অর্থ প্রকাশ করে। শুধুমাত্র আভিধানিক অর্থের উপর নির্ভর করে একথা বলার সুযোগ নেই যে, এ শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই। কেননা, যেমন উক্ত অর্থের সম্ভাবনা রাখে, তেমনি অন্য কোন অর্থেরও সম্ভাবনা রয়েছে। আর অন্য কোন অর্থের সম্ভাবনা রাখে তা জানা নেই। [তাহরীমুন নজর ফী কুতুবিল কালাম-৫১, আবূ মুহাম্মদ মুয়াফফাকুদ্দীন বিন আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন কুদামা আলমাকদিসীকৃত]
আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহঃ বলেন,
وانما مذهب السلف عدم الخوض فى الصفات مع التنزيه العام وهم أبعد الناس عن حمل ما فى كتاب الله وما صح فى السنة على ما يوهم التشبيه، فاذا تكلموا انما يتكلمون بما يوافق التنزيه، وهم الذين يقولن فيما صح لفظه: أمروها كما جاء بدون تفسيره بل تفسير قراءته بلا كيف ولا معنى” كما تواتر ذلك عن السلف ولا سيما عن أحمد (حاشية السيف الصقيل فى الرد على ابن زفيل-136-137، علم الكلام-542، علامة زاهد الكوثرى)
সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে সালাফের মাযহাব এই ছিল যে, এ বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণে যাওয়া যাবে না। সেই সাথে মাখলুকের সাদৃশ্য থেকে এ সিফাতগুলোকে পবিত্র রাখতে হবে। কুরআন ও হাদীসে সহীহায় বর্ণিত সিফাতে বারী বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তারা সাদৃশ্যের সংশয় থেকে তারা সর্বোচ্চ দূরে অবস্থান করতেন। তারা যখনি এসব বয়ান করতেন, তখন তারা আল্লাহর পবিত্রতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখতেন। তাদের বক্তব্য হল, সিফাতে বারী যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা সেভাবেই বর্ণনা কর। তার ব্যাখ্যা করা ছাড়াই। বরং এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং অর্থ বলা ছাড়াই বর্ণনা করা। সালাফে সালেহীন বিশেষ করে হযরত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে এমনটিই প্রমাণিত। [হাশিয়াতুস সাইফিস সাকীল ফী রদ্দি আলা ইবনে যাফীল-১৩৬-১৩৭, ইলমুল কালাম-৫৪২, আল্লামা যাহেদ কাউসারী রহঃকৃত]
তাহলে আমরা সিফাতে মুতাশাবিহাত বিষয়ে সালাফে সালেহীন থেকে দু’টি বিষয় জানতে পারলাম। তা হল,
১) এসব সিফাতের মাধ্যমে বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নয়।
২) এসবের অর্থ নির্ধারণে সালাফ তা আল্লাহর সোপর্দ করেছেন। কারণ, এসব সিফাতের প্রকৃত অর্থ একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।
সালাফে মুতাকাদ্দিমীনগণের সিফাতে বারী বিষয়ে এটাই অবস্থান। যা অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
তাবীল
এ মাযহাবটি সাহাবাগণ রাঃ এর এক দল থেকেও প্রমাণিত। জমহুর মুতাআখখিরীনগণের কাছে তাবীল প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত। এ কারণ হল,
১) মুতাআখখিরীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সময়ে যেসব ফিতনার আবির্ভাব হয়, তা মুতাকাদ্দিমীনগণের জমানায় ছিল না।
যেমন মুশাব্বিহা এবং মুজাসসিমারা তাদের পূর্ণ শক্তি ব্যয় করে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছে যে, আল্লাহ তাআলার মানুষের মত হাত, পা ও চোখ ইত্যাদি আছে। তিনি আমাদের মতই বসেন। আমাদের মতই উঠেন। নড়াচড়া করেন। (নাউজুবিল্লাহ)
তারপর এর মাঝে আবার মতভেদ আছে। কতিপয় বলেন যে, আল্লাহ তাআলা দেখতে খুবসূরত যুবকের মত। (নাউজুবিল্লাহ)।
কতিপয় বলতো যে, আল্লাহ তাআলা মধ্য বয়স্ক মানুষের মত। (নাউজুবিল্লাহ)।
সবচে’ বিপজ্জনক হল, তারা তাদের এ ভ্রান্ত মতবাদের স্বপক্ষে সিফাত সম্বলিত কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদীস দলীল হিসেবে উপস্থাপন করতো। যেসব নুসূসে, ইস্তিওয়া, ইয়াদ, নফস, নজূল ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। এসব সিফাতে মুতাশাবিহাত দিয়ে তারা তাদের ভ্রান্ত মতবাদের পক্ষে দলীল পেশ করতো।
২) একথা ধ্রুবসত্য যে, সাধারণ মানুষ বাহ্যিক বিষয় দেখে সহজেই ধোঁকায় পড়ে যায়।
এ কারণে মুতাআখখিরীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীগণ সাধারণ মুসলমানগণের ঈমান মুশাব্বিহা ও মুজাসসিমাদের ভ্রান্ত মতবাদ থেকে রক্ষা করার জন্য সিফাত সংক্রান্ত বিষয়ের তাবীল করতে শুরু করেন। যেমন ইস্তিওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য ইস্তিওলা তথা ক্ষমতাসীন হওয়া, ইয়াদ দ্বারা উদ্দেশ্য কুদরত, আইন দ্বারা উদ্দেশ্য হেফাযত, নজূল দ্বারা উদ্দেশ্য নুজূলে রহমাত ইত্যাদি।
৩) যদি মুতাকাদ্দিমীনগণের জমানায়ও মুশাব্বিহা ও মুজাসমিমাদের ফিতনা থাকতো, তাহলে তারাও মুতাআখখিরীনদের মতই তাবীল করতেন।
এর প্রকৃষ্ট দলীল হল, সাহাবাগণের জমানা থেকে নিয়ে যখনি বিচ্ছিন্নভাবে সিফাতে বারী নিয়ে ফিতনা দেখা গেছে, তখন তাবীল করার প্রমাণ পাওয়া যায়।