প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আমি জানতে চাই, রোযা থাকাকালীন দিনের বেলায় যদি টিভি দেখি, অথবা অডিও গান শুনি এবং মেয়েদের ছবি দেখি, তাহলে কি আমার রোযা ভঙ্গ হবে?
আর রাতে তো কেউ রোযা রাখে না, রাতে কি এইসব টিভি অডিও গান ভিডিও ও মেয়েদের ছবি দেখা যাবে?
আমি আসলেই এই বিষয়গুলো ভালভাবে জানতে চাই।
প্রশ্নকারী-বিল্লাল।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
টিভি দেখা, গান শোনা, মেয়েদের ছবি দেখা প্রতিটি গোনাহের কাজ। রমজান ছাড়া যেসব কাজ পাপ। সেসব কাজ রমজানে করা আরো বেশি মারাত্মক পাপ ও গোনাহ। তাই এসব থেকে প্রতিটি মুমিন মুসলিমের বিরত থাকা উচিত।
যদিও কাজগুলো কবীরা গোনাহ পর্যায়ের। রোযার রূহানিয়্যাত এসব পাপের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না। কিন্তু রোযা মাকরূহ হয়ে যায়।
দিনে বা রাতে কখনোই উপরোক্ত কাজগুলো করা বৈধ নয়।
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ
‘তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হৈ চৈ না করে। [সহীহ বুখারী হাদীস : ১৯০৪]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” الصِّيَامُ جُنَّةٌ إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ صَائِمًا فَلَا يَرْفُثْ، وَلَا يَجْهَلْ،
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ সওম পালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের ন্যায় আচরণ না করে। [সূনানে আবূ দাউদ-১/৩২২, হাদীস নং-২৩৬৩]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা-প্রতারণা ও গুনাহর কাজ ত্যাগ করে না আললাহ তাআলার নিকট তার পানাহার থেকে বিরত থাকার কোনো মূল্য নেই।’ [বুখারী, হাদীস ১৯০৩] সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৩৩৬২ (১/৩২২)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” كَمْ مِنْ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ، وَكَمْ مِنْ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বহু রোযাদার এমন রয়েছে, যাদের রোযা দ্বারা পিপাসা ছাড়া আর কোন লাভ হয় না এবং বহু রাত জেগে নামায আদায়কারী আছে, যাদের রাত্র জাগরণ ছাড়া আর কোন লাভ হয় না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৬৮৫, সুনানে দারেমী-২/১৮৪, হাদীস নং-২৭২০,২৭৬২ ]
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ، وَالْمُغَنِّيَاتِ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ، وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন,আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন।-সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০;সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]