প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / ইল্লাল্লাহ জিকির কি শিরক?

ইল্লাল্লাহ জিকির কি শিরক?

প্রশ্ন

আস সালামুআলাইকুম।
আমার নামঃমাইনুল শরীফ। বাকেরগন্জ,বরিশাল।
আমার প্রশ্নঃ ইল্লালাহ অর্থ কি? এবং ইল্লালাহ জিকির করা কি শিরক অথবা বিদাআত?
এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।

মো সাজিদ সরকার
ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট

আসসালামু আলাইকুম।  হয়রত চরমোনাই মুরিদ ভাইয়েরা ইল্লাল্লাহ যিকির করে, অনেকে বলে এটা পাইছ কই? ।  হযরত ইল্লাল্লাহ এর দলিল গুলো জানালে খুব উপকৃত হব!।

আচ্ছালামু আলইকুম ,

মুহতারম কেমন আছেন ? আশা করি ভালই আছেন , কামনা  ও তাই।

প্রশ্ন:-  সারা জীবন আমরা বিভিন্ন জিকিরের সাথে  :  শুধু ” ইল্লাল্লাহ ” এর জিকির ও করে আসছি ,আমাদের দেশের সকল হক্কানী ওলামা মাশায়েখ গন এর তালীম ও দিয়ে থাকেন , আর আমরা তা করে ও আসছি । কিন্তু বর্তমান  কথীত আহলে হাদীসের লোকেরা  শুধু ” ইল্লাল্লাহ”  জিকির জায়েয নেই মর্মে প্রোপাগান্ডা চালাইতেছে , এর দ্বারা সাধারন লোক  বিভ্রান্তি হচ্ছে , তাই সমাধান জানতে চাই ।

এম এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া

মক্কা সৌদি আরব

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

প্রথমে বাংলায় একটি কথা বুঝে নিন। আমরা বলে থাকি অনেক সময় “এখানে কেউ আসবে না” তারপর বলি “আব্দুল্লাহ ছাড়া।”

প্রথম বারের কথা দ্বারা সবাইকে নিষধ করছি, তারপর আব্দুল্লাহ ছাড়া শব্দটি বলে শুধু আব্দুল্লাহের আগমণের অনুমতি দিচ্ছি। তাই না?

তেমনি আমাদের কালিমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ। আমরা প্রথমে বলি লা-ইলাহা” মানে হল কোন ইলাহ/মাবুদ নেই”। তারপর বলি ইল্লাল্লাহ” তথা “তবে আল্লাহ আছে”।

আমরা অনেক সময় বড় মজলিসে বলি কেউ এখানে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর বলি তবে আব্দুল্লাহ, তবে আব্দুল্লাহ।

এই যে, তবে আব্দুল্লাহ বলছি এর মানে কিন্তু এখানে কেউ আসবে না তবে আব্দুল্লাহ আসবে। তাই নয় কি? আব্দুল্লাহ নাই, আব্দুল্লাহ নাই একথা কিন্তু কোন আহমকই বুঝে না।

ঠিক তেমনি বার তাসবীহ জিকিরে দুইশত বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করার পর চারশত বার শুধু বলা হয় ইল্লাল্লাহ [তবে আল্লাহ], ইল্লাল্লাহ। এর মানে এর আগে উক্ত ব্যক্তির নিয়তে উহ্য রয়েছে লা-ইলাহা শব্দটি।

যে ব্যক্তিই ইল্লাল্লাহ জিকির করেন, তার মনে কিছুতেই একথা থাকে না যে, আল্লাহ নাই, আল্লাহ নাই নাউজুবিল্লাহ। বরং তার ব্রেইনে থাকে লা-ইলাহা আর মুখে উচ্চারণ করে ইল্লাল্লাহ। যার পরিপূর্ণতা মূলত লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অন্তরে লা ইলাহা শব্দ আর মুখে ইল্লাল্লাহ। সুতরাং এতে কোন প্রকার অর্থের বিকৃতি ঘটে না। কুফরী কোন কথাই আবশ্যক হয় না।

আরবী ভাষায় এর ভুরি ভুরি নজীর রয়েছে।

যেমন এক হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ হারামের সিমানার গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। তথন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বলেন, ইল্লাল্লাল ইজখির?তথা “তথা “তবে ইজখির”। তখন রাসূল সাঃ জবাবে বললেন শুধু “ইল্লাল ইজখির” তথা ইজখির  ছাড়া। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৫৩}

হাদীসটির আরবী অংশ

فَقَالَ الْعَبَّاسُ: – وَكَانَ مِنْ أَهْلِ الْبَلَدِ، قَدْ عَلِمَ الَّذِي لَا بُدَّ لَهُمْ مِنْهُ – إِلا الْإِذْخِرَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَإِنَّهُ لَا بُدَّ لَهُمْ مِنْهُ، فَإِنَّهُ لِلقُبُورِ وَالْبُيُوتِ، قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِلا الْإِذْخِرَ

শুধু ইল্লাল ইজখির বললেন আল্লাহর রাসূল। মুস্তাসনা মিনহু তথা কার থেকে ইজখিরকে পৃথক করলেন তা উল্লেখ করেননি। কারণ এটি জানা বিষয় এবং মনের মাঝে উহ্য আছে সকল বিষয় কাটা হারাম তবে ইজখির ছাড়া। যেহেতু মনের মাঝে সকল কিছু কাটা হারাম শব্দটি উহ্য আছে। তাই মুখের শব্দে ইজখির বলার দ্বারা অর্থের বিকৃতি ঘটেনি।

তেমনি মনের মাঝে লা-ইলাহা লুকায়িত থাকা অবস্থায় মুখে ইল্লাল্লাহ বলার দ্বারাও কোন প্রকার অর্থের বিকৃতি ঘটে না।  কোন কুফরী কথা লাজিম আসে না।

এলজামি জবাব

যারা বলেন ইল্লাল্লাহ জিকিরকে নাজায়েজ বলেন। তারা একটি উদ্ভট দলীল পেশ করে থাকেন। বলেন ইল্লাল্লাহ মানে হল “আল্লাহ নেই” [নাউজুবিল্লাহ]।

আবার কেউ কেউ বলেন ইল্লাল্লাহ মানে হল “আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ”।[নাউজুবিল্লাহ]।

যদি ইল্লাল্লাহ অর্থ উপরের দু’টি অর্থই হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত ভাইদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, তাহলে পূর্ণ কালিমার অর্থটা কি একটু আমাদের জানাবেন কি?

লা-ইলাহা মানে যদি কোন ইলাহ নেই হয়, আর ইল্লাল্লাহ অর্থ যদি হয় “আল্লাহ নেই” বা “আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ”। তাহলে তাদের মত অতি পন্ডিত ব্যক্তিদের মহা জ্ঞান হিসেবে কালিমার অর্থটা কি দাঁড়ায়? দু’টি অর্থ হিসেবে হচ্ছে-

১ [লা ইলাহা] কোন ইলাহ নেই [ইল্লাল্লাহ] আল্লাহ নেই!

২-[লা ইলাহা] কোন ইলাহ নেই [ইল্লাল্লাহ] আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ!

এ কেমন উদ্ভট কালিমায় বিশ্বাসী ইল্লাল্লাহ জিকির অস্বিকারকারী ভাইয়েরা? এমন কুফরী অর্থবোধক অনুবাদ যারা কালিমার করে থাকে, তারা সুনিশ্চিত আহমক ছাড়া আর কী হতে পারে?

সুতরাং বুঝা গেল ইল্লাল্লাহ জিকির এটি কোন দোষণীয় নয়। সেই সাথে এতে কোন প্রকার কুফরী কথাও লাজিম আসে না।

বাকি কথা হল, শায়েখের নির্ধারিত অজিফা আদায় করার সময় ছাড়া অন্য সময় কুরআন ও হাদীসে সরাসরি আসেনি এমন জিকির না করা উচিত। বিশেষ করে ইল্লাল্লাহ জিকির। বরং হাদীসে বর্ণিত জিকির করাই উত্তম। কিন্তু এটিকে শিরক বলা বিদআত বলা আহমকী বৈ কিছু নয়।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

সুদী এনজিও সংস্থাকে বাসা ভাড়া দেয়া কি জায়েজ?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। আমাদের বাসায় NGO ভাড়া থাকে যারা সুদের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে  আমাদের …