আল্লাহ তায়ালা প্রভুত্বের আসনে নেই!
বাংলাদেশে গড়ে ওঠা নতুন উগ্রবাদি একটি কুফরী দলের নাম হেযবুত তাওহীদ। এদের অনেকগুলো মনগড়া বিশ্বাসের মধ্যে একটি হলো-
আল্লাহ তায়ালা প্রভুত্বের আসনে নেই (নাউজুবিল্লাহ)
প্রমাণঃ
তাদের কথিত এমাম বায়াজীদ খান পন্নী,
হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ মোজাহেদাদের
উদ্দেশ্যে একটি ছোট্ট বই লিখেছে। বইটির নাম
দিয়েছে – “আসমাউ ওয়া আত্তাবেয়্যু”এই বইয়ের
৬ নং পৃষ্ঠায় তার দলের লোকদের লক্ষ্য করে বলছেনঃ
❝ সমস্ত পৃথিবী যার করতলগত সেই মহা শক্তিধর
দাজ্জালকে হটিয়ে দিয়ে প্রভুত্বের আসনে আল্লাহ
তায়ালাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার মতো আপাতঃ
দৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি করার দায়িত্বে তোমরা
নিজেদের নিয়োজিত করেছো ❞
যুক্তিখন্ডনঃ
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন,তারা আল্লাহকে প্রভুত্বের
আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে প্রশ্ন আসে
বর্তমানে আল্লাহ কি তাঁর প্রভুত্বের আসনে নেই? (নাউজুবিল্লাহ)
তাদের উল্লেখ করা “পুনঃপ্রতিষ্ঠিত” শব্দটির অর্থ কি?
তার অর্থ হলো – কোন জিনিস আগে প্রতিষ্ঠিত ছিলো
কিন্তু এখন নেই পরবর্তীতে আবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এটাকেই বলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত।
বাংলায় ‘পুনঃ’ শব্দটি, পুনরায়/দ্বিতীয়বার অর্থে
ব্যবহারিত হয়।
(বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান ৮৩০ পৃঃ)
যেমনঃপ্রচার-পুনঃপ্রচার, প্রবেশ – পুনঃপ্রবেশ।
ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠিত – পুনঃপ্রতিষ্ঠিত।
তাহলে তাদের বক্তব্য হলো, প্রভুত্বের আসনে আল্লাহ
আগে ছিলো এখন নেই, তাই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
(নাউজুবিল্লাহ, এটা বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না।)
চলুন দেখা যাক এ ব্যপারে আল কোরআন কি বলে-
◾পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে-
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ
وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ
অর্থ – আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি
চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। তাঁহাকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ
করেনা। আকাশ ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে
সমস্ত তাহারই।
[সুরা বাকারা ২৫৫]
⏩প্রিয় পাঠক! এই আয়াতে যে القيوم শব্দ এসেছে
তার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা
কত মহান, আর সাময়িক সময়ের জন্য
আল্লাহ তায়ালা ক্ষমতা বিহীন থাকবে-এটা ভাবা কল্পনাতেও অসম্ভব।
আল্লাহর ক্ষমতা চিরস্থায়ী কেউ তাকে তার
ক্ষমতার আসন থেকে হটাতে পারবেনা।
তাহলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার তো প্রশ্নই আসেনা!
◾কাইয়্যূম শব্দের ব্যাখ্যাঃ
কাইয়্যুম শব্দের অর্থ হলো-সৃষ্টির তত্ত্বাবধান ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যে সত্ত্বা অনাদি ও অনন্তকালব্যাপী বিরাজমান, আপন সত্তার জন্য যিনি কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন, অথচ সর্বসত্ত্বার যিনি ধারক, তাহাকেই কাইয়্যুম বলা হয়।
(দেখুন ইফা থেকে প্রকাশিত কোরআনের অনুবাদ
উক্ত আয়াতের ১৭৫ নম্বর টিকা। পৃষ্ঠা ৬৪)
প্রিয় পাঠক, এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তারা কী
ভয়ংকর ঈমান বিধ্বংসী বাক্য ব্যবহার করছে!
