প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
অনুগ্রহপূর্বক নিম্নোক্ত প্রশ্নসমূহের বিস্তারিত এবং পূংখানুপূঙ্খ উত্তর জানালে উপকৃত হবো।
১-
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে জীবিত থাকার অবস্থা বিষয়ে বিস্তারিত।
২-
এই জীবিত থাকার সাথে ইহজাগতিক জীবিত থাকার কী তফাত ?
৩-
শহীদগণ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরে জীবিত থাকার মাঝে কী তফাত ?
৪-
আল্লাহর ওলী বা বুজূর্গ বান্দাগণও কী কবরে জীবিত ?
৫-
সর্বসাধারনের জন্য যে “বার্যাখ” এর জীবন নির্ধারিত যা মৃত্তুর পর থেকে শুরু হয়, এই বার্যাখ এর জীবিন এর সাথে উক্ত জীবিত থাকার কী তফাত ?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
১ নং প্রশ্নের জবাব
নবীগণ মৃত্যুর পর কবরে জীবিত আছেন। সেখানে তারা সেখানে নামায আদায় করছেন। তাদের কবরের পাশে গিয়ে সালাম দিলে তারা শুনতে পান। তাদেরকে সেখানে রিজিক দেয়া হয়।
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।তাই আমরা নবীদের ক্ষেত্রে এ আকিদা পোষণ করে থাকি। বাকি এর পূর্ণ অবস্থা আমাদের জানা নেই।
وَلاَ تَقُولُواْ لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاء وَلَكِن لاَّ تَشْعُرُونَ (سورة البقرة-154)
আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদের তোমরা মৃত বল না। বরং তারা জীবিত। তবে তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না। {সূরা বাকারা-১৫৪}
উক্ত আয়াতের স্পষ্ট ভাষ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শহীদগণ কবরে জীবিত। আর ইংগিতের সাথে একথাও বুঝাচ্ছে যে, নবীগণও কবরে জীবিত। কেননা নবীগণের মর্যাদা শহীদদের তুলনায় অনেক উর্দ্ধে। সুতরাং শহীদগণ যদি কবরে জীবিত থাকেন, তাহলে নবীগণ কেন হবেন মৃত? তারা অবশ্যই জীবিত।
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ»
[حكم حسين سليم أسد] : إسناده صحيح
নবীগণ কবরে জীবিত। তারা সেখানে নামায আদায় করেন। {মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩৪২৫}
মুহাদ্দিসীনদের ঐক্যমত্বে এ হাদীসটি সহীহ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” أَتَيْتُ – وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ: مَرَرْتُ – عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ “
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি মেরাজের রাতে কাসীবে আহমার স্থান অতিক্রমকালে দেখতে পাই হযরত মুসা আঃ তার কবরে নামায পড়ছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩৭৫}
عن أبي الدرداء قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( أكثروا الصلاة علي يوم الجمعة . فإنه مشهود تشهده الملائكة . وإن أحدا لن يصلي علي إلا عرضت علي صلاته حتى يفرغ منها ) قال قلت وبعد الموت ؟ قال ( وبعد الموت . إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ (سنن ابن ماجه، كتاب الجنائز، باب ذكر وفاته صلى الله عليه و سلم، رقم الحديث-1637)
হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা জুমআর দিন বেশি বেশি করে দুরুদ পড়। নিশ্চয় ফেরেস্তারা এর উপর স্বাক্ষ্যি থাকে। আর যখন কেউ আমার উপর দুরুদ পড়ে তখনই তা আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দারদা রাঃ বলেন-আমি জিজ্ঞাসা করলাম-মৃত্যুর পরেও কি তা পেশ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন-হ্যাঁ!, কেননা আল্লাহ তায়ালা জমিনের জন্য নবীদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দিয়েছেন। আর নবীরা কবরে জীবিত তারা সেখানে রিজিকপ্রাপ্ত হন। {ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৩৭, ১৬৩৬, সুনানুস সাগীর লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৪৬৯, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪৭৮০, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৫৭২, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৪৮৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৫৯}
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِي سَمِعْتُهُ وَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ نَائِيًا أُبْلِغْتُهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তি আমার কবরের পাশে এসে সালাম দিলে আমি তা শুনতে পাই, আর যে আমার কাছে সালাম পাঠায়, তা আমার কাছে পাঠানো হয়ে থাকে। {মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৯৩৪,কানযুল উম্মাল,হাদীস নং-২১৬৫,শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-১৪৮১}
২ নং এর জবাব
দুনিয়াতে যেমন যত্রযত্র গমণ ও মানুষের সাথে কথাবার্তা স্বাভাবিক হালাতে হওয়া সম্ভব নয়। বাকি কারামত হিসেবে কারো সাথে হয়ে থাকলে ভিন্ন কথা।
৩ নং এর জবাব
একজন নবী ও উম্মতী শহীদের মাঝে যে তফাৎ, তাদের কবরে জীবিত থাকার মাঝে তেমনি তফাৎ। বাকি হাকীকী হালাত আমাদের জানা নেই।
৪ ও ৫ নং প্রশ্নের জবাব
বারযাখী জীবনে মূলত সবাই এক ধরণের জীবিত থাকে। যার মাধ্যমে তারা আজাব ও আরামের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। সেই সাথে তাদের কবরের পাশ দিয়ে কেউ গেলে তাদের জুতার আওয়াজও শুনতে পান।
বাকি হাকীকী অবস্থা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِنَّ العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ [ص:99] لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ، أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ، فَيَقُولاَنِ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَّا المُؤْمِنُ، فَيَقُولُ: أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، فَيُقَالُ لَهُ: انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الجَنَّةِ، فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا – قَالَ قَتَادَةُ: وَذُكِرَ لَنَا: أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ – قَالَ: وَأَمَّا المُنَافِقُ وَالكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ: مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ؟ فَيَقُولُ: لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ، فَيُقَالُ: لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ، وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً، فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ ” (صحيح البخارى، رقم الحديث-1374، 1308)
اتفق أهل الحق على أن الله يعيد إلى الميت في القبر نوع حياة قدر ما يتألم ويتلذذ ويشهد بذلك الكتاب والأخبار والآثار ولكن توقفوا في أنه هل يعاد الروح إليه أم لا وما يتوهم من امتناع الحياة بدون الروح ممنوع وإنما ذلك في الحياة الكاملة التي يكون معها القدرة والأفعال الاختيارية وقد اتفقوا على أن الله تعالى لم يخلق في الميت القدرة والأفعال الاختيارية فلهذا لا يعرف حياته كمن أصابته سكتة (شرح المقاصد-3/366
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।