প্রশ্ন
আমরা জানি যে কুরআন অজু ছাড়া স্পর্শ করে পড়া যায় ননা। তবে কোন অমুসলিম যদি আরবি ভাষী হয়, বা আরবি ভাষা জানে, এবং সে ইসলাম জানার জন্য কুরআন পড়তে চায়, তবে তার কুরআন স্পর্শ করে পড়ার অনুমতি থাকবে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মুসলমানদের জন্যই পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। সেখানে বিধর্মীদের জন্য তা আরো কঠোর বিধান হবে এটাই স্বাভাবিক।
তাই কোন বিধর্মীর জন্য মুসলিম হয়ে পবিত্রতা অর্জন ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নয়।
তবে কুরআন সম্পর্কে রিসার্চ করতে চাইলে হাতে আলাদা কভার লাগিয়ে কুরআন স্পর্শ করবে। অথবা অনুবাদ পড়তে পারবে। সরাসরি হাত লাগানো নিষেধ।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى أَنْ يُسَافَرَ بِالقُرْآنِ إِلَى أَرْضِ العَدُوِّ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শত্রুদেশে কুরআন নিয়ে সফর করতে নিষেধ করেছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৯৯০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৮৬৯]
শত্রুদেশ বলতে কাফির রাষ্ট্র উদ্দেশ্য। নিষেধ কেন? কারণ, কুরআনের মত পবিত্র গ্রন্থ কাফেরদের স্পর্শ করার দুঃসাহস হতে পারে। এ কারণে এ নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬}
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:”لا يمس القرآن إلا طاهر“.
رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২}
قال ابن عبد البر في الاستذكار (8/10): ((أجمع فقهاء الأمصار الذين تدور عليهم الفتوى وعلى أصحابهم بأن المصحف لا يمسه إلا طاهر
আল্লামা ইবনে আব্দিল বার রহঃ বলেনঃ সমগ্র পৃথিবীর সকল ফক্বীহগণ ও তাদের অনুসারীগণ একমত এবং এর উপরই সকলে ফাতওয়া প্রদান করে থাকেন যে, কুরআনে কারীম পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ নেই। {আল ইসতিজকার-১০/৮}
“إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة”،
ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ দের। এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়। {শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০}
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। {মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬}
قال النووي رحمه الله في “المجموع” (2/85) : ” قال أصحابنا : لا يمنع الكافر سماع القرآن ، ويمنع مس المصحف ” انتهى .
وقال الباجي في “المنتقى” (3/165) : ” ولو أن أحدا من الكفار رغب أن يرسل إليه بمصحف يتدبره لم يرسل إليه به ؛ لأنه نجس جنب ولا يجوز له مس المصحف ، ولا يجوز لأحد أن يسلمه إليه ذكره ابن الماجشون ” انتهى.
وجاء في “الموسوعة الفقهية” : ” مس الكافر المصحف وعمله في نسخ المصاحف وتصنيعها : يمنع الكافر من مسّ المصحف , كما يمنع منه المسلم الجنب , بل الكافر أولى بالمنع ” انتهى .
وفيها أيضا : ” ذهب المالكيّة والشّافعيّة والحنابلة وأبو يوسف من الحنفيّة إلى أنّه لا يجوز للكافر مس المصحف لأنّ في ذلك إهانةً للمصحف .
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]