▶তাদের আরেকটি কুফরি কথা খেয়াল করুন-
তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো
তারা নাকি আল্লাহকে প্রভুত্বের আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত
করতে চায়, তাহলে প্রশ্ন আসে আল্লাহ কি
নিজের আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে হেযবুতীদের মুখাপেক্ষী?
নাউজুবিল্লাহ ,নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ।
◾অথচ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেনঃ
اللّٰه الصمد
(সূরা ইখলাস,আয়াত নং-২)
অর্থ আল্লাহ কাহারো মুখাপেক্ষী নন,
সকলেই তাহার মুখাপেক্ষী
◾এবার আসুন প্রভুত্ব শব্দটিকে বুঝি।
প্রভু এবং প্রভুত্ব উভয় শব্দের মধ্যে পার্থক্য আছে,আমাদের রব/প্রভু আল্লাহ তায়ালাই, তিনিই আমাদের প্রভু।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا
فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যাহারা বলে, আল্লাহ আমাদের রব, অতঃপর অটল
থাকে, তাহাদের কোন ভয় নেই এবং তাহারা দুঃখিত হইবেনা।(সুরা আহ্কাফ আয়াত ১৩)
আর প্রভুত্ব অর্থ হলো, ঐ আল্লাহ তায়ালার
কর্তৃত্ব, আধিপত্য, প্রভু শক্তি, এক কথায় বলি
আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা (আধুনিক বাংলা অভিধান ৮৭১)
এর পরেও কি তাদেরকে সঠিক বলে মনে হয়?
বরং প্রমাণিত হলো তারা তাওহীদের দল নয়। সমসাময়িক কিছু মুখরোচক যুক্তি ও
তাওহীদের স্লোগানের আড়ালে তারা মানুষকে
কুফুরির দিকে আহবান করছে।
◾অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ
অর্থ – তোমাদের রব যাহা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন(সুরা কাসাস আয়াত ৬৮)
যদি এখন আল্লাহ তায়ালা প্রভুত্বের আসনে না
থাকে, তাহলে আল্লাহ যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করবেন
কি ভাবে.? (নাউজুবিল্লাহ মিন যালিক)
◾অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন
فعال لما يريد
অর্থ আল্লাহ যাহা ইচ্ছা করেন, তাহাই করেন(সুরা বুরুজ -আয়াত নম্বর ১৫)
এখন হেযবুতীদের কথা মেনে নিলে আল্লাহর কথা মিথ্যা হয়ে যায়,
আর আল্লাহর কথা মেনে নিলে হেযবুতিরা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
এখন আমরা কোনটা সত্য ধরে নেব?
অবশ্যই আল্লাহর কথা।
◾কারন তিনি বলেনঃ
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
অর্থ- আর আল্লাহ তায়ালার চাইতে সত্যবাদী আর কে আছে (সুরা নেসা ৮৭)
এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের কাছে।আল্লাহ তায়ালার কথা বিশ্বাস করবেন ,নাকি হেযবুতীদের কথা বিশ্বাস করবেন।
এমন অসংখ্য অগনিত আয়াত আছে হেযবুতিদের প্রতিটি খোড়া যুক্তির বিরুদ্ধে।পোস্টের আকার বৃদ্ধির আশংকায় যা উল্লেখ করা হয়নি।
ওহে হেযবুত তাওহীদের সদস্য প্রিয় ভাই/বোন!
ফিরে আসুন কুরআন নির্দেশিত পথে।
ওরা আসলে তাওহীদের মনগড়া ব্যাখ্যা আর মুখরোচক
স্লোগানে, আপনাদের ঈমান ধ্বংস করে দিয়েছে।ওদের ধোঁকা থেকে ফিরে আসুন নিজের ঈমান হেফাজত করুন।
মাওলানা ইউসুফ আজাদী