প্রশ্ন
উলামায়ে দেওবন্দ এ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। একথা অনস্বিকার্য। কিন্তু একটি কথা আমার মনে খটকা সৃষ্টি করেছে। ফেইসবুকে কতিপয় বিদআতি এবং আহলে হাদীসরা প্রচার করছে যে, দেওবন্দ মাদরাসা নাকি কুরবানীর সময় গরু জবাইকে নাজায়েজ বলেছে? তাদের বক্তব্য এমন-
দেওবন্দের এক্সক্লুসিভ ফতুয়াঃ
“যেখানে গরুর মাংস খাওয়া বারণ (যেমন ভারতের কিছু অঞ্চলে) সেখানে গরু জবেহ করা, গরু কুরবানী করা এবং গরুর মাংস খাওয়া শরীআতের দৃষ্টিতে হারাম ও নাজায়েয।”
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বেদআতিদের জিলাপীর প্লেটে সবচে’বেশি ছাই নিক্ষেপ করেছে উলামায়ে দেওবন্দ। তাদের নবীপ্রেমের আড়ালে নবী বিদ্বেষী নিকৃষ্ট মানসিকতাকে দলীলসহ উন্মোচন করে দিয়েছেন উলামায়ে দেওবন্দ। তাই তারা সব সময়ই উলামায়ে দেওবন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে থাকে। ওদের গুরু আহমদ রেজা খান বেরেলবীতো আলাদা একটি বইই লিখেছে উলামায়ে দেওবন্দকে বিষোদগার করে। চরম মিথ্যাচারপূর্ণ সেই বইয়ের নাম “হুসামুল হারামাইন”।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, বেদআতের বিরুদ্ধে মুখে মুখে সবচে’বেশি সোচ্চার দাবিদার কথিত আহলে হাদীসরাও সেসব মিথ্যাচারকে প্রচার করে চলছে যাচাই বাছাই ছাড়াই। যা তাদেরকে মিথ্যুক খিতাব অর্জন করিয়ে দিচ্ছে রাসূল সাঃ এর বাণী দ্বারা।
রাসূল সাঃ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যা শুনে তা’ই বলতে থাকা [যাচাই বাছাই ছাড়া] কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ঠ। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০}
আর মিথ্যুকদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ করেছেন-
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ ﴿آلعمران: ٦١
মিথ্যুকদের উপর আল্লাহ তাআলার অভিশম্পাত। {সূরা আলি ইমরান-৬১}
এবার আসুন আমরা দারুল উলুম দেওবন্দের ফতওয়াটির দিকে দৃষ্টি দেই। সেই সাথে জেনে নেই মিথ্যুকদের মিথ্যাচারের নিকৃষ্টতা।
মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত মুকাম্মাল ওয়া মুদাল্লাল ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ কিতাবের ১৫ খন্ডের ৪৯৩ ও ৪৯৪ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত ফাতাওয়াটির বাংলা অনুবাদ হুবহু তুলে দিচ্ছি।
প্রশ্ন
পশু কুরবানী কি জরুরী নাকি না? কোন আদেশের আলোকে আমরা কুরবানী ঈদের সময় কুরবানী করে থাকি? এটি কি সুন্নতে নববী না কুরআনের নির্দেশ? যে অর্থ কুরবানীর জন্য খচর করা হয়, সেটিকে কেন দান করে দেয়া হয় না? অন্য জাতির সাথে একতার দ্বারা যদি দ্বীনের মর্যাদা সমুচ্চ থাকে, তাহলে তাদের সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল করে ধনীরা গরুর বদলে বকরী জবাই করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? {ফাতাওয়া নং-২৩৮৩, ১৩৩৭ হিজরী}
উত্তর
নেসাবের মালিক ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা আবশ্যক। কুরবানী করা কুরআনের আয়াত এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল সাঃ নিজেও কুরবানী করেছেন সেই সাথে কুরবানীর নির্দেশও দিয়েছেন। কুরবানীতে রক্ত প্রবাহিত করা সওয়াবের কাজ। মূল্য পরিশোধ করা বা মূল্য দান করে দেয়া কুরবানীর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। সেই সাথে এসবের দ্বারা কিছুতেই কুরবানী আদায় হবে না। এমনটিই রয়েছে ফিক্বহের কিতাবে।
অন্য জাতির প্রতি খেয়াল করে এবং তাদের সাথে একতা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে গরু কুরবানী না করা জায়েজ নয়। সেই সাথে এ কাজটি শরীয়ত গর্হিত কাজ। তবে পর্দার সাথে গরু কুরবানী করা এবং লুকিয়ে জবাই করা যাতে করে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা ক্ষেপে না যায়, এবং ফিতনা সৃষ্টি না করে তাহলে এটি উত্তম হবে। আর এমনটিই করা উচিত হবে। কারণ কুরবানী করার দ্বারা উদ্দেশ্য হল স্বীয় ধর্মের ফরজ আদায় করা। কারো ক্রোধ সৃষ্টি করা নয়। {ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, কুরবানী কা বয়ান-১৫/৪৯৪, প্রকাশনী-মাকতাবা দারুল উলুম দেওবন্দ}
এই হল দারুল উলুম দেওবন্দের ফাতওয়া।
এবার পাঠকগণই চিনে নিন মিথ্যুকদের চেহারাগুলো। দীগন্ত প্রসারী প্রভাত সূর্যকে চামচিকার ভেংচি কখনোই মলিন করতে পারে না। অমোঘ সত্য আর হককে ক্ষণিকের মিথ্যার আবর্জনা কখনোই ঢেকে রাখতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মিথ্যুকদের মিথ্যাচার থেকে হিফাযত করুন। অবশেষে আবারো স্মরণ করিয়ে দেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রবিত্র বাণী-
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ ﴿آلعمران: ٦١﴾
মিথ্যুকদের উপর আল্লাহ তাআলার অভিশম্পাত। {সূরা আলি ইমরান-৬১}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ﻟَّﻌْﻨَﺖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑِﻴﻦَ ﴿ﺁﻝﻋﻤﺮﺍﻥ
আল্লাহ হকের নূরকে স্বীয় স্থানে থাকবার তৌফিক দান করুন,জাযাকাল্লাহ।