প্রচ্ছদ / আদব ও আখলাক / চিঠিতে পোষ্টারে বিসমিল্লাহ লেখার হুকুম কী?

চিঠিতে পোষ্টারে বিসমিল্লাহ লেখার হুকুম কী?

প্রশ্ন

From: নুরুদ্দীন
বিষয়ঃ যেখানে-সেখানে “বিসমিল্লাহ” লেখা যাবে কি?

প্রশ্নঃ
একজন বলতিছে যে, আমরা বিভিন্ন কাজের শুরুতে যে বিসমিল্লাহ্‌ লিখে থাকি তা নাকি নাজায়েজ!

নিচে তার পোস্ট দেওয়া হল-

পোস্টার-লিফলেট, ক্যাশ-মেমো, রশিদ,  বিয়ে-হালখাতার কার্ড, ভিসিটিং কার্ড, কাপড়ের ব্যাগ-প্যাকেট ইত্যাদিতে আল্লাহ্ তা’আলার নাম
বা কুর’আনের আয়াত লেখা যাবে না।
→ এগুলো সাধারনত নিচে পরে যায়, লোকেরা
পারায়, ড্রেন-নর্দমা সহ নানা নাপাক স্থানে
পরে থাকে। তাই এসব এসবের উপর
“বিসমিল্লাহ” বা “আল্লাহু আকবার” বা
ইন’শা’আল্লাহ ইত্যাদি লেখা যাবে না।
দলীলঃ-

(★) হযরত ওমর ইবনে
আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে “বিসমিল্লাহ” লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা/৪৬২৩, ৪৬২২)

→এটাকি শুধু আরবি ভাষার ক্ষেত্রে?
কুর’আনের আয়াত-
وانه لفي زبر الاولين –
“আর নিঃশ্চয় এটি (তথা কুর’আন) পুর্ববর্তী কিতাব সমুহেও ছিল।”(সুরা শুআ’রা/ ১৯৬)

পূর্ববর্তী কিতাবগুলো কি আরবিতে ছিল? না। সুতরাং বোঝা গেল এটা অন্য ভাষাতেও হতে পারে।
তাই বাংলাতে বা ইংরেজিতেও “বিসমিল্লাহ্” লেখা যাবে না।

★ স্কুল-মাদ্রাসার ধর্মীয় খাতা, বই, গাইড বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করলে সেগুলো কেটে, খাবার বিক্রি করবে। সেগুলোতে কুর’আনের আয়াত থাকে। খাওয়ার পরে নিচে ফেলে দেয়। তাই জেনে শুনে বিক্রি করলে গুনাহগার হবে। *এগুলো পরিষ্কার নদীর পানিতে হবে বা পাক কাপড়ে দাফন করতে হবে। অথবা সংরক্ষন করতে হবে।

★ খবরের কাগজে ধর্মীয় বিষয় লেখা যাবে না, বিজ্ঞাপনের উপর “বিসমিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার” বা “ইন’শা’আল্লাহ”, “ইন্নানিল্লাহহি ওইন্না ইলাইহি রজিউন” লেখা যাবে না। কারন, যেদিনের খবরের কাগজ সেদিনেই পরা শেষ হয়ে যায়। পরে সেটা জমা করে বিক্রি করা হয় সেটাও যেখানে-সেখানে পরে থাকে।

★ ক্যালেন্ডার যে বছরের সে বছর শুধু সংরক্ষিত থাকে, তার পর সেটাকে নামিয়ে ফেলা হয়, বই মলার্ট করে বা ফেলেদেয়।
তাই এসব ক্যালেন্ডারেও এসব লেখা যাবে না। তবে যদি সেটা চিরস্থায়ী নামাযের ক্যালেন্ডার হয় তাহলে অন্য অন্যকথা। (তবে না লেখাটাই ভাল)

★★★★ অনেকে ভুল বশতঃ বলে থাকেন যে, সৌদি আরবে পেপারের কাগজ আরবিতে ছাপা হয়, রাস্তা-ঘাটে আরবি পরে থাকে, তাই লেখলে কোন সমস্যা হবেনা।

অথচ, ব্যাপার টা এমন না।
অবস্যই আরবিতে কুর’আন নাযিল হওয়ার কারনে এটা সম্মানীত ভাষা কিন্তু কুর’আল হল আল্লাহ্‌ তা’আলার কালাম।

এসম্পর্কে দারিমীতে আছে-
-فضل كلام الله علي كلام خلقه كفضل الله علي خلقه-
আল্লাহ্ র কালামের (কুর’আনের) মর্যাদা তাঁর সৃষ্টির কালামের ততবেশি, যতবেশি আলাহ্ র মর্যাদা তাঁর সকল সৃষ্টির উপর।

তাই, আরবি ভাষাতে আমরা বা কেউ কিছু বললে বা লিখলে, তার মর্যাদা কখনোই কুর’আনের মত হবে না।

এছারা রাবীদের জীবনী থেকে জানা যায় যে, ওনারা যেসব হাদীস লিখে নিতেন, সেগুলো কিতাব যখন পরার অযোগ্য হয়ে পরত, তখন সেগুলোকে সম্মানের সাথে দাফন করতেন।

কোথাও ধর্মীয় বিষয় লেখার আগে ভালভাবে চিন্তাভাবনা করবেন যে, আমি কোথায় লিখছি? এটা কি আমি সংরক্ষন করব? এটা পরে যেতে পারে কিনা?

আসসামুয়া’লাইকুম!

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রশ্ন করতে গিয়ে বিশাল উত্তরই দেয়া হল।

মূল কথা, হল, যদি বিসমিল্লাহ বা আয়াতের অপমান হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সেখানে বিসমিল্লাহ লেখা উচিত নয়।

নাজ্জাশী বাদশার কাছে লেখা চিঠির শুরুতে রাসূল সাঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখেছিলেন। {নূরুল ইয়াকীন ফী সীরাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন-১৮১}

অথচ তখন নাজ্জাশী বাদশা মুসলমান হননি। যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অপমান হবার সম্ভবনা থাকলে লেখার শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা যাবে। বাকি যদি অপমানজনক স্থানে পতিত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে লেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …