দরুদ ও সালাম

আল্লামা মনজূর নূমানী রহঃ

দরুদ এবং সালামও এক প্রকার দুআ। আল্লাহ পাকের নিকট নবীজীর জন্য আমরা এ দুআ করে থাকি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বস্তুত আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার পরে নবীজীর অনুগ্রহ সবচে বড়। তিনি হাজারো বিপদ-মুসিবত অতিক্রম করে আমাদের পর্যন্ত দ্বীন পৌঁছিয়েছেন। যদি তিনি সীমাহীন ত্যাগ ও কোরবানী স্বীকার না করতেন, তাহলে আমাদের নিকট দ্বীন পৌছতো না। আমরা কুফর শিরকের অন্ধকারেই নিমজ্জিত থেকে যেতাম, জাহান্নামের ইন্ধন হয়ে যেতাম।

ঈমান হলো সবচে বড় নেয়ামত। আর আমরা তা পেয়েছি নবীজীর উসিলায়। নবীজীকে এর উপযুক্ত কোনো বদলা আমরা দিতে পারবো না। আমাদের পক্ষে এটুকুই সম্ভব যে, পরম ভক্তি ও ভালোবাসায় অবগাহন করে আমরা বলবো, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হে আল্লাহ! নবীজীর উপর বিশেষ রহমত ও শান্তি বর্ষণ করো। নবীজীর সম্মান ও মযার্দা বুলন্দ করে দাও। এই ধরনের দুআকে দরুদ ও সালাম বলে। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক বড় সুন্দররূপে ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দরুদ পাঠ করে থাকেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করো। সূরা আহযাব ৩৩/৫৬

দেখা যাচ্ছে, খোদ আল্লাহ রব্বুল আলামীন দরুদের মাধ্যমে নবীজীর প্রতি সম্মান ও শফকত প্রদর্শন করছেন। অনুরূপভাবে ফেরেশতারাও নবীজীর শানে দরুদ পাঠে মগ্ন আছেন। সুতরাং তোমরাও নবীজীর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠাতে থাকো। দরুদ ও সালাম আল্লাহ পাকের খুবই প্রিয়। আর ফেরেশতারাও দরুদ পাঠে মাতোয়ারা। এর পরও কি কোনো মুসলমান নিয়মিত দরুদ না পড়ে থাকতে পারে?

দরুদ শরীফের ফজীলত

নবীজী এরশাদ কবেন,

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ، وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ
যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ পাক তার উপর দশটি রহমত অবতীর্ণ করেন। তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেন। তাকে মর্যদা দশ স্তর বুলন্দ করেদেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ১২৯৭

এক হাদীসে ইরশাদ করেন,

إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الْأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ
পৃথিবীতে ভ্রাম্যমাণ কিছু ফেরেশতা রয়েছে। যেখানে যে উম্মত আমার নামে দরুদ ও সালাম পাঠ করে, এই ফেরেশতারা সেখান থেকে আমার নিকট তা নিয়ে আসে। সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ১২৮২

সুবহানাল্লাহ! কত বড় সৌভাগ্য! আমাদের সালাত ও সালাম নবীজীর দরবারে পৌঁছে যায় এবং এই উসিলায় তাঁর দরবারে আমাদের কথা আলোচনা হয়! একটি হাদীসে এসেছে,

أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً.
যে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন আমার সবচে নিকটে থাকবে সে। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৪৮৪

অন্য হাদীসে এসেছে,

البَخِيلُ الَّذِي مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
ঐ ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার সামনে আমার আলোচনা ওঠে, অথচ সে আমার উপর দরুদ পাঠ করে না। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৬

আরেক হাদীসে এসেছে,

رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
তার মুখে ছাই পড়ুক, যে আমার নাম আসার পরও আমার জন্য দুআ করে না। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৪৫

মোটকথা, দরুদ পাঠ করা আমাদের উপর নবীজীর অনেক বড় হক। উপরন্তু এটা আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্যের বিয়য় এবং আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকত লাভের উসিলা। আল্লাহ পাক সকলকে বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠ করার তাওফীক দান করুন আমীন।

দরুদ-এর শব্দ

এক সাহাবী নবীজীর নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আলল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে দরুদ পাঠ করবো? তখন নবীজী তাকে ‘দরুদে ইবরাহীমী’ শিক্ষা দিলেন, নামাযে এই দরুদখানি আমরা পাঠ করে থাকি। হাদীস শরীফে অনুরূপ আরেকটি দরুদের কথা এসেছে,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَأَزْوَاجِهِ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ، وَذُرِّيَّتِهِ وَأَهْلِ بَيْتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ. هذا إسناد ضعيف
আয় মেরে মাওলা! আমাদের উম্মী নবী, তাঁর স্ত্রীপরিজন ও বংশধরগণের উপর রহমত বর্ষণ করো, যেমন তুমি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর রহমত বর্ষণ করেছো। নিশ্চই তুমি বড় প্রশংসিত এবং সম্মানিত। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৮২

যখন আমরা নবীজীর নাম নিবো অথবা অন্যের মুখ থেকে তাঁর নাম শুনবো, তখন গুরুত্বের সাথে, মুহাব্বতের সঙ্গে ‘সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ অথবা ‘আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম’ বলবো।

দরুদ ও সালামের ওজিফা

আল্লাহ ওয়ালারা তো দৈনিক কয়েক হাজারবার দরুদ পাঠ করে থাকেন। সাধারণত এ পরিমাণ হিম্মত আমাদের হয় না। আমরা যদি সকাল-সন্ধ্যা একশবার করে দরুদ পাঠ করি, তবে এটুকুই ইনশাআল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে এবং এর বরকতে নবীজীর কী পরিমাণ স্নেহ-মমতা আমরা লাভ করবো, এ-দুনিয়াতে তা অনুমান করাও সম্ভব নয়। একটি সংক্ষিপ্ত দরুদ নিম্নরূপ,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَآلِهِ
হে আল্লাহ! নবী মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি আপনি রহম করুন।

0Shares

আরও জানুন

মৃতের জন্য কুরআন খতম করার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামুয়ালাইকুম ! রাইয়ান মাহমুদ খুলনা গত কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু মারা যায় এখন